Saturday, April 20, 2024

আমরা শিল্পীরা ভিক্ষুক না!…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

একটি বৃক্ষের অনেকগুলো ডাল, সেই ডালে অনেক শাখা। শাখায়-শাখায় অসংখ্য প্রশাখা। তার মধ্যে অসংখ্য পাতা। হাজার হাজার গাছের পাতা ঝড়ে মাটিতে পড়লে, আমরা তা দেখে বুঝতে পারি এটি কোন গাছের পাতা। তাহলে মানুষ কেন মানুষকে দেখে চিনতে পারে না যে সে মানুষ। একটি প্রাণীর সামনে যখন অন্য আরেকটি প্রাণীকে মারা যেতে দেখে, তখন পশু হলেও তার ভিতরে মায়া জন্মায়। পরিবারের একজন অসুস্থ বা বিপদগ্রস্ত হলে অন্য সদস্যদের মনে কষ্ট হয়। সবার কাছে আমাদের একটি প্রশ্ন আশা করি জবাবটি বিজ্ঞজনরা দিতে পারবেন। একটি পরিবারে সমস্যা কিংবা কারো বিপদ হলে আমরা কি বলি যে, আমি বিপদে পড়েছি সাহায্যে করুণ ? নাকি পরিবারের মানুষগুলো বিপদ দেখে নিজেরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ? পরিবার বলতে গেলে আমরা কি শুধু বাবা-মা, ভাই-বোনকেই বুঝি ? নাকি এভাবেও ভাবি যে এছাড়াও আরো পরিবার আছে ? নিজের ব্যাক্তিগত পরিবার ছাড়াও আরো অনেক পরিবার থাকে। আর তা হলো কর্মক্ষেত্র। যে যে ভাবেই নিজের জীবনকে চালাইনা কেন, কর্মক্ষেত্রের পরিবার কিন্তু আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা নিজের পরিবারের সাথে যতটা সময় ব্যায় করি, তার থেকে কর্মক্ষেত্রে বেশি থাকি। কিন্তু এই পরিবারকে আমরা কেন মূল্য দেই না ? ওদের বিপদে কেন আমরা এগিয়ে আসি না ? বনের পশুরা যখন কোন প্রাণীর বিপদ দেখে সবাই এগিয়ে আসে তাকে বাঁচাতে। কিন্তু আমরা মানুষ হয়ে তা কেন পারি না ? হয়তো এতটুকু লেখা পড়ে সবাই বিরক্ত হচ্ছেন। তারপরও দয়া করে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আমরা কি বলতে চাই একটু জানুন। সঙ্গীত মানুষের জীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ বেঁচে আছে সঙ্গীতের বিনোদনকে পুঁজি করে। আমরা সঙ্গীতকে সেই জন্য শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু আমাদের এই বাংলাদেশে সঙ্গীত জগৎটা অন্যসব দেশের মতো না। আমরা শুধু নিজেদের ভালোটাই বুঝি। সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। হয়তো আমাদের কথাগুলো মনে কষ্ট লাগতে পারে। কিন্তু আজ বলতেই হচ্ছে।

সঙ্গীত হচ্ছে একটি প্লাটফর্ম। এখানে যারা কাজ করেন তারা সবাই একটি পরিবারের মতো। এখানে একজন আরেক জনের ভাই- বন্ধু। কেউ বিপদে পরলে, তাকে নিজের বিপদ বলে এগিয়ে আসা প্রকৃত পরিবারের সদস্যদের কাজ। এখানে যারা কাজ করেন, তাদের একটা নিজস্ব দায়িত্ব আছে একেক জন একেক জনের প্রতি। তার উপর সব থেকে বড় কথা হলো, এখানে আমরা সবাই মানুষ। কিন্তু বড়ই লজ্জাকর বিষয় এটাই যে, এখানে যারা বিপদে পরে তারা কারো আপন মানুষ বা রক্তের সম্পর্কের না হলে কেউ কারো খবর নেয় না।
কিন্তু কেন ?
কেন আমরা ভুলে যাই, যে ব্যক্তি আজ বিপদে পড়েছে তার জায়গায় আমিও হতে পারতাম! আমার পরিবারের কেউ হতে পারতো!
তাহলে কি আমরা চুপ করে থাকতে পারতাম ? না!
পারতাম না। তারা না বলা সত্ত্বেও আমরা সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতাম। কিন্তু সঙ্গীতের সাথে যুক্ত যারা তাদের অন্য কোন ইনকাম বা আয়ের উৎস নাই তারা বিপদে পড়লে আমরা কেন এগিয়ে আসি না ?
আমাদের মনে কি তার জন্য মায়া হয় না ?
মনে কি ঈর্ষা হয় ?
এই ভাবে করে দিন মাস বছরে কত সঙ্গীতের মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। কষ্ট করে শেষে মারা যায় বিনা চিকিৎসায়। আর মারা যাবার পরে তার জন্য আমরা শোক প্রকাশ করি।
মিডিয়ায় বলে বেড়াই বড় ভালো লোক ছিলো গো। আমরা বেঁচে থাকতে যখন তার বিপদে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারি না মরে গেলে দাফন কাফন আর দোয়া প্রার্থনা করতে যাই, তখন মৃত ব্যাক্তির আত্না হয়তো আমাদের ধিক্কার জানায়। তখন চায় না তার নিছক মায়ার এই অভিনয় দৃশ্য দেখতে। আজ যখন আমরা একজন সঙ্গীত জগৎ এর মানুষকে অর্থসংকটে পরে থাকতে দেখেও, আমরা সঙ্গীতের মানুষ এগিয়ে যাবো না, তখন কিন্তু বাইরের মানুষও আমাদের সাহায্যে করার কথা ভাববে না। কারণ এটাই সত্যি যে পরিবারের লোকজন না এলে বাইরের মানুষ কেন আসবে ?

তাই আমরাই আমাদের বিপদে আগে এগিয়ে আসবো। কারণ সঙ্গীতের সূতোয় আমরা একটি পরিবারে গাঁথা। আমরা যারা সঙ্গীতের মানুষ তারা যদি সবাই দশ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেই তাহলেও লক্ষ টাকাতে দাড়াবে।
আমাদের আর বাইরের মানুষের কাছে ভিক্ষে করতে হয় না। আমরা কেন অন্যের নিকট ভিক্ষে করবো। আমরা পারি নিজেদের নিজেরাই সাহায্যে করতে। কারণ সঙ্গীত জগতের মানুষকে সবাই অন্য চোখে দেখে।

তাদের কর্ম থেকে বিনোদন নিতে ভালো লাগে।
কিন্তু মানুষগুলোকে বিপদে পড়তে দেখলে বিভিন্ন মন্তব্য ছুঁড়ে দেই। তাই আসুন আমরা এগিয়ে আসি আমাদের সহযোগীতার হাত বাড়াই জনপ্রিয় যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী রিচার্ড কিশোর এর জন্য।

আমরা সবাই জানি তিনি আজ ১০দিন যাবৎ করোনায় আক্রান্ত। সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকাকে তিনি ফোন করে তার সহযোগীতা পাবার কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই একটাই পত্রিকা যারা আমাদের সঙ্গীতের মানুষের কথা বলে। আমাদের নিয়েই কাজ করেন। তাই সঙ্গীতাঙ্গন এর কাছে আমার আবেদন রইলো আমার অর্থসংকট সময়ে আমাকে কোনভাবে সহযোগীতা করার। তিনি বলেন, আমি আজ ১০দিন ধরে হাসপাতালে আছি। আমার অনেকদিন ধরে জ্বড় ছিলো। তারপর আমার বন্ধুরা বললো যেনো পরীক্ষা করাই। তখন পরীক্ষা করে জানলাম করোনা পজেটিভ। ভয় পেয়ে গেলাম। সিটি স্কেন, ইসিজি সহ বিভিন্ন পরিক্ষা চলতে থাকে। আমার স্কুলের বন্ধুরা আমাকে কিছু সহযোগীতা করে। তারপর আমার কিছু স্টুডেন্ট আছে ওরাও ওদের হাত খরচ থেকে সব মিলিয়ে হাজার ১২০০ শত করে বিকাশে দিচ্ছে। তা দিয়ে কোনরকমে চলছে। কিছু কিছু ঔষধ আছে যা খুবই দামি। নিজের টাকায় আনতে হয়। হয়তো যদি ইনকাম থাকতো, তাহলে সমস্যা হতো না। এখন এমন একটি সমস্যায় পড়েছি যে কারো কাছে চাইতেও লজ্জা লাগছে। তাই সঙ্গীতাঙ্গন যদি আমার জন্য একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে খুবই উপকৃত হবো। আমারতো এই মুহুর্তে সবাইকে ফোন করে বলাটা সম্ভব না। আমি মনে করি, সঙ্গীতাঙ্গন এবং আমি একই ব্যাক্তি। তাই আমার বলা আর সঙ্গীতাঙ্গন এর বলা একই। আমার এই দুঃসময়ে যদি আমার পাশে দাড়ায় চিরদিন মনে রাখবো। সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যেমে আমি সবার কাছে সহযোগীতা চাই। আশা করি আমাকে সবাই সহযোগীতা করবেন। আমার শরীরের কন্ডিশন তেমন ভালো নেই। আমি ওপেন হার্ড সার্জারির রোগী। এখন সুগার বেড়ে গেছে। নানা জটিলতায় আছি। সবার জন্য দোয়া করি যেনো সবাই ভালো থাকেন। আমার জন্য সহযোগীতাসহ দোয়া করবেন। আমি যেনো সুস্থ হয়ে ফিরতে পারি।

সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকেও সবার কাছে দোয়া চাই। রিচার্ড কিশোর একজন সঙ্গীতের মানুষ। তার জন্য দোয়া করবেন। এবং সেই সাথে আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে সাথে থাকবেন।
রিচার্ড কিশোরের জন্য সহযোগীতা পাঠানোর বিকাশ নাম্বার- ০১৮৭৯ ১৪১৯১৭।

সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। করোনায় নিজের ঘরেই থাকুন। শুভ কামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles