Thursday, March 21, 2024

সুবীর নন্দী স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি…

– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।

সুবীর নন্দী অতি পরিচিত একটি নাম আমাদের কাছে। বাংলা গানের জগতে রয়েছে যাঁর সুখ্যাতি, রয়েছে অনেক সম্মানজনক অর্জন। আজ (৭মে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী। তাঁর ভক্তেরা এই প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। তাঁর জন্য আমাদের হৃদয় কাঁদে। হয়তো তিনি প্রকৃতির নিয়মে দেহ রেখেছেন কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তাঁর ভক্ত হৃদয়ে, তাঁর গানে গানে। আমরা তাঁকে গভীরভাবে স্মরণ করে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করি।

সুবীর নন্দী’র ডাক নাম ‘বাচ্চু’। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় ‘নন্দী পাড়া’ নামক মহল্লায় এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে ১৯ নভেম্বর ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মামা বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাদেআলিশা গ্রামে। তাঁর পিতা সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সঙ্গীতপ্রেমী। মাতা পুতুল রানীও গান গাইতেন কিন্তু রেডিও বা পেশাদারিত্বে আসেননি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সঙ্গীতে তাঁর হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। বাবার চাকরি সূত্রে তাঁর শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাগানেই ছিলেন। চা বাগানে খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি বিদ্যালয় ছিল, সেখানেই পড়াশোনা করেন। তবে পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। সেখানে তাদের একটি বাড়ি ছিল, সেখানে ছিলেন। পড়েছেন হবিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুলে। তারপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই তিনি গান করতেন। এরপর ১৯৬৭ সালে সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। এবং লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ।

সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান- ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। ১৯৭৮ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘অশিক্ষিত’ চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের ঠোঁটে তাঁর গাওয়া ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

১৯৮১ সালে তাঁর একক এ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করেছেন। এছাড়া তাঁর ‘প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘ভালোবাসা কখনো মরে না’, ‘সুরের ভুবনে’, ‘গানের সুরে আমায় পাবে (২০১৫)’ প্রকাশিত হয় এবং ‘প্রণামাঞ্জলী’ নামে একটি ভক্তিমূলক গানের এ্যালবামও প্রকাশিত হয়।

চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করেন। তিনি মহানায়ক (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও মহুয়া সুন্দরী (২০১৫) চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দিয়ে পাঁচবার এই পুরস্কার লাভ করেন।

সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করে।

দীর্ঘদিন ফুসফুস, কিডনি ও হৃদরোগে ভুগছিলেন সুবীর নন্দী। ১৪ই এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ৩০ এপ্রিল তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে ৫ ও ৬ই মে পরপর দুইদিন হার্ট অ্যাটাকের পর তিনি ২০১৯ সালের ৭ই মে ৬৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেহত্যাগ করেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। আর বলি,
“তোমার রেখে যাও গান গানে
ত্যই স্মরণ করি,
অমর তুমি চির অমর ভুবনে
রয়েছো ভক্তহৃদয় জুড়ি।

তোমার গান শুনে শুনে
আত্মার খোরাক জোগাই,
‘সঙ্গীতাঙ্গন’ এর পক্ষ থেকে
শ্রদ্ধা-ভক্তি জানাই।

তোমার প্রয়াণ দিবসে
তোমায় স্মরণ করে,
তোমার কণ্ঠের সুরধ্বনি
বাঁজে ঘরে ঘরে।
আজি, তোমায় স্মরণ করে…।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles