Sunday, April 21, 2024

লাকী ভাই সঙ্গীত ভূবনে আমাকে হাত ধরে নিয়ে এসেছেন -গীতিকবি গোলাম মোর্শেদ…

– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।

এই পৃথিবীতে বড় হয়ে কে কি হবেন, তা হয়তো নিজে থেকে আগেভাগে কেউ জানেন না! ছোটবেলা থেকে হয়তো জীবনের একটা লক্ষ্য থাকে, এটা হব! ওটা হব। যাকে আমরা ইংরেজিতে এইম ইন লাইফ বলি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে অনেক সময়েই মানুষের লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। কারণ বাবা মায়ের ইচ্ছা শক্তির কারণেও অনেক সময় জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তিত হয়। তবে জনপ্রিয় গীতিকবি গোলাম মোর্শেদের ভাগ্যের পরিবর্তনের পেক্ষাপট একটু ভিন্ন কারণ সে গীতিকবি হয়েছেন তাঁর ইচ্ছায় বা বাবা মায়ের শখে নয়। তাঁর ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষ করে পারিবারিক ব্যবসার সাথে জড়িত হবেন এবং তিনি তাই করেছিলান। অথচ তিনি গীতিকবি হয়ে গেলেন! তাঁর গীতিকবি হওয়ার শুরু কোথার থেকে, জানতে চাওয়া হলে জনপ্রিয় গীতিকবি গোলাম মোর্শেদ বলেন –

আমি যখন ১৯৭৫ সালে ইউনিভার্সিটিতে পড়ি তখন লাকী ভাইয়ের গান শুনি ‘আজ আছি কাল নেই, অভিযোগ রেখোনা’ এবং ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’। আমি গানগুলি শুনে মনে মনে ভাবলাম যেমন করেই হোক, এই লোককে খুঁজে বের করতে হবে! আমি তখন ইউনিভার্সিটির ছাত্র তবে গান এবং কবিতার প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা ছিল। কবিতা আমার এত প্রিয় ছিল যে মুড়ি খাওয়ার মত কবিতা পড়তাম। তবে অনেকবার কবিতা লিখতে গিয়ে হয়নি ভেবে কাগজ ছিড়ে ফেলেছি। একদিন বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারলাম লাকী ভাই আজিমপুর কলোনিতে থাকেন। একদিন একজনের পরিচয়ের মাধ্যমে সেখানে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি একটি ছোট্ট চৌকিতে লাকী ভাই আর হ্যাপি আখন্দ বসা। সেখানে আরও ছিলেন সম্পা রেজা। নতুন গানের প্রাকটিস হচ্ছে। আমি গিয়ে আমার পরিচয় দিলাম। লাকী ভাই বল্লেন, আসেন বসেন। সেই থেকে তাঁর সাথে শুরু। তবে মজার ব্যাপার হল! আমি সেদিন তাঁর ওখানে গিয়েছিলাম দুপুর একটার সময় এবং বিকেল তিনটা পর্যন্ত ওখানে ছিলাম। অনেক বেলা হয়ে গিয়েছিল তো সবারই ক্ষুধা লেগেছিল। আমি দেখলাম একটি ছোট মেয়ে হয়তো কাজের মেয়ে হবে। ও একটি ছোট বাটিতে করে মুড়ি নিয়ে এসেছে। আমি তা দেখে মনে মনে ভাবলাম, এটাতো একজনেরই হবেনা! কিন্তু তাতে ওনাদের কোনো বিকার নেই। ঐ মুড়িটুকু সবাই ভাগ করে খেয়ে নিল এবং আমিও খেলাম। দেখলাম, খাবারটা তাঁদের কাছে এমন কোনো ব্যাপার না। তাঁরা নিজেদের মত গান নিয়ে কাজ করছেন। এদিকে হ্যাপি গীটার বাজাচ্ছিল। গীটারে হ্যাপির আঙ্গুল চালানো দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম! গীটারের তার যে কথা বলে, তা হ্যাপির গীটার বাজানো শুনে জানলাম। সেই পরিচয় থেকেই লাকী ভাইয়ের আমার প্রতি ভালো লাগা তৈরি হল। পরবর্তীতে সে আমাদের বন্ধুর মত হয়ে গেল। আমার অনেক বন্ধু তাঁকে তুমি করে বলত কিন্তু আমি সবসময়ই তাঁকে আপনি করে বলে এসেছি।

ইউনিভার্সিটিতে ‘সৃজন’ নামে একটি কালচারাল গ্রুপ ছিল। সৃজনের সভাপতি ছিলেন তখনকার ভিসি আমানুল্লাহ। সৃজনের সহসভাপতি আসাদ চৌধুরী আর আমি ছিলাম। কবি মোহন রায়হান ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। আমরা প্রায়ই অনুষ্ঠান করতাম আর ঐ অনুষ্ঠানে গান করতেন লাকী আখন্দ আর হ্যাপি আখন্দ। তাছাড়া ঢাকার আলিয়াস ফ্রঁসেসে আমি ফ্রাঞ্চ শিখতাম তখন ওখানের কালচারাল প্রোগ্রামের দায়িত্ব আমার ওপর ছিল। ওখানকার অনেক অনুষ্ঠানে লাকী ভাই আর হ্যাপিকে নিয়েছিলাম গান করতে, তাঁরা গান করেছেন। একটা সময় ওখানে অনুষ্ঠান হবে, আমরা সবাই মিলে পনের দিন ধরে রিহার্সেল করেছি। লাকী ভাই আর হ্যাপি মুল শিল্পী। সমস্যা হল! হ্যাপি আমাকে বলল, মোর্শেদ ভাই আমার ভাল্লাগছেনা! আমি যশোর চলে যাব। আমি বললাম, আজকেতো অনুষ্ঠান আছে! ও বলল, না আমার ভাল্লাগছেনা। এখানেই দু’ভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য। লাকী ভাই ছিলেন ধীর স্থির আর হ্যাপি ছিলেন অস্থির প্রকৃতির। এভাবেই চলছিল আমাদের সম্পর্ক।

মাঝখানে জীবিকার তাগিদে এবং আমার কাজের ব্যস্ততার কারণে তাঁর সাথে ৮/১০ বছর দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। বাস্তবতার কারণে লাকী ভাই হারিয়ে গেলেন! তারপর ১৯৯৫ সালের দিকে আমি পুরান ঢাকার অগ্রণী ব্যাংক থেকে রিক্সা করে আসছি আর অপর দিক থেকে লাকী ভাই রিক্সা করে আসছেন। আমার ডাক নাম ‘মাশু’। সে আমাকে মাশু বলেই ডাকতেন। সে আমাকে দেখে এই মাশু, মাশু দাঁড়াও। বল্লেন, তুমি এতদিন কোথায় ছিলে ? আমি বল্লাম লাকী ভাই, জীবন যুদ্ধে ছিলাম। বল্লেন, এটা তো ঠিক হয় নাই! আমি তোমার ওখানে আসব। তুমি কি জানো হ্যাপি মারা গেছে ? আমি বল্লাম, জানি। সে বল্লেন, আমি তোমার কাছে আসব, ঠিকানা দেও। দু’জন দু’জনের ঠিকানা দিলাম। দু’এক বছরের মধ্যে সে আমার কাছে আসেন নাই। খেয়ালি মানুষ। অবশ্য মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হত। ৯৮’সালে হঠাৎ করে বল্লেন, আমি কথা দিচ্ছি এবার আমি নিজের প্রয়োজনেই তোমার কাছে আসব।
আমি যাকে খুঁজে বের করেছিলাম একসময়, এখন সে নিজের থেকে আসতে চাইছেন! এটা তো আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি বল্লাম, আমি ধানমন্ডি একুশ নম্বরে(পুরাতন) অফিস নিয়েছি আপনি ওখানে রাত আটটার পর আসবেন। প্রথম দিন উনি আসলেন সাতটার সময়। আমি বল্লাম, লাকীভাই বসেন। সে বসল। আমি বল্লাম, কি করছেন এখন ? সে বল্ল, কিছু না। আমাকে বল্ল, এখন থেকে রেগুলার তোমার এখানে আসব। আমি বল্লাম, এটাতো আমার ভাগ্য! আমি আপনার গান শুনি সারাক্ষণ আর এখন থেকে আপনি আমার সামনে বসে থাকবেন। তারপর একদিন সে আসেন নি। তারপরের দিন আসলেন। আমি ভাবলাম শিল্পী মানুষ, খেয়ালি মানুষ হয়তো ভুলে গেছেন সব। উনি আসার পর আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসল! যেহেতু লোকটিকে আমি খুব ভালোবাসি, তাকে জানি, বুঝি। আমি এতটুকু বুঝি যে, তখন দেশের বাংলা গানে আধুনিক গান যদি একটি শরীর হয়, তবে এই শরীরে আধুনিকতা কিন্তু নিয়ে এসেছেন লাকী আখন্দ। এটা সবাই জানে। সেই মানুষটাকে আমি বল্লাম, আপনি আসেন আমি আপনার সাথে আড্ডা মারব তবে আড্ডার পরে আমার একটা শর্ত মানতে হবে! তা হল, আমি আপনাকে একটা ছোট রুম দিব, সেই সাথে কাগজ কলম আর ফাইল দিব। আপনি একটা কাজ করবেন আপনার জীবনের যতগুলো গান আপনি তৈরি করেছেন সবগুলো লিস্ট করবেন। তাছাড়া রেডিও টিভি এবং বিভিন্ন যায়গায় যে গানগুলো জমা দিয়েছেন সেগুলোও লিস্ট করবেন। আপনি যদি আমার কথা শুনেন, প্রত্যেকদিন আপনি আধাঘন্টা এই কাজটি করবেন! তাহলে তারপর আমরা আড্ডা দিব। উনি আর কিছু বল্লেননা, শুধু বল্লেন, হ্যাঁ আমি করব। তারপর উনি ঠিকই আমার কথা রেখেছেন। উনি সময় মত চলে এসেছেন। প্রথমে আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম তবে ভয় পেলেও ভালও লাগল ভেবে, এই মানুষটাকে আমি আমার শাসনে নিয়ে এসেছি। আমি সব রেডি করে রেখেছিলাম। তাকে রুমে দিয়ে আমি কাজ শেষ করে আধা ঘন্টা পর গিয়ে দেখি সে দেড় পৃষ্ঠা লিস্ট করে ফেলেছে নিজের মন থেকে কিছু না দেখে। কে গায়ক গায়িকা, কে গীতিকার, বেতার টিভি সবকিছু। এভাবে আমাদের আড্ডা আর তাঁর কাজ একসাথে চলছিল।

একদিন তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে একটা কথা বলব। আমি বল্লাম, বলেন বলেন আমি আপনার সব কথা শুনব। সে বল্ল, আমি তোমাকে যে কথা বলব তা আমার মাথায় অনেকদিন থেকে আছে। আমি বল্লাম, আমি তো বলছি! আপনি যা বলবেন, আমি তাই করব। তিনি বল্লেন, এখন থেকে আমি গানে সুর করব। অনেকদিন সুর করি না। তুমি লিখবে আর আমি সুর করব। আমার তখন মাথা চক্কর খেল! আমি ব্যবসা করি, সারাদিন ব্যস্ত থাকি।
আমি বল্লাম, লাকী ভাই আমার অফিসের সামনের রাস্তায় মাটি কাটা হচ্ছে আমার অফিসে কোদাল নাই, আপনি বরং আমাকে একটি কোদাল এনে দেন, আমি মাটি কাটতে পারব কিন্তু গান লিখতে পারব না। সে ঠাণ্ডা মাথায় বল্লেন, আমি জানি তুমি পারবে এবং এটা তোমাকে করতেই হবে। আমি ভাবলাম গান লেখা তো সহজ কাজ নয়! একটি গানে মুখরা, স্থায়ী, অন্তরা কত কিছু লাগে, কিছুই বুঝিনা। আমি কি পারব ? তারপর মনে মনে ভাবলাম, সে আমাকে এত মায়া করে আবার আমার কথা রেখেছেন, দেখি পারি কি না! কারণ আমি প্রচুর কবিতা পড়তাম এবং কিছু কবিতাও লিখেছি। তারপর গান লিখলাম, তাঁকে দিলাম। গানের কথা ‘ভালোবেসে ভুল ছিল যত, তোমাকে ততোখানি ভুলে যাওয়া হলোনা আমার’। উনি আধা ঘন্টার মধ্যে গানটির সুর করলেন। আমি তার জন্য আগের থেকেই হারমোনিয়াম এনে অফিসে রেখেছিলাম তাঁর প্রাকটিসে করার জন্য। সেই হারমোনিয়াম দিয়ে সে সুর তুলে ফেল্লেন, আমার লেখা গানের। সে আমার লেখা গানের সুর করে সে যে কি অপূর্ব রুপ দিলেন, আমার মাথাই কাজ করছিল না। পরে সামিনা চৌধুরী গানটি গেয়েছিলেন। এই গানটি করার পর তিনি বল্লেন, আর থামা যাবে না। তুমি আর আমি একটা এ্যালবাম বের করব। আমার অফিসে আমাদের আড্ডা আর গান চলত। অনেকেই আসতেন এই আড্ডায়। তবে বারী সিদ্দিকী, লাকী ভাই আর আমি এই তিনজন সব সময় একসাথে থাকতাম। বারী সিদ্দিকী গান গাইতো, লাকী ভাই হারমোনিয়াম বাজাতো আর আমি ছিলাম শ্রোতা। এটা ছিল আমাদের পাঁচ বছরের সংসার।

লাকী ভাইয়ের ভালোবাসা এবং তাঁর স্বজনপ্রীতির কারণেই আমার এই গানের ভূবনে আসা। এদিকে আমার চার পাঁচটি গান হয়ে গেছে লাকী ভাইয়ের করা। এরই মধ্যে জাতীয় জাদুঘরে একটি দারুণ অনুষ্ঠান হলো। সেখানে লাকী ভাই গান গাইবে হল ভর্তি মানুষ ছিল। ফেরদৌস ভাই, আবরার টিপু ভাইসহ অনেকেই আসছিলেন। এমন সময় এজাজ খান স্বপন ভাই, আমাকে বললেন, মোর্শেদ ভাই আপনার সাথে কথা আছে। আমি বললাম বলেন ? সে বল্লেন, লাকী ভাই অনেকদিন পর আপনার কারণে আবার ফিরে এসেছেন গানের জগতে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে বারটি গান নিয়ে একটি এ্যালবাম বের করব। তাই বারটি গানই আপনি করবেন আর সুর করবেন লাকী ভাই।
তারপর যাই হোক, আমি স্বপন ভাইয়ের কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তারপর আমরা দু’জনে মিলে শিল্পী ঠিক করলাম। গানের এ্যালবাম বের করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব করলাম। তবে লাকী ভাই তখন আমাদের সাথে ছিলেন না। সবকিছু ঠিকঠাক মত হয়ে এ্যালবামটি শেষ পর্যন্ত সাউন্ডটেক ব্যানার থেকে বের হয় ‘বিতৃষ্ণা জীবন আমার’ নামে। এই ‘বিতৃষ্ণা জীবন আমার’ এ্যালবামটি ছিল ব্যান্ড ও আধুনিক গানের মিশ্র এ্যালবাম। এই এ্যালবামের
সবগুলো গান আমার লেখা এবং লাকী ভাইয়ের সুর করা। এই এ্যালবামে জনপ্রিয় গায়ক জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, হাসান, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী ও সামিনা চৌধুরী কণ্ঠ দেন। এরপর একই বছরে তিনি সামিনা চৌধুরীকে নিয়ে ‘আনন্দ চোখ’ নামে দ্বৈত গানের এ্যালবাম প্রকাশ করেন। এর মধ্যে ১২টি গান ছিল। তারপর আরেকটি মিশ্র এ্যালবাম ‘তোমার অরণ্যে’ তিনি সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেন। সেখানে আমার লেখা লাকী আখন্দের কন্ঠে গাওয়া তিনটি গানসহ বাপ্পা মজুমদার, ফাহমিদা নবী ও নিপুর কন্ঠে ১০টি গান ছিল। উনি কিন্তু গানের ব্যাপারে মহা সাবধানী ছিলেন। আমি বলবো, মহা কিপ্টে লোক ছিলেন। মানে হুট করে কাউকে গান দেয়া বা কারো গানে সুর করা, এসব ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। যদি আমার আন্দাজ ঠিক থাকে তবে উনি অন্য কারো সুরে গান গায়নি তবে নিপুর সুর করা একটি গান তিনি গেয়েছেন। গানটি হল, ‘আমি তো আছি, তোমার পথ চেয়ে’। উনাকে অনেক মুডি মনে হলেও, উনি ছিলেন খুব আন্তরিক। আজকে আমি যতটুকু পেয়েছি, তাঁর জন্যেই পেয়েছি। উনিই আমাকে এই সঙ্গীত ভুবনে হাত ধরে নিয়ে এসেছেন। লাকী ভাই যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন এই কামনা করি। লাকী ভাই-ই, সঙ্গীত জগতে আমার পদচারণা শুরু করে দিয়ে গিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত তাঁর আশীর্বাদেই রয়ে গেছি সঙ্গীত ভূবনে।

বর্তমানে গান লেখা ছাড়া তিনি আর কিছু করছেন কিনা! জানতে চাইলে, তিনি বলেন – হ্যাঁ, আমিতো গানের জগতে আসার আগের থেকেই লেখাপড়া শেষ করে পারিবারিক পোশাকশিল্পের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলাম। এখনো তার সাথেই যুক্ত আছি। আর আমার কাজে ফাঁকে ফাঁকে গান লিখি।

৮০/৯০ দশকের গানের সাথে এখনকার গানকে মূল্যায়ন করতে বলা হলে তিনি বলেন – এই ব্যাপারটা আমি একবারে ভিন্নভাবে বলতে চাই। আপনার কাছে কি মনে হয়, ৮০/৯০ দশকের ইয়াং মেয়েরা যে ড্রেস পড়ত, এখন সেরকম পড়ে ? পড়ে না। তেমনই আমরা যারা ছেলেরা সেই সময় ৪০/৪২ ইঞ্চি বেলবটম প্যান্ট পড়তাম, এখন কি ছেলেরা সেইরকম প্যান্ট পড়ে ?পড়ে না। তখনকার সৌন্দর্য্য ছিল একরকম আর এখনকার সৌন্দর্য্য আরেক রকম।

তার মানে যুগ হচ্ছে পরিবর্তনশীল তাই বলতে চাইছেন ?
হ্যাঁ, যুগ পরিবর্তনশীল। একেক সময় একেকজন আসবে। তখন এসেছিল- লাকী ভাই, আলাউদ্দিন আলী, কাওসার আহমেদ, রফিকুজ্জামান সাহেবসহ অনেকেই এসেছেন। তেমনই এখনকার যুগে অনেকে প্রযুক্তির কারণে ভয়েস পরিবর্তন করে গান করছে তবে এখনো অনেক ভাল ভাল শিল্পী, গীতিকবি, সুরকারও আসছে। এখন সারা পৃথিবীতে ইয়াংরাই জয় করে আছে।

ভাইয়া, আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, এক একটা যুগ এক এক ভাবে পরিবর্তন নিয়ে আসে, সেটাকে সবার গ্রহণযোগ্যতা করে নিতে হয়।
অবশ্যই, একদম তাই। এমন অনেকেই আছেন যারা রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতের বাইরে কোনো গান করেন না। তাঁদের এখনকার গান ভাল লাগে না। আমি এভাবেই বলতে চাইছি যে, এখনকার গান যারা শুনেন তাঁরা বিচার করতে পারবেন যে, বিশ বছর আগে যারা গেয়েছিলেন আর এখন যারা গাইছেন তারা কি জনপ্রিয় নয়! তাদের কি মেধা নেই ? অবশ্যই আছে। তবে জানার জন্য ৮০/৯০ দশকের গানগুলোও তাঁদের শুনতে হবে। তাহলে তাঁদের মধ্য থেকেও একসময় কিংবদন্তি বেরিয়ে আসবে।

এখন শিল্পীর গানের সাথে যে ভিডিওর চল এসেছে, তা তিনি কিভাবে দেখছেন তা জানতে চাইলে, তিনি বলেন-
এখন ভিডিওর ট্রেন্ড চলছে, কেউতো এই ট্রেন্ডটাকে অস্বীকার করতে পারবে না। তাই ভিডিও হলেই যে শিল্পীর গুণগতমান প্রকাশ পাবে না তা নয়। ভিডিও দেখে যদিও মনে হতে পারে কোনো নাটকের দৃশ্য দেখছি কিন্তু শিল্পীর গান যদি শ্রুতিমধুর হয় তাহলে তাঁর গান সকলের কানে পৌঁছবেই। হয়তো ২০/৩০টি এরকম গান থেকে কিছু ভাল গান জমা পড়ে থাকবে পরবর্তী সময়ের জন্য। তখন হয়তো শিল্পী, সুরকার, গীতিকবি তার কষ্টের মূল্য ঠিকই পাবে।

বর্তমানে আপনি নতুন কি কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন-
আমি এখন কাজ করছি, ‘রেশমা নাহার রত্না’ নামের অবিশ্বাস্য স্বপ্ন লালনকারী পর্বত শিখরে ওঠা মানুষ ছিল সে। ক’দিন আগে (৭আগস্ট,২০২০) ভোরে সংসদ ভবনের পাশের রাস্তায় জগিং শেষে ঘরে ফেরার পথে একটি কাল রঙের মাইক্রোবাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে সে অতীত হয়ে গেছে। আমি সহ তার আরও হাজার স্বজনের চোখের পানি এখনো শুকায়নি। তাকে নিয়ে একটি গান লিখেছি। সুর করেছে একেবারেই অল্প বয়সী তরুন মেধাবী একজন। তার নাম রুপক। টিংকু এবং এবিসি রেডিও এর উদ্যোগে অনেকেই মিলে, রত্নাকে ভালবেসে গানটা গাইবেঃ ফাহমিদা নবী, বাপ্পা মজুমদার, এলিটা, লিংকন ডি কস্টা, রুপক এবং এবিসি-র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গুণী শিল্পী (নামটি এখন মনে পড়ছেনা এই মুহূর্তে)। ভয়েস রেকর্ডিং এবং ভিজুয়্যাল হবে এ মাসের ১৪ এবং ১৫ তারিখে। গানটির শিরোনামঃ রাস্তায় বেদনার আস্তর। গানের শুরুটা এ রকমঃ ‘জগিং এর দলে আর প্রিয় সাইকেলে পাড়ি দিত সে, কুয়াশার ভোর তার পায়ের পাতায় পাতায় শিশিরের আস্তর’…

তাছাড়া ৭ অক্টোবর ২০১৯, বুয়েটে আবরার ফাহাদ নামে একটি ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল, তাকে নিয়ে গান লিখেছি একটি। সুর করেছে রুপক। এরপর করোনা নিয়ে একটি গান লিখেছি। গানটির সুর করেছেন, সজীব দাস। খুবই ট্যালেন্টটেড একজন মানুষ। গানটি গেয়েছেন সজল। তাছাড়া ফাহমিদা আপার সাথে নতুন পুরাতন গান নিয়ে একটি এ্যালবামের কাজ করব। অবশ্য আমি এখন বিষয়ভিত্তিক গানই বেশী লিখছি।

আপনার পরিবারের কেউ কি গানের সাথে যুক্ত আছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন-
হ্যাঁ,আমার ভাইয়ের ছেলে আছে। আমার ভাইয়ের ছেলের নাম রুশলান শাবিব মোর্শেদ। মূলতঃ সে ইংরেজি গানই গায়। আমার কারণেই আমার লেখা একটা বাংলা গানে সুর দিয়েছে এবং নিজে গেয়েছে। এটাও রোড এক্সিডেন্টের উপর তৈরি করা একটা গল্প। গানটির নাম ‘নীল জামা ও আঠারো বছরের মেয়েটি’। এক কথায় চমৎকার একটি গান হয়েছে।

আপনাদের একটি গীতিকবি সংগঠন হয়েছে জেনেছি, সেই ব্যাপারে যদি কিছু বলতেন-
আমি বলবো এটা একটি মহৎ উদ্যোগ। গীতিকবি, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, শিল্পীগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সম্মিলিতভাবে। আমরা সকলে এই উদ্যোগকে সামনে রেখে হাতে হাত ধরে চলব। আমাদের সবার সম্মানের জায়গাটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যেই এই সংগঠন। আমি একজন প্রচারবিমুখ মানুষ। গীতিকবি জুলফিকার রাসেল এর অনুরোধে এই সংগঠনে যোগ দেয়া। এই সংগঠনের গঠনতন্ত্র তৈরি হয়ে গেছে। এরপর ইলেকশন হবে। কমিটি গঠন হবে। আমি জুলফিকার রাসেল ভাইকে বলেছি, এখন হয়তো সক্রিয় থাকতে পারব তারপর হয়তো আমার ব্যবসার কারণে সেভাবে সময় দিতে পারবো না।

করোনার এই সময়ে কিভাবে নিজের এবং পরিবারের সাবধানতা অবলম্বন করছেন জানতে চাইলে, তিনি বলেন-
প্রথম প্রথম বাসা থেকে বের হতাম না কিন্তু এখন তো বেঁচে থাকার জন্য বের হতে হয়। খাবার দাবার, ঔষধ এগুলো ছাড়াতো চলে না! তাই বের হই, অফিসেও যেতে হয়। তবে যা কিছু করি সাবধানতা রক্ষা করেই করি।

সাবধানে থাকুন। সুস্থ থাকুন এবং নতুন নতুন অনেক গান আমাদের উপহার দিন, সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য রইল, অনেক অনেক শুভকামনা।
আমার পক্ষ থেকেও সঙ্গীতাঙ্গন ও আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles