Saturday, March 23, 2024

কিংবদন্তি নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের উপর ডিজিটাল আর্কাইভ এর সূচনা…

– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।

বাংলাদেশের কিংবদন্তি নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের উপর এক অসাধারণ ডিজিটাল আর্কাইভের সূচনা হল তাঁর জন্মদিনে ২৮ জুলাই। এই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল ফিরোজা বেগম আর্কাইভ। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ভার্চুয়ালই যুক্ত ছিলেন। এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সভাপতিত্বে ও সাদিয়া আফরিন মল্লিকের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আসাদুজ্জামান নূর এমপি এবং দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মোস্তফা জামান আব্বাসী, অনুপ ঘোষাল, মোস্তফা মনোয়ার, শাফিন আহমেদ, ফেরদৌসি রহমান, কল্যাণ কাজী, মোঃ আসাফুদ্দৌলাহ বক্তব্য রাখেন। এই আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন শিল্পীর ভাইয়ের মেয়ে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী সুস্মিতা আনিস এবং শিল্পীর পরিবার।

এখন জেনে নেওয়া যাক কী কী রয়েছে এই ডিজিটাল আর্কাইভে ? শুরুতে জীবনী, পুরস্কারের তালিকা, থাকছে গানের ভান্ডার। নজরুলের গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক বাংলা গান, কাব্যগীতি, গীত ও গজল। রয়েছে গানের যাবতীয় তথ্য, রিলিজের সন, সুরকার-গীতিকারের নামের পাশাপাশি প্রকাশক কোম্পানির নামও। রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দুর্লভ সংগ্রহ। টেলিভিশন থেকে রেডিও, মঞ্চের অনুষ্ঠানের সাক্ষাৎকার পেয়ে যাবেন এক ক্লিকে। থাকছে বিভিন্ন বাংলা, ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার, অনুষ্ঠান সমালোচনা, প্রতিবেদন। ফটো গ্যালারিতে রয়েছে তাঁর একার ছবি থেকে পারিবারিক ছবি। থাকছে বিভিন্ন প্রজন্মের নানা শিল্পীর কথা তাঁকে ঘিরে। ভবিষ্যতে কোনও গুণগ্রাহীর কাছ থেকে পাওয়া কোনও তথ্য, ভিডিও বা গান এই আর্কাইভে সংযোজন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে হাতে লেখা নোটবুকের কপি, চিঠিপত্র, আরও অনেক কিছু। আছে তাঁর স্বামী প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্তের জীবনী, গানের খাতার প্রতিলিপি, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, গান এবং ছবি। কমল দাশগুপ্তের সুরে ফিরোজা বেগমের বহুল প্রচলিত গানগুলোর মধ্যে, আমি বনফুল গো, এমনই বর্ষা ছিল সেদিন,
মোর জীবনের দুটি রাতি, মাটির এ খেলাঘরে অন্যতম।
এই কিংবদন্তি নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের কথা একটু জেনে নেই।-
ফিরোজা বেগম ২৮ জুলাই, ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তাঁর সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ১০৪০-এর দশকে তিনি সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁর কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুলসঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। নজরুল ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরণের সঙ্গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাঁর ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টির বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৫৪ সাল থেকে তিনি কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক কমল দাশগুপ্তের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে নজরুল সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত। ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাঁকে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকিরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শিল্পচর্চায় অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৭৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসেবে পরিচিত ‘স্বাধীনতার পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি-একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা স্বর্ণপদক, নজরুল একাডেমী পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড। তিনি জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড দিস্ক, ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। ১২ এপ্রিল ২০১২, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ‘বঙ্গ সম্মান’ পুরস্কার গ্রহণ করেন। তাছাড়া ২৮ জুলাই, ২০১৮সালে তাঁর ৮৮তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।
সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে রইল এই কিংবদন্তি নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles