asd
Friday, November 22, 2024

আজ হ্যাপী আখন্দ এর জন্মবার্ষিকী…

– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।

হ্যাপী আখন্দ (জন্ম: ১২ অক্টোবর, ১৯৬৩ – মৃত্যু: ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৭)।

গায়ক এবং সঙ্গীত পরিচালক হ্যাপি আখন্দ। যাকে বাংলাদেশী সঙ্গীতের বরপুত্র বলা হত। যিনি আর ডি বর্মণ, আববাসউদ্দীন, মান্না দে, সমর দাশের মতো সঙ্গীতজ্ঞের প্রশংসা আর স্নেহ অর্জন করেছিলেন নিজ যোগ্যতায়।
তিনি হলেন আমাদের প্রিয় মানুষ হ্যাপি আখন্দ।
হ্যাপী আখন্দের জন্ম হয় ঢাকার পাতলা খান লেনে ১২ অক্টোবর ১৯৬৩ সালে। আজ তার ৫৭তম জন্মবার্ষিকী।
কবির সুরে সুর মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে –

“যখন তুমি এসেছিলে ভবে
কেদেঁছিলে তুমি হেসেছিল সবে।
এমনি জীবন করিও গঠন
মরিলে হাসিবে তুমি
কাঁদিবে ভূবন”।

আসা যাওয়ার মাঝখানেই জীবন। যেমন জন্মে আনন্দ নিয়ে আসে তেমনি মৃত্যুতে নিয়ে দুঃখ। হ্যাপী আখন্দের মত মানুষ পৃথিবীতে এসেছিল শূন্যহাতে চলেও গেছে শূন্যহাতে। কিন্তু যাবার সময় রেখে গেছে সঙ্গীতের সুর। তাঁকে ভুলে গেলেও মনে করিয়ে দেয় তার গান। জীবনকে গঠন করেছেন এমন ভাবে তার চলে যাওয়ায় সঙ্গীত ভূবন এখনো কাঁদে। যদিও আজ তার জন্মদিন আনন্দের একটি দিন মানুষটি না থাকাতে সেটা আর আনন্দ হয়ে ওঠে না।
এই মানুষটির যখন জন্ম হয়, জন্মের সময় তাঁর ভাই লাকী আখান্দ তাঁর হাতে একটি পয়সা গুজে দিয়েছিলেন এবং প্রায় ৪-৫ দিন পর তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরও তাঁর হাতে গুজে দেওয়া পয়সাটা ছিল। ছোটবেলায় ভাত খাওয়ার সময় তিনি কাকদের ডেকে ডেকে ভাত খাওয়াতেন। তিনি কোন বিষয় সম্পর্কে একবার শুনলেই মুখস্থ করে ফেলতেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর হাতে গিটারের তাল ধরা দেয়। শুরুর দিকে হ্যাপী আখন্দ ভাই লাকী আখান্দের সাথে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিতেন তবলা বাজানোর জন্য।

হ্যাপী আখন্দ ‘উইন্ডি সাইড অব কেয়ার’ নামে একটি ব্যান্ড গড়েছিলেন যা ছিল একটি পাকিস্তানি ব্যান্ড। সেখানে তিনি দক্ষ হাতে গিটার বাজানোর পাশাপাশি গানও গাইতেন। কলকাতার মধু মুখার্জি ছিলেন তাঁর ছাত্র। ১৯৭৫ সালে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটি লিখেছিলেন এসএম হেদায়েত এবং সুর করেছিলেন লাকী আখান্দ। এই গানটির সঙ্গীত আয়োজন করে হ্যাপি আখন্দ। বাংলাদেশ টেলিভিশনে গেয়েছিলেন গানটি। লাকী আখান্দের সাথে হ্যাপীর বয়সের ব্যবধান বড়জোর ১০ বছরের হলেও তাঁরা ছিলেন বন্ধুর মতো। ১৯৭২ এর পর ২১শে ফেব্রুয়ারি ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর এর মতো জাতীয় উৎসবগুলোতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করতো হ্যাপী। হ্যাপী আখন্দের গাওয়া জনপ্রিয় গান হলো ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায় রে’, ‘খোলা আকাশের মতো তোমাকে হৃদয় দিয়েছি’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝরনা’, ‘এই পৃথিবীর বুকে আসে যায়’, ‘স্বাধীনতা তোমায় নিয়ে গানতো লিখেছি’। তাঁর সঙ্গীত আয়োজনে ফেরদৌস ওয়াহিদের গাওয়া ‘এমন একটা মা দে না’, প্রয়াত ফিরোজ সাঁইয়ের গাওয়া ‘ইশকুলখুইলাছে রে মাওলা’ গানগুলো ওই সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সঙ্গীত পরিবারে জন্ম
নেওয়ার ফলে বাবা এবং বড় ভাই লাকী আখান্দের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতজ্ঞান, আবেশী কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সঙ্গে গিটার, পিয়ানো, তবলা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সহজাত দক্ষতায় বিস্মিত করেছিল সেই সময়ের শ্রোতা ও শিল্পীদের। হ্যাপী আখন্দ সম্পর্কে সঙ্গীতজ্ঞ লাকী আখন্দ বলেন, ‘হ্যাপীর সঙ্গীত-প্রতিভা ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিস্ময়কর। সঙ্গীতের প্রতি তাঁর একাগ্র নিষ্ঠা আর ভালোবাসার পাশাপাশি স্রষ্টা প্রদত্ত কিছু সহজাত গুণাবলী ও দক্ষতার কারণে আমরা যারা একই সময়ে সঙ্গীত চর্চা করতাম, তাদের সবার মধ্যে ও ছিল সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল। নিজের সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে হ্যাপী শ্রোতাদের হৃদয়ের সব বন্ধ জানালা খুলে দিতে পারতেন। গিটার, পিয়ানো, তবলা যা-ই বাজাতেন, এক অদ্ভুত ভালোলাগার জন্ম দিতে পারত তাঁর সঙ্গীত। পৃথিবীর নানা ধাঁচের সঙ্গীত শুনে শুনে ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুণী শিল্পীদের সান্নিধ্যে অর্জিত সঙ্গীতের নানা জ্ঞান ও দর্শন অকাতরে বিলিয়ে দিতেন নিজের বন্ধুপ্রতিম সহশিল্পী আর ছাত্রদের মধ্যে। সেই সঙ্গে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ও নতুনত্ব আনতে হ্যাপী তাঁর উদ্ভাবনী শক্তিকে সব সময় কাজে লাগাতেন। গুণী এই মানুষটি ১৯৮৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাত্র ২৪ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। আজকের এই বিশেষ দিনে গুণী মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করছি। শুভ জন্মদিন।

অলংকরন – মাসরিফ হক।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles