Saturday, April 20, 2024

আজ নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এর মৃত্যুবার্ষিকী…

– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।

নজরুলসঙ্গীতের এক উজ্জল প্রতিমা শিল্পী ফিরোজা বেগম। তিনি প্রথিতযশা নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে নজরুল সঙ্গীতের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাঁকে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকিরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮শে জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে। তাঁর বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মাতার নাম বেগম কওকাবুন্নেসা।

শৈশবেই তাঁর সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ১৯৫৪ সাল থেকে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। কমল দাশগুপ্ত ২০ জুলাই, ১৯৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এ দম্পতির তিন সন্তান তাহসিন, হামীন ও শাফিন। হামিন ও শাফিন – উভয়েই রকব্যান্ড দল মাইলসের সদস্য ও শ্রোতানন্দীত ব্যন্ড তারকা। ফিরোজা বেগম ১৯৪০-এর দশকে সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এ রেকর্ডের গান ছিল- ‘ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ’ আর ‘প্রীত শিখানে আয়া’।

দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুলসঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাঁর ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গ-সংস্কৃতি-সম্মেলন-মঞ্চে কমল দাশগুপ্তের ছাত্রী ও সহধর্মিণী হিসেবে তিনি ছিলেন মুখ্যশিল্পী। উভয়ের দ্বৈতসঙ্গীত সকল শ্রোতা-দর্শককে ব্যাপকভাবে বিমোহিত করেছিল। আর জনপ্রিয়তার ফসল হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক, কয়েকবার সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার, নজরুল একাডেমী পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট।

এ ছাড়াও জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। ১২ এপ্রিল ২০১২ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে “বঙ্গ সম্মান” পুরস্কার গ্রহণ করেন। আর এই সব অর্জনের মধ্যদিয়ে আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসে তার হায়াতের বেলা। দেহের ভেতর শুরু হয় নানা জটিলতা।

কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। জীবনাবসানের মধ্যেদিয়ে চির অমর হয়ে আছেন। আমরা তার রুহের মাঘফেরাত কামনা করি।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles