সংগ্রহ – মোশারফ হোসেন মুন্না।
মান্না দে একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তী শিল্পীর নাম। তার গাওয়া একটি বিখ্যাত গান ও সুরসৃষ্টির গল্প নিয়ে লিখছেন গানটির সুরকার নচিকেতা ঘোষের ছেলে সুপর্ণকান্তি ঘোষ। যদিও এখন তিনি নিজের নামেই বিখ্যাত। তার বয়ানেই ঘটনাটা শোনা যাক। সুপর্ণবাবু বলছেন, তখন সবে সুর করা শুরু করেছি। বাবা মারা গেছেন। ভয়ে ভয়ে বাবার হারমোনিয়াম টেনে বসছি। ছোট ছোট গান সুর করি। তখন আমরা প্রিয়নাথ মল্লিক রোডে একটা বাড়িতে ভাড়া থাকি।
একদিন ঘরে বসে সুর করছি। দরজাটা একটু ভেজানো। হঠাৎ পরিচালক অজয় বিশ্বাস উঁকি দিয়ে বললেন, কি করছিস ? তখন তিনি হিন্দি ছবি করছেন। আমি বললাম, বাবার ফেলে দেওয়া লেখা সুর করার চেষ্টা করছি। উনি বললেন, তাই নাকি ? শোনা তো। আমি দু’একটা শোনালাম। উনি বললেন, বাঃ, চমৎকার, তুই পারবি। বলে উনি চলে গেলেন।
একদিন জানতে পারলাম, উনি মুম্বাই যাবার পথে ফ্লাইটে মান্না দে’র সঙ্গে দেখা হয়েছে। উনি মান্না দে-কে বলেছেন, জানেন তো নচিদার ছেলে ভাল সুর করে। মান্না দে ঘাবড়ে গিয়ে বলেছেন, তাই নাকি ? ওকে তো খোকা বলে জানি। বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।
মান্না দে কলকাতায় এসেছেন একটা অনুষ্ঠান করতে। কলকাতায় এসে আমায় ফোন করলেন, তুই নাকি সুর করছিস ? একদিন আয় দেখি আমার বাড়িতে। তখন আমি চাকরি পেয়ে গেছি। আমি তো ভয়ে ভয়ে ওঁর বাড়ি গেছি।
গিয়ে মনে হচ্ছে যেন পাহাড়ের সামনে বসেছি। আমায় বললেন, শোনা তোর গান। আমি শোনালাম। উনি চুপ করে শুনে বললেন, বোস, বলে ওপরতলায় গিয়ে একটা লেখা নিয়ে এলেন। লেখাটা হাতে দিয়ে বললেন, এটা একটা খুব বড় গান। পুলকবাবুর লেখা। অনেকে সুর করেছেন। আমার ভাল লাগেনি। তুই দেখ, ভাল লাগলে করবো। নইলে করবো না।
লেখাটা হাতে নিয়ে আমি দুরু দুরু বুকে হেদুয়া থেকে ২বি বাসে চেপে বসলাম। নামবো হাজরায়। তখন দুপুর। বাসের জানালার ধারে বসে পুলকবাবু’র লেখাটা বার করে পড়তে লাগলাম। পড়তে পড়তেই হঠাৎ করে দুটি লাইনের সুর এসে গেল। তারপর পুরোটাই সুর হয়ে গেল বাড়ি গিয়ে। তাঁর কাছে গিয়ে শোনালাম। তিনি মুগ্ধ। বললেন, গানটা করবেন, অনেকেই বাধা দিলেন। এই সুরে গান করবেন ? ওর অল্প বয়স। কিন্তু মান্না দে অনড়, অটল, গানটা বের হলো। কি পরিমাণে শ্রোতাদের আদর পেয়েছিল এবং এখনও সবার কাছে ঐতিহাসিক ও ভালবাসার গান তা আপনারা জানেন। গানটি ছিল –
‘সে আমার ছোট বোন,
বড় আদরের ছোট বোন,’
এছাড়া আমার অনেক গান মান্না দে করেছেন। ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা…’ ও আমার সুর করা। এ লেখা এখানেই থামা যাক। আরো অনেক বিখ্যাত গানের, সুরের গল্প রয়েছে। যেগুলি বেশিরভাগ মানুষেরই জানা নেই। আমরা শুধু গান শুনেই মুগ্ধ হই। অন্য গানের সৃষ্টি কথা আবার অন্য কোন সময়ে তুলে ধরা যাবে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।