Saturday, April 20, 2024

প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক আলী হোসেন-এর প্রতি শ্রদ্ধা…

– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।

করোনার এই ভয়াবহ ক্রান্তিলগ্নে আমরা হারিয়ে ফেলেছি কাছের, দূরের এবং দেশের অনেক বিশিষ্টজনকে। শুধু যে, করোনা ভাইরাসের কারণে হারিয়েছি তা নয়! বিভিন্ন অসুস্থতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনেকে চলে গেছেন, না ফেরার দেশে। সেই সূত্র ধরে, আমরা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হারিয়ে ফেলেছি এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক শ্রদ্ধেয় আলী হোসেনকে। তিনি ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন। হঠাৎ তাঁর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে, যুক্ত্ররাষ্ট্রের বোস্টন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয় এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

শ্রদ্ধেয় সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক আলী হোসেন ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকরির সুবাদে পাকিস্তানের করাচিতে তাঁকে পড়ালেখা করতে হয়েছিল। করাচিতে থাকাকালীন সময়ে নজরুল একাডেমিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁর চাকরি হয়। নজরুল একাডেমিতে চাকরি করার কারণে একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষক পিয়ারে খানের কাছে তিনি গান শিখেছেন। এভাবেই গানের সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন।

১৯৬৬ সালে প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক আলী হোসেনের সুর ও সঙ্গীতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাক বাবু’ মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রেই বিপুল জনপ্রিয় গান ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো’ গানটি তিনি জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহকে দিয়ে কণ্ঠ দেয়ান এবং একই চলচ্চিত্রে আরেক জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীকে দিয়ে ‘চাতুরী জানে না, মোর বধূয়া’ গানটি করানো হয়। শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও সৈয়দ আব্দুল হাদী, তাঁর হাত ধরেই চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক ঘটে। ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রের নায়ক নায়িকার অভিনয় করে ছিলেন তখনকার জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী সুজাতা ও আজিম। চলচ্চিত্রটি সেই সময় আলী হোসেনের সুর করা ও সঙ্গীত পরিচালনায় জনপ্রিয় গানগুলির জন্য খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই থেকে একজন সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি।

তারপর প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক আলী হোসেন ঢাকায় বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রের কাজ করার পাশাপাশি উর্দু ‘ছোট সাহেব’, ‘দাগ’, ‘আনাড়ি’, ‘কুলি’ ইত্যাদি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করেন। প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘ব্যথার দান’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর কালজয়ী বাংলা গানের তালিকায় আছে- ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভাল’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা তুমি যে আমার’, ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে এ বাতাসকে সাক্ষী রেখে’ ইত্যাদি বহু জনপ্রিয় গান।

প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক আলী হোসেনের স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে আসিফ হোসেন যুক্ত্ররাষ্ট্রে থাকেন। মৃত্যুর আগে তিনি ছেলের কাছেই ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন- সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার রিপন খান, ফরিদ আহমেদ, লুৎফর হাসান সহ অনেকেই।
সঙ্গীতাঙ্গন এই গুণীজনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশের সাথে সাথে তাঁর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা নিবেদন করছে এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। তিনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন এই কামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles