Saturday, April 20, 2024

ড্রামস আর ভোকালের খেলায় মোহাম্মদ নূর রঞ্জন…

– সালমা আক্তার।

কর্ম মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে আজন্ম, কর্মের কারণেই অনেকেই হারিয়ে যায় কালের স্রোতে, মুহাম্মদ নুর রঞ্জন প্রচার বিমুখ একজন মানুষ, সংগীতপ্রেমী একজন সিনিয়র মিউজিসিয়ান । ৯০’ দশকের অনেক জনপ্রিয় গানের ড্রামার ও ভোকাল দাতা। ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই রঞ্জন ভাই নামে জানেন। আজ কথা হবে “উইনিং” ব্যান্ড এর ড্রামার/ভোকাল নিবেদক মোহাম্মদ নূর রঞ্জনকে নিয়ে। ১৯৮৭ সালে প্রথম এ্যালবামের গান ‘নাতি খাতি বেলা গেল’ সহ জনপ্রিয় আধিকাংশ গানে ড্রাম বাজিয়েছিলেন মোহাম্মদ নূর রঞ্জন, অত্যন্ত সদালাপী তিনি, অবসর সময়ে নিজেকে সুরের আরাধনায় ব্যস্ত রাখতে চান, মন ও চিন্তা চেতনায় থাকতে চান উন্নতমনা। জন্ম ১৯৬২ সালের ১৪ জুন । বাবা সিরাজুন নূর ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ত এর ডাইরেক্টর। তিন ভাইয়ের মধ্যে মোহাম্মদ নূর রঞ্জন সবচেয়ে ছোট। রঞ্জন সম্পর্কে একটি কথা না বললেই নয় তিনি একজন পেশাদার ক্রিকেট খেলোয়াড়ও ছিলেন। মোহাম্মদ নূর রঞ্জনের মেঝ ভাই ছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম এর একজন প্লেয়ার, নাজমুন নুর রবীন। সেই সময় এক নামেই পরিচিত দর্শক মহলে। নাজমুন নূর রবীন ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়ার ছিলেন, ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মত অংশ গ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ২য় বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড সফর করেন। মেঝ ভাইয়ের থেকে উৎসাহিত হয়ে মোহাম্মদ নূর রঞ্জনও ক্রিকেট শুরু করেন। ১২ বছর বয়সে ১৯৭৪ সালে ইয়াং পেগাসেস দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৩ বছর খেলার পর, ১৯৭৮ সালে লীগ চাম্পিয়ান আবাহনীর হয়ে প্রথম বিভাগে খেলায় অংশ নেন। ১৯৮১ সালে কলকাতা থেকে আগত এক ক্রিকেট দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ অনুরোধে ১৯ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর নিয়মত পেশাদার খেলোয়ার ছিলেন।

উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জীবনকে দিতে পারে মধুর স্মৃতি ও কর্ম ব্যস্ততা। মোহাম্মদ নূর রঞ্জনের মিউজিকে আসার ব্যাপারটাও ক্রিকেটের মতোই বলতে গেলে। বড় ভাই কামরুন নূর সাকিও ছিলেন একজন মিউজিশিয়ান। ১৯৬০ সালে শেষের দিকে “আগ্লি ফাইশেস’ নামে উনাদের একটি ব্যান্ড ছিল। ‘৭০ দশকের শুরুতে দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় পপ বান্ড ‘উন্ডি সাইডস অফ কেয়ার’ এ লীড গিটারিস্ট হিসাবে নিয়মিত ব্যান্ড চর্চা করতেন। ছেলে বেলায় বড় ভাই থেকে অনুপ্রানিত হয়ে স্কুল থেকেই খেলার পাশাপাশি মিউজিকও শুরু করেন রঞ্জন। ১৯৭৪ সালে ক্লাস সিক্স থাকতেই একটি ব্যান্ড শুরু করেন ‘নিউক্লিয়ার ব্লাস্ট’ নামে। সেখানে তিনি পারকাশান বাজাতেন। দশম শ্রেণিতে থাকাকালিন সময় একটি ব্যান্ড করেন যেখানে তিনি গিটারিস্ট হিসেবে ছিলেন। ব্যান্ডে সদস্য ৩ জন থাকায় আর ব্যান্ডের নামকরন করা হয়নি। ১৯৮১ সালে ‘৯০ এর সাড়া জাগানো আধুনিক দরদী কন্ঠ শিল্পী মরহুম খালেদ হোসেন মিলু ভর্তি করে দেন ‘বাংলাদেশ মর্ডান মিউজিক ইনস্টিটিউট’-এ, মূলত সেখান থেকেই মোহাম্মদ নূর রঞ্জনের ড্রামস এর হাতে খড়ি শুরু হয়। শ্রোতানন্দিত আজম খানের সাথে হায়দার, শেলি মিলে ব্যান্ড ফর্ম করেন, তখন উনাদের কোন ড্রামার ছিল না। ভাগ্যের চক্রে মোহাম্মদ নূর রঞ্জন, শেলির ক্লোজ ফ্রেন্ড হওয়ায়, মোহাম্মদ নূর রঞ্জনকে ব্যান্ডে ড্রামার হিসেবে নিয়ে নেন। এভাবেই ১৯৮৩ সালের ১লা জানুয়ারি ফর্ম করে ‘উইনিং’ একই বছর রিয়াজুদ্দিন বাদশা’র প্রযোজনায় বিটিভির একটি অনুষ্ঠান ‘ঝঙ্কার’ যার উপস্থাপিকা ছিলেন চঞ্চলা তারানা হালিম সেই প্রোগ্রামের মাধমেই ‘উইনিং’ তাদের প্রথম টিভি শো করে। শো’টি মূলত নতুন আর্টিস্ট এর জন্য হতো। উইনিং ‘নীল চোখ’, ‘মন কিযে চায়’ গান গুলো পরিবেশন করে, ড্রামসে ছিলেন রঞ্জন। গান গুলোর অডিও রেকর্ডিং এর সময় গেস্ট আর্টিস্ট হিসেবে ব্যান্ডের সাথে বাজান ফুয়াদ নাসের বাবু (ফিডব্যাক) এবং পিয়ারু খান (ফিডব্যক)। ওই প্রোগ্রামে সোলো আর্টিস্ট হিসেবে প্রয়াত জুয়েলও পারফর্ম করেছিলেন।

১৯৮৫ সালে উইনিং এর ভোকাল দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় রঞ্জন ড্রামস এর সাথে গান শুরু করেন। উইনিং এর প্রথম এ্যালবামে মোহাম্মদ নূর রঞ্জন গাওয়া বেশ কিছু গান দারুণ হিট হয়। যা আজো সবার মুখে মুখে। এর মধ্যে ‘নীল চোখ’, ‘এই সুন্দর ধরণী’, ‘মন কি যে চায় বলো’, ‘বৃষ্টি’, জীবন নামে’ গানগুলো উল্লেখযোগ্য ছিল।
২০০০ সালে রঞ্জন সুদূর কানাডায় পাড়ি জমান। এর মাঝে ২০১৫ সালে উইনিং এর তৃতীয় এ্যালবাম ‘বহুদুরে’তে আবার কাজ করেন। ২০১৭তে আশিক মিউজিকের ব্যান্ড মিক্সড ‘আবার’ এ্যালবামে রঞ্জন গান করেন। ব্যান্ডের মেম্বারদের ব্যস্ততার কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে শো এর অফার আসলেও আর করা হয় না। মোহাম্মদ নূর রঞ্জন নিজের মতোই করে মিউজিক চর্চা করে যাচ্ছেন পলে পলে। ভবিষ্যতে নিজে কিছু একটা করার কথাও জানালেন।
ব্যান্ড মিউজিকের এক একটি স্তম্ভ মোহাম্মদ নূর রঞ্জন। সম্প্রতি তিনি গেয়েছেন ইসলামী গান “আল্লাহু আকবর” শিরোনামে। সময়ের পায়ে পায়ে এগিয়ে চলুক মোহাম্মদ নূর রঞ্জন, সংগীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ নূর রঞ্জনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শুভকামনা। দর্শকদের হৃদয় ছোঁয়া গানের মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে কাটুক সুন্দর সময়গুলো।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles