বাংলাদেশের গুণী সঙ্গীতশিল্পী এবং সঙ্গীতের ভুবনে খালামনিখ্যাত, প্রজন্মের কাছে অভিভাবক স্বরূপ শ্রদ্ধেয়া ফেরদৌসি রহমান। তিনি গানের মানুষ, শ্রোতাদের প্রাণের মানুষ।
ফেরদৌসি রহমান ১৯৪১ সালের ২৮শে জুন ব্রিটিশ ভারতের কোচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের মেয়ে। প্রায় পাঁচ দশক ধরে তাঁর সঙ্গীত জগতে পদচারণা চলছে। পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, আধুনিক এবং প্লেব্যাকসহ সব ধরনের গানই তিনি করেছেন।
ফেরদৌসী রহমানের গানে হাতে খড়ি হয় তাঁর পিতার কাছে। পরবর্তীতে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমূখ সঙ্গীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন। খুব অল্প বয়স থেকে তাঁর স্টেজ পারফরম্যান্স শুরু হয়। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে খেলাঘর নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্লেব্যাক করেন। ৬০ ও ৭০-এর দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর প্লেব্যাক করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৫০-এর কাছাকাছি। ১৯৪৮ সালে তিনি প্রথম রেডিওতে গান করেন। তখন তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম বড়দের অনুষ্ঠানে গান করেন। ১৯৬৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেন এইচ এম ভি থেকে।
১৯৬০ সালে ফেরদৌসী রহমান ইউনেস্কো ফেলোশীপ পেয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে ৬ মাসের সঙ্গীতের ওপর স্টাফ নোটেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। তাঁর ৩টি লং প্লেসহ প্রায় ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড এবং দেড় ডজনের বেশি গানের ক্যাসেট বের হয়েছে। সিডি হিসেবে বের হয়েছে ১টি ‘এসো আমার দরদী’। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার গানের রেকর্ড হয়েছে তাঁর। তিনি প্রথম এদেশের মহিলা সঙ্গীত পরিচালক। ১৯৬০ সালে রবীন ঘোষের সাথে ‘রাজধানীর বুকে’ নামক চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। সঙ্গীতের শিকড় তার হৃদয়ে। আজ ওনার জন্মদিনে সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে রইলো শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।