কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা…

– প্রেমা রহমান।

কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ১৯৪৩ সালের কুমিল্লায় ২২ ফেব্রুয়ারি, দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সুরকার ও গীতিকারদের মধ্যে একজন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম নিয়ে যার সৃষ্টিতে আছে অসংখ্য কালজয়ী গান। ২০ হাজার গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার একাধারে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্য রচয়িতা, গীতিকার ও সুরকার। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৪১টি এবং চলচ্চিত্রে তাঁর অসখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০০২ সালে বাংলাদেশের ২১শে পদকসহ নানান পুরস্কার লাভ করেন, যেমন- স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি স্বাধীন দেশের সর্ব প্রথম পুরস্কার, বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিক বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমি অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কতৃক লাইফটাইম অ্যাওয়ার্ড সহ তাঁর অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা ১১০টি।

গতকাল ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, এইদিন ছিল এই কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্মদিন। সেদিন তাঁর রেকর্ডসংখ্যক জনপ্রিয় গানের কিছু অংশ নিয়ে ‘অল্প কথায় গল্প গান’ সিকুয়্যেল বইয়ের প্রকাশনা উৎসব আয়োজিত হয় এবং সেই সাথে প্রখ্যাত এই গীতিকার ও সুরকারের জন্মদিনও পালন করা হয় জাকজমক ভাবে। এই ভয়াবহ করোনাকালীন সময়ে ঘরবন্দি মানুষ ভ্যাকসিনের বদৌলতে কিছুটা হলেও স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে! তাই হয়তো এই কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাতে ছুটে এসেছেন অনেকেই। এই অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য সাফি চৌধুরী। চিত্রনায়ক উজ্জল, ইলিয়াস কাঞ্চন, ওমর সানী, বাপ্পারাজ, শাকিব খান, অনন্ত জলিল, সম্রাট, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, অভিনেত্রী তারিন জাহান। উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী- সৈয়দ আবদুল হাদী, লীনু বিল্লাহ, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ, রুমানা ইসলাম, কনকচাঁপা, আসিফ আকবর, আঁখি আলমগীর, দিনাত জাহান মুন্নি, সোহেল মেহেদী, মুহিন, ইউসুফ, সাব্বির, রাশেদ, লুইপা, হৈমন্তী, মোমিন বিশ্বাস, কোনাল, বনি। উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক- আলম খান, মইনুল ইসলাম খান, ফোয়াদ নাসের বাবু, ফরিদ আহমেদ, মিল্টন খন্দকার, জাভেদ আহমেদ কিসলু। আরও যারা উপস্থিত ছিলেন- ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা, রেম্প তারাকা টুম্পা, গীতিকার কবির বকুল সহ আরও অনেকে।

দেবাশীষ বিশ্বাস ও শান্তা জাহানের উপস্থপনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় রাত ৮টায়। দিঠির ছেলে আদিয়ানের পিয়ানোতে তারই নানা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গান দিয়ে। এর পরপরই মঞ্চে উঠে আসে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে, উপলের মেয়ে আরশিয়া। ও দাদার লেখা ‘সারেগামাপাধা, আমার দাদী দাদা’ এই গানটি গেয়ে শোনায়।

গান শেষ হওয়ার পর খন্দকার মনিরুল ইসলামের প্রকাশনা সংস্থা ‘ভাষাচিত্র’ থেকে প্রকাশিত ‘অল্প কথার গল্প গান’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পরিবারের সদস্যবৃন্দ- তাঁর স্ত্রী জোহরা গাজী, ছেলে উপল, মেয়ে দিঠি ও নাতি নাতনিসহ সবার উপস্থিতিতে।
এই সময়ে কিংবদন্তি গাজী মাজহারুল আনোয়ার আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেন। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, আমার ছেলেমেয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে। তাদের চোখে-মুখে যে আনন্দের রেশ দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়! আমি বা আমার ছেলেমেয়েরা যাদেরই এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেছিলাম, তাঁরা প্রত্যেকেই বলা চলে এসেছিলেন এবং আমাকে শুভকামনা জানিয়ে গেছেন। আমি তাঁদের প্রতি ঋণী।

শ্রদ্ধেয় কিংবদন্তি গীতিকার ও সুরকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এই কামনায় সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে রইল তাঁর প্রতি অনেক অনেক শুভকামনা ও শ্রদ্ধা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest Articles