Friday, March 29, 2024

গানের পিছনের গল্প – অনিকেত প্রান্তর – আর্টসেল…

প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্‌নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক

– তথ্য সংগ্রহে মীর শাহ্‌নেওয়াজ…

শিল্পীঃ লিংকন
সুরকারঃ এরশাদ ও সেজান
গীতিকারঃ রুম্মান আহমেদ
ব্যান্ডঃ আর্টসেল
অ্যালবামঃ অনিকেত প্রান্তর

বংশীবাদক বখতিয়ার হোসেন -এর বাঁশীতে ‘অনিকেত প্রান্তর’-এর সুরটা আমার খুবই ভালো লাগায় আর্টসেল ব্যান্ড-এর মূল গানটি আমি শুনি। অবাক করা কথায় অবাক করা সুর বসানো।

খুব কম গানই হয় ১০ মিনিটের উপরে। আর যে গানগুলোও হয় দেখা যায় যে ৭-৮ মিনিট শোনার পর এক ধরনের বিরক্তিভাব চলে আসে। আবার খুব বড় গান বলে শোনাও হয় না গানগুলো। কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলাদেশি অন্যতম রক ব্যান্ডদল ‘আর্টসেল’-এর এই গানটি। ১৬:১৭ মিনিটের এই গান যত বার শুনি কখনই মনে হয় না “এত্তত্তত্তত্ত বড় গান”। এর কারনও অবশ্য আছে, সুর, কন্ঠ এবং যন্ত্র সঙ্গিতায়োজনের যে প্যাকেজ গানটিতে আছে, তা খুব সহজেই রক সং লাভারদের মুগ্ধ করবেই। আর গানের কথা নিয়ে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না… কথাগুলো এত সুন্দর বলেই হয়ত গানটি এত্ত সুন্দর হয়েছে।

এক কথায় বলতে গেলে দীর্ঘ এই গানটিতে ভালো লাগার উপাদানগুলো এত সুন্দর ভাবে সুবিন্যস্ত যে শ্রোতাকে মুগ্ধ হতেই হবে। আর্টসেল থাকবে না হয়ত, কিন্তু আমার বিশ্বাস এই গান একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বাংলা রক গানের ভুবনে।

প্রায় সব শ্রোতার মনেই আর্টসেল-এর “অনিকেত প্রান্তর” গানটির দৈর্ঘ্য ও এর প্রকৃত অর্থ নিয়ে একটি প্রশ্ন আছে, সেই প্রশ্নের জট খুলতে আর্টসেলের ভোকালিস্ট লিংকন এর ইন্টারভিউ হুবুহ তুলে দিলামঃ

আমাদের এক বন্ধু রুম্মান আহমেদ। ওর চমৎকার লেখার ক্ষমতা আছে, কিন্তু ওর চিন্তা ধারা এবং গানে শব্দচয়ন একটু ভিন্ন ধাঁচের, যাকে কঠিন বলা যেতে পারে। সে একদিন প্রায় ৪ পাতার এক লিরিক নিয়ে আমাদের চারজন

আমি, এরশাদ, সাজু আর সিজানের কাছে নিয়ে আসে। লিরিকের লেংথ দেখে তো আমাদের চোখ কপালে। এত্ত বড় লিরিকে সুরই বা কীভাবে বসাবো আর গাইবোই বা কীভাবে।

কিন্তু রুম্মান আমাদের গানটির ভেতরের কথাগুলো স্পষ্ট করে বোঝালো। গানটির কথাগুলো প্রত্যেক মানুষেরই মনের কথা হতে পারে। গানটির থিম আমাদের খুব ভাল লাগল। লিরিকটাতে প্রাণ দিয়ে গানে পরিণত করার এক ইচ্ছা আমাদের চারজনের মনে গেঁথে বসলো। ইচ্ছে থাকলেই তো হবে না, ৪ পাতার বিশাল লিরিকটাকে গান বানানো তো আর যা-তা কথা নয়। তখন আশারবাণী হিসেবে সিজান ভুবনবিখ্যাত ব্যান্ড ‘ড্রীম থিয়েটার-এর ‘চেঞ্জ অব সিজনস’ গানটির উদাহরণ টানলো, ঘড়ির কাটাতে যার সময় ছিল ২৩:৪১ মিনিট।

গানটা শুনে বিরক্তি তো আসেই না, বরং একটি লাইনের পর অথবা একটি কম্পোজিশনের পর আরেকটি শুনলে মনে হয় যে, ঠিকই তো, এরপর তো এইটাই হওয়ার কথা ছিল অথবা এই তালটার পর ওই তালেরই আসার কথা ছিল। মনে হলো, ২৩:৪১ মিনিটের সেই গানটি এমন বিখ্যাত হতে পারলে, রুম্মানের এই লিরিককেও গান বানানো অসম্ভব কিছু নয়।

তো এই গানটা আমাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করলো। আমরা দিন-রাত এই ‘চেঞ্জ অব সিজনস’ গানটা বাজানোর চেষ্টা করতাম আর বাজাতাম। এরপর প্রায় এক বছর আমরা এই গানটা নিয়ে কাজ করি। একটা সময় মোটামুটি গানটা হাতে এসে পড়লো। তখন আমরা রুম্মানের সেই ‘৪ পাতার লিরিককে’ গানে পরিণত করার উদ্যোগ নিলাম। মূলত এরশাদ ও সেজান মিলে লিরিকটিতে একটা সুর বসালো। আমি আর সাজুও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছিলাম। এবার বিরাট এ গানটা গাইবার পালা। গানটা গাইলাম, আর্টসেলের দ্বিতীয় এ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক হিসেবেই গানটা রিলিজ পেলো – অনিকেত প্রান্তর।

‘অনিকেত প্রান্তর’ শব্দটির অর্থ ‘No mans’ land’। রুম্মানের লেখা ‘অনিকেত প্রান্তর’ লিরিকটি মানুষের ‘অনিকেত প্রান্তর’ বা ‘No mans’ land -র চিন্তা-ভাবনা নিয়ে লেখা। দু’দেশের মাঝখানে এমন একটি মালিকানাবিহীন জায়গা- ‘No mans’ land’ থাকে, যেখানে চলে না কারও নিয়ম-শৃংখলা, রীতি-নীতি, বিধি-নিষেধ, তেমনি প্রত্যেক মানুষের মাঝেও একটি করে ‘No mans’ land’ থাকে। সেই ‘No mans’ land’ দাঁড়িয়ে, সেই স্বাধীনতার তাড়না থেকে এই গানটি লেখা। মানুষ স্বাধীন হলেও স্বাধীনভাবে তার সব স্বপ্নকেই জীবন দিতে পারে না। কিন্তু কেবল অনিকেত প্রান্তরে দাঁড়িয়েই সে তার স্বপ্নগুলোকেই স্বপ্নে হলেও জীবন দিতে পারে। বাস্তবে হয়তো সেগুলো ‘স্বপ্নের দলা পাকানো বাসি কবিতা, নষ্ট গান’ হয়েই ঝড়ে যায়।

অলংকরন – গোলাম সাকলাইন…

Related Articles

1 Comment

  1. অনিকেত প্রান্তর সারা জীবনে দর্শকের পছন্দের তালিকায় থাকবে।
    অসাধারণ লিখেছেন।

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles