– টি, ডব্লিউ সৈনিক।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ২৯ মার্চ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ভারতের হাইকমিশনার বাসায় এসেছিলেন। তিনি সন্জীদা খাতুনের হাতে পদ্মশ্রী পুরস্কারটি তুলে দেন। বাসায় প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো অবস্থান করেন বিক্রম দোরাইস্বামী।
ভারতের হাইকমিশনার এ সময় সন্জীদা খাতুনের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এই চেতনা আগামীতে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে সন্জীদা
খাতুনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। – সুএ : ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা।
শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০-২১ সালের পদ্মশ্রী সম্মাননার জন্য সন্জীদা খাতুনকে নির্বাচিত করে ভারত সরকার। এই সম্মাননাপ্রাপ্ত অন্যদের হাতে গত বছরের ২১ নভেম্বর পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী। অবশেষে ভারতের সর্বোচ্চ চতুর্থ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারটি তার বাসায় পৌঁছে দেন হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
ড. সন্জিদা খাতুন একজন বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬০ সালের শুরুর দিকে বাঙালি সংস্কৃতির পরিচায়ক হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তার নেতৃত্বে ছায়ানট এখন একটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান, যা শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য প্রসারে কাজ করছে।
সনজীদা খাতুন (জন্মঃ ৪ এপ্রিল, ১৯৩৩) বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। তাঁর বাবা ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী। বাঙালির সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা ও বিকাশে যে ক’জন নিবেদিতপ্রাণ সারা জীবন কাজ করে চলেছেন তাদের অন্যতম ড. সন্জিদা খাতুন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা।
শিক্ষা কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার ঐকান্তিক সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে ছায়ানট ও জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মতো সংগঠন। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্রশতবর্ষ উদযাপন, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর গ্রন্থের মধ্যে আছে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, নজরুল-মানস, সহজ কঠিন দ্বন্দে ছন্দে, শান্তিনিকেতনের দিনগুলি। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের রবীন্দ্র-পুরস্কার, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম উপাধি, ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী ইত্যাদি।
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, অতীত দিনের স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান, ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা, জননী জন্মভূমি, রবীন্দ্রনাথ
এবং রবীন্দ্রনাথ, অতীত দিনের স্মৃতি, বাংলাদেশের সংস্কৃতির চড়াই উৎরাই, সংস্কৃতি কথা – সাহিত্য কথা, বিস্ময় আমি বিশ্ব বিধাত্রীর, মুক্ত করো হে বন্ধ, ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা, প্রভাত বেলার মেঘ ও রোদ, সদ সমাজ সংস্কৃতি, বিশ্ব ভরা প্রাণ, সহজ কঠিন দ্বন্দে- ছন্দে, রবীন্দ্র বিশ্বাসে মানব অভ্যুদয়, ধ্বনি থেকে কবিতা, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ, স্বদেশ সমাজ সংস্কৃতি, শান্তি নিকেতনের দিনগুলি…ইত্যাদি।
একুশে পদক প্রাপ্ত বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বাতিঘর, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রবাদ-প্রতিম শিক্ষক- বাংলা বিভাগের প্রথম “ড. আহমদ শরীফ চেয়ার” অধ্যাপক, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, রবীন্দ্র-বাণী-
ভাব-ধ্বনি-সুর-ছন্দতত্ত্বাচার্য, সত্যেন্দ্র-গবেষক, প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষক ও শিল্পী, ছায়ানট সঙ্গীত শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও নালন্দা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রবীন্দ্র-সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক
(বর্তমান সভাপতি), বাঙালির সংস্কৃতিসত্ত্বা ও সাংস্কৃতিক স্বাধিকার আন্দোলনে ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব প্রদানকারী ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছায়ানট-কর্ণধার, আমাদের মাতৃসমা শিক্ষক
প্রফেসর ড. সন্জীদা খাতুন আজ ৯০ বছরে পা রাখলেন। সঙ্গীতাঙ্গন ও সকল সঙ্গীতপ্রেমীদের পক্ষ থেকে জন্মদিনে সুস্থ ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি।