asd
Friday, December 6, 2024

সুবীর নন্দীর কাছে মানুষের জীবনবোধও শেখার ছিল – পল্লব সান্যাল (তবলা যন্ত্রশিল্পী)…

– রহমান ফাহমিদা।

ছোটবেলা থেকে অনেকেই পাখির মত আকাশে উড়ে বেড়াতে চায় তাই সে হতে চায় বৈমানিক। আবার কারো কারো সখ হয় সাগরের মাঝখানে ঘুরে বেড়াতে, তাই সে হতে চায় জাহাজের ক্যাপ্টেন। কেউ কেউ হয়তো হতে চায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নায়ক, গায়ক এইরকম অনেক কিছু! কিন্তু জনপ্রিয় তবলাবাদক পল্লব সান্যাল ছোটবেলা থেকেই হতে চেয়েছিলেন, তবলাবাদক। তাইতো তিনি সখ্যতা গড়েছেন তবলার সাথে সেই পাঁচ বছর বয়স থেকেই। তাঁর বাবা শৈলেস সান্যাল সরকারি কর্মচারী ছিলেন এবং সেই সাথে তিনি ঢাকা মিউজিক কলেজেও ছিলেন। বাবার কাছেই তাঁর তবলা বাজানো শেখার হাতেখড়ি। অন্যান্য ভাইয়েরাও তবলা বাজাতেন কিন্তু কেউ এই শিল্পকে তাঁর মত পেশা হিসেবে নেননি। তাঁর পরিবারে একমাত্র তিনিই শিক্ষাজীবনের পাঠ চুকিয়ে এই শিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি তবলার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট তবলাবাদক কামরুজ্জামান মনি সাহেবের কাছ থেকে এবং ভারতের পণ্ডিত কুমার ঘোষ এর কাছ থেকে। পণ্ডিত কুমার ঘোষের কাছে তিনি এখনো পর্যন্ত তালিম নিচ্ছেন। তিনি কখনো সঙ্গীত শিল্পী হতে চান নি কিন্তু অনেক গানের সুর ও মিউজিক কম্পোজিশন করেছেন।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তবলা শিল্পীদের ভবিষ্যৎ কেমন জানতে চাওয়া হলে তবলাবাদক পল্লব সান্যাল বলেন, এখন যারা তবলা বাজাচ্ছে তাঁরা ম্যাক্সিমামই আমার স্টুডেন্ট। ওরা ভাল বাজাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল, ওদের পর্যন্ত ঠিক আছে। যাদের বয়স ত্রিশ,বত্রিশ কিংবা সাতাশ কিন্তু ওদের পরের প্রজন্ম! যারা দশ, বার কিংবা চৌদ্দ বছরের ছেলেমেয়েরা, তাঁদের তো এই শিল্পকে পেশা হিসেবে নিলে হুমকি স্বরূপ হয়ে যাবে। তবে পড়াশুনা শেষ করে অন্য কিছুর সাথে সেকেন্ড অফশন হিসেবে নিতে চাইলে ঠিক আছে। শুধুমাত্র এটার ওপর নির্ভর করলে ভুল করবে।

“জর্দা ছাড়া পান আর তবলা ছাড়া গান ভালো লাগেনা” এই কথার ব্যাখ্যা তিনি দিলেন এইভাবে, এটা সত্যি কথা! তবে আমি ব্যাখ্যা করবো এভাবে যখন এই সমস্থ প্রযুক্তি যতদিন ছিলনা ততদিন এই কথাগুলো ঠিকই ছিল কিন্তু এই প্রযুক্তি বা সফটওয়্যারের কারণে ৯০% নাই বলা চলে। মাত্র ১০% কিছু কিছু কাজ হয়। এটা শুধু তবলার ক্ষেত্রেই না, অন্যান্য সব যন্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। টেকনোলজির কারণে একুস্টিক ইন্সট্রুমেন্ট যেগুলো আছে সেগুলোর ব্যবহার একদম কমে গেছে। শুধু আমাদের দেশেই না,অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা।

এই শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন ধরেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির মিউজিক ডিপার্টমেন্টে দুইজন কি তিনজন তবলাবাদক আছে, সেখানে যদি দশজন নেয়ার ব্যবস্হা থাকে তবে আরও সাতজনের চাকুরি হয়। এইভাবে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি এবং জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে দুই তিনজন করে লোক বেশী নেয়া হয়, তাহলে তো কয়েকজনের চাকুরি হয়। তাই সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই শিল্পকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব না।

তবলা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে বলেন, একটা কিছু করার চিন্তাভাবনা আছে। আগামী দু’এক বছর পর উদ্যোগ নিব কারণ ভালো কিছু করতে গেলে নিজেকে আগে তৈরি হওয়ার সময় দিতে হবে।

কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দীর সাথে তাঁর কেমন সম্পর্ক ছিল সেই কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সুবীর নন্দী দা’র সাথে আমার টানা ১৯৮৯ সাল থেকে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সম্পর্ক ছিল। তাঁর সাথে শেষ স্মৃতিগুলোর কথা বলতে গেলে বলতে হয়, মার্চের ২৮ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত উৎসব ছিল। সেদিন তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। তাঁর তিনটি গান গাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তিনি ১১টি গান গেয়েছিলেন। সেদিন তাঁকে কেউ ষ্টেজ থেকে নামতে দিতে চায়নি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজেই অনুরোধ করেছেন এইভাবে, দাদা অন্য শিল্পীরা পরে গাইবে, আপনি সময় নিয়ে ভাববেন না! আপনি গান করেন। এটাই ছিল সুবীর দা’র কোনো ষ্টেজে শেষ পরিবেশনা। এর দুই দিন পর তাঁর সাথে বাংলাভিশনে একটি রেকর্ডিং-এ বাজাই। সেটাই ছিল তাঁর সাথে আমার শেষ স্মৃতি। বাংলাভিশনের পর তিনি আর কোথায়ও গান করেননি। তারপর উনি হবিগঞ্জে গেলেন এপ্রিলের নয় তারিখে। সেখান থেকে ১৪ তারিখে ফেরার সময়ইতো তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। তারপরের কথা তো সকলেরই সব জানা।

কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী কেমন মানুষ ছিলেন সেই কথা বলতে গিয়ে তবলাবাদক পল্লব সান্যাল বলেন, বাস্তবিক সুবীর নন্দী ফ্যান্টাস্টিক মানুষ ছিলেন। সুবীর নন্দীর কাছ থেকে মানুষের জীবনবোধ শেখার ছিল, শৃঙ্খলা শিখার ছিল বা গানবাজনা সম্পর্কে অনেককিছু জানার ছিল। একটি গানকে নষ্ট না করে মিউজিসিয়ানদের নিয়ে গানটি কিভাবে ভালো করা যায়! তা শিখার ছিল তাঁর কাছ থেকে। উনি নিজে অনেক গান শুনতেন এবং গান সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতেন। উনি নিজে যা শুনতেন সেগুলো আবার আমাদের সাথে শেয়ার করতেন। মেসেঞ্জারে বা যে কোনো মাধ্যমে তা পাঠানোর ব্যবস্হা করতেন। গানগুলো শুনে আমাদের মতামত দিতে বলতেন। এ ব্যাপারগুলো তাঁর মধ্যে সবসময়ই ছিল। সুবীর দা নিজেও ভালো তবলা বাজাতেন। উনি তাঁর গানের সাথে বেশী বাদ্যযন্ত্র পছন্দ করতেন না। সবসময় সাধারণভাবে গান গাইতে চেষ্টা করতেন। উনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন, এই দোয়া করি।

আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো। সময় দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে আমি রহমান ফাহমিদা আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। শুভকামনা রইল।

সঙ্গীতাঙ্গন ও আপনার জন্যেও রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles