Saturday, April 20, 2024

আমি দেশের মাটিতে মারা যেতে চাই…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে
রইবোনা আর বেশী দিন তোদের মাজারে

ও আমি চলতে পথে দু’দিন থামিলাম
ভালোবাসার মালা খানি গলে পরিলাম
আমি গলে পরিলাম। আমি গলে পরিলাম।
আমার সা ধের মালা,
আমার সাধের মালা যায়রে ছিড়ে
রইবোনা আর বেশী দিন তোদের মাজারে
হায়রে ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে।।

ও অমি কত জনে কত কি দিলাম
যাইবার কালে একজনারো দেখা না পাইলাম
আমি দেখা না পাইলাম। আমি দেখা না পাইলাম।
আমার সংগের সাথী
আমার সংগের সাথী কেউ হইলো না রে
রইবনা আর বেশী দিন তোদের মাজারে। মুহূর্তে

সুন্দর এই পৃথিবী মানুষের অতি পরিচিত ও অনেক আপন। মায়াময় এই পৃথিবীর জন্ম হয়েছে মানুষের জন্য। এ পৃথিবীতে মানুষ আসবে, যাবে। এই আসা যাওয়ার মাঝখানে থেকে যাবে কিছু, ভুলতে না পারার স্মৃতি। সেই স্মৃতিকে সঙ্গী করে, অশ্রু বিসর্জন দেবেন তাঁর আপনজনেরা। মনে করবেন তাকে সময়ে-সময়ে। পৃথিবী নামটি বড়ই কঠিন! বড়ই আজব। এ পৃথিবীতে কেউ কখনো আসার দরখাস্ত করেনি। আসতে চায়নি! আল্লাহ্কে বলেনি যে, আমি পৃথিবীতে যাবো। কিন্তু এই পৃথিবীতে আসার পর, পৃথিবীর মায়ায় পড়ে, পৃথিবীর ভালবাসায় জড়িয়ে, কোন মানুষ আর ফিরে যেতে চায় না। থেকে যেতে চায় সারাজীবনের জন্য সুন্দর এই পৃথিবীতে। কিন্তু যখন কেউ জেনে যায়, আমার পৃথিবীর মায়া কাটাতে হবে। ভুলে যেতে হবে এই সুন্দর পৃথিবীকে। চলে যেতে হবে মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গন করে পরপারে। তখন মনটা কেমন হয় ? যখন মন জেনে যায় আমি আর বাচঁবোনা। তখন কেমন লাগে ? হয়তো এই কঠিন মুহূর্তে বুঝতে পারছেন বাংলাদেশের সঙ্গীতের রাজ মুকুট সম্রাট কিংবদন্তি গায়ক এন্ড্রু কিশোর। উপরের গানটি তার গাওয়া। তবে এতোদিন গানটির কথা অন্যের জীবনে বাস্তব ছিলো। সৃষ্টিকর্তার কি খেলা, আজ সেই গানটি তার নিজের জীবনে বাস্তব হবার পথে। তার চেয়ে কঠিন সত্যি হলো সে জেনে গেছে যে আর বাঁচবে না। সৃষ্টিকর্তা নামের তালিকা থেকে এন্ড্রু কিশোরকে ডেকেছেন। সৃষ্টিকর্তার ডাকে তাকে সারা দিতে হবে। এই পৃথিবীতে আর থাকবেন না। সুন্দর এই পৃথিবীতে কিছুদিন ঘুরে ফিরে ভালোবাসার মায়াজ্বালে বন্ধি হয়েছেন। সেই মায়াজালের মায়ার মালাখানি ছিড়ে চলে যেতে হবে চির দিবায় নিয়ে। এই পৃথিবীর মানুষকে এন্ড্রু কিশোর কত কিছু কত ভাবে দিয়েছেন। কিন্তু গানের ভাসায় তিনি বলেন, যাবার সময় আমাকে একা যেতে হবে। একজনেরও দেখা মিলবে না। সত্যি সব সময় কঠিন হয়। যাবার সময় সঙ্গের সাথী কেউ হবে না। এমন একটি পরিস্থিতি তার জীবনে ঘনিয়ে আসবে কিশোর হয়তো কল্পনাও করেনি। তার বর্তমান অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।

এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজে বলেন, এখন কিশোর কোন কথা বলে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আমি বলি কি ভাবো, বলে কিছু না, পুরানো কথা মনে পড়ে আর ঈশ্বরকে বলি আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিয়ো না। ক্যান্সারের শেষ সময়টা খুব যন্ত্রনাদায়ক ও কষ্টের হয়। এন্ড্রু কিশোরের জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চায়। তিনি বলেন, কিশোরের জন্য সবাই প্রাণ খুলে দোয়া করবেন, যেন কম কষ্ট পায় এবং একটু শান্তিতে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমার মনে হলো, কিশোর শুধু আমার বা আমাদের সন্তানের বা আমাদের পরিবারের নয় বরং দেশের মানুষের একটা অংশ বা সম্পদ । তিনি শেষে বলেন, এটাই শেষ পোস্ট, এর পর আর কিছু বলা বা লেখার মত আমার মানসিক অবস্থা থাকবে না। এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন মনে হয়, কিশোর থাকবে না অথচ আমি থাকবো, মেনে নিতে পারছি না।

এই অসময়ে, সবাই সাবধানে থাকবেন, নিজের প্রতি যত্ন নিবেন, সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন আর এন্ড্রু কিশরের প্রতি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রাখবেন ও প্রাণ খুলে দোয়া করবেন। কথা গুলো প্রাণ ছুঁয়ে গেলো। মিসেস এন্ড্রু বলেন, ঈশ্বরের কি খেলা, ১০ জুন আমরা সম্পূর্ণ পজেটিভ রেজাল্ট নিয়ে ফিরতে চেয়েছিলাম অথচ ১১ জুন ফিরলাম পুরো নেগেটিভ রেজাল্ট নিয়ে। আসলে বলা যায় না ভাগ্যে কখন কাকে কোন বাস্তবতার দিকে নিয়ে যায়। এন্ড্রু কিশোরের মনটা সব সময় পরে ছিলো দেশের মাটিতে। তাই তিনি সব সময় বলতেন যেনো দেশের মাটিতে ফিরে এলেই মরণ হয়। যখন লিম্ফোমা আবার ফিরে আসে, কিশোর ডাক্তারকে বলেছিলেন, ‘আমাকে রিলিজ করে দাও। আমি এখানে মারা গেলে তোমাদের বেশী ঝামেলা হবে। আমি আমার দেশে ফিরে যাবো। দেশের মাটিতেই মরতে চাই। হয়তো ঈশ্বর তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতেই দেশের মাটিতে নিয়ে আসছেন। সঙ্গীতাঙ্গন এর পাঠক-পাঠিকাসহ দেশের সকলের কাছে সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে কিশোরের জন্য দোয়া চাই। সবাই তার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। আপনারা নিজেরা ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন। সবার জন্য শুভ কামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles