asd
Sunday, October 6, 2024

আজ বীরযোদ্ধা ও পপ গুরুর বিদায়ী দিন…

– মোঃ মোশারফ হোসেন।

আমি বাংলাদেশের আজম খান
বাংলাতে গাই পপ গান
জারি সারি ভাটিয়ালী
এক মায়ের সন্তান ।।
আমি আজম খান

সালেকা মালেকা ওরা হইছে এখন বুড়ি
গুলশানেতে করছে বাড়ি টাকা কাড়ি কাড়ি ।।
ফুলবানু’র ও বাড়ছে এখন কদর ও সম্মান
জাফরানি জর্দা দিয়া খায় সাচি পান
আমি আজম এখনো গাই বাংলাতে পপ গান
আমি আজম খান

আলাল দুলাল আগের মত নাই তো আর পাজি
ওদের বাবা মাল কামাইতে হইছে এখন রাজি ।।
আলাল দুলাল ব্যবসা করে সিংগাপুর গিয়া
হাজি চান গাড়ি হাকান সাইকেল ছাড়িয়া
আমি আজম এখনো গাই বাংলাতে পপ গান
আমি আজম খান।

মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান একজন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা, সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা, ক্রিকেটার ও বিজ্ঞাপনের মডেল ছিলেন। তিনি আজম খান নামে সর্বাধিক পরিচিত। তাঁকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন
অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে তাঁর অনুজ সঙ্গীতশিল্পী মাকসুদুল হক তাঁর ‘পপ সঙ্গীতশিল্পী’ অভিধাকে অপসংজ্ঞায়ন মনে করেন। তিনি তাঁকে বাংলাদেশের রক সঙ্গীতের অগ্রপথিক হিসাবে বিবেচনা করেন। তাঁর গানের বিশেষত্ব ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পপ গানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি। আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ওরে সালেকা ওরে মালেকা, আলাল ও দুলাল,
অনামিকা, অভিমানী, আসি আসি বলে ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নেন। প্রথম কনসার্ট প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ১৯৭২ সালে। সঙ্গীতের অবদানের জন্য
বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।।

আজ সেই মহা পপ গুরু আজম খানের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই পপ সম্রাট। বাংলাদেশে পপ গানের সূচনা হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তাইতো দেশের সবাই একবাক্যে
তাকে এ দেশের পপসঙ্গীতের ‘গুরু’ হিসেবে বরণ করে নিয়েছেন।
আজম খান পপ শিল্পী হিসেবেই নন, স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম একজন বীরযোদ্ধাও ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে লাকী আখন্দ ও হ্যাপি আখন্দ দুই ভাইকে নিয়ে ‘উচ্চারণ’ নামের একটি গানের দল গড়েন। এর মধ্য দিয়েই পপ সংগীতে আজম খানের যাত্রা শুরু। সে বছরই বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে নারে ও চার কালেমা সাক্ষী দেবে- এই গান দুটি তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। এরপর ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা, রেল লাইনের ঐ বস্তিতে, আসি আসি বলে তুমি আর এলে না, আলাল ও দুলাল, হারিয়ে গেছে খুঁজে পাব না- এ গানগুলো গেয়ে শ্রোতাদের তিনি মাতিয়ে তোলেন।

১৯৫০ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টারে জন্ম হয় আজম খানের। ১৯৮১ সালে ১৪ জানুয়ারি ৩১ বছর বয়সী আজম খানের সঙ্গে বিয়ে হয় সাহেদা বেগমের। আজম খান দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। তিনি ক্যানসারের সঙ্গে এক বছরেরও বেশি সময় লড়েছিলেন। সে যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিয়ে যাওয়ার আগে তিনি দুটি জিনিস রেখে গেছেন-স্বাধীন দেশ ও মানচিত্র আর অন্যটি বাংলা রক গান।

রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় কবি জসীমউদ্‌দীন রোডে, মতিঝিলের ব্যাংক কলোনি মাঠে কিংবা স্টেডিয়ামের সুইমিংপুলে যারা আজম খানকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন, বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও ব্যক্তিজীবনে শিল্পী আজম
খান কতটা সহজ-সরল ছিলেন। খোলা মনের মানুষ ছিলেন তিনি। সে প্রমাণ সহশিল্পী বা সঙ্গীত জগতের মানুষেরাও প্রমাণ পেয়েছেন। সঙ্গীত জগতের সবার পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। বিশেষভাবে সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ভালো থাকুক গুরু ওপারে।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles