– রহমান ফাহমিদা।
– সহকারী-সম্পাদক
এই পৃথিবীতে এমন কিছু ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেন যাদের সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না। তাঁর সাথেই তাঁকে তুলনা করা চলে! এমনই এক ব্যক্তি বা গুণীজন এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় সনজীদা খাতুন। তিনি একাধারে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’ -এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমানে সভাপতি। এছাড়া তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী একটি শিশু প্রতিষ্ঠান ‘নালন্দা’-র সভাপতি।
শ্রদ্ধেয় সনজীদা খাতুন ৪ এপ্রিল, ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তিনি (৪ এপ্রিল,২০২১) ৮৮ বছরে পদার্পণ করলেন। তাঁর পিতা কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন’র বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হক’র স্ত্রী। তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতন থেকে স্নাকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সনজীদা খাতুন’র কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
আজকের বাংলাদেশ আর প্রাক-একাত্তর পাকিস্তানের-পর্বে,রবীন্দ্রনাথকে ব্যাপক পরিসরে জনসম্মুখে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে ছিলেন তিনি। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সনজীদা খাতুন এবং তাঁর সহযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় কীর্তি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’ যা কিছুকাল আগে ভারত সরকারের রাষ্ট্রীয় সম্মানেও ভূষিত হয়। তবে শুরুর দিকে সম্মান ও স্বীকৃতির চেয়ে ঘাতপ্রতিঘাত ও বিরোধিতা ছিল প্রবল আকারে। পূর্ববাংলায় কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রাসী সাংস্কৃতিক নীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র-নজরুল এবং আবহমান বাংলার মানবতাবাদী-সমন্বয়ী ভাবধারাকে আশ্রয় করে ‘ছায়ানট’ ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু করে বাংলা বর্ষবরণ আয়োজন।
শুধু ছায়ানট তো নয়, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, ব্রতচারী আন্দোলন, আবৃত্তি চর্চার সংগঠন ‘কণ্ঠশীলন’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা-সব জায়গাতেই সনজীদা খাতুন’র উদ্ভাবনাময়, শ্রম, মেধা ও মনীষার ছাপ রয়েছে। তিনি শান্তিনিকেতনের ছাত্রী তাই কলকাতা থেকে তাঁর একাধিক বই ও গানের এ্যালবাম বেরিয়েছে বহু আগেই। একাত্তরে তিনি যখন কলকাতায় ছিলেন তখন তিনি ‘রূপান্তরের গান’ এবং ‘মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র হয়ে সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
শ্রদ্ধেয় সনজীদা খাতুন তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল – একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ,ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশিমবঙ্গ,ভারত)। এছাড়া কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইন্সটিটিউট ১৯৮৮ সালে তাঁকে রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত করে।
গুণী এই ব্যক্তি মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল-
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ
ধ্বনি থেকে কবিতা
অতীত দিনের স্মৃতি
রবীন্দ্রনাথঃবিবিধ সন্ধান
ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা
স্বাধীনতার অভিযাত্রা
সাহিত্য কথা সংস্কৃতির কথা
জননী জন্মভূমি
রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ
সঙ্গীতাঙ্গন -এর পক্ষ থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি কল রিসিভ করে জানালেন যে, সে একটু অসুস্থ! তাই কথা বলতে পারবেন না। এই কথা শুনে তাঁকে আর বিরক্ত করলাম না। তবে তিনি সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এই দোয়া করি এবং সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধেয় গুণীজন সনজীদা খাতুন’র জন্য রইল শুভ জন্মদিনের অনেক অনেক শুভকামনা ও অসীম শ্রদ্ধা।