asd
Friday, December 6, 2024

আজ মাইকেল জ্যাকসন এর ৬২তম জন্মবার্ষিকী…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

মাইকেল জ্যাকসন একজন মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, গান লেখক, অভিনেতা, সমাজসেবক এবং ব্যবসায়ী। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বহুল বিক্রিত এ্যালবামের সঙ্গীত শিল্পীদের তিনি অন্যতম।
জ্যাকসন পরিবারের ৮ম সন্তান মাইকেল মাত্র ৫ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পেশাদার সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তখন জ্যাকসন ফাইভ নামের সঙ্গীত গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে গান গাইতেন। ১৯৭১ সাল থেকে মাইকেল একক শিল্পী হিসাবে গান গাইতে শুরু করেন। মাইকেলের গাওয়া ৫টি সঙ্গীত এ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে। তাকে পপ সঙ্গীতের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় অথবা, সংক্ষেপে তাঁকে এমজে নামে অভিহিত করা হয়। সঙ্গীত, নৃত্য এবং ফ্যাশন জগতসহ ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে চার দশকেরও অধিককাল ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ১৯৮০র দশকে মাইকেল সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছান। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সঙ্গীত শিল্পী যিনি এমটিভিতে এতো জনপ্রিয়তা পান। বলা হয়, তাঁর গাওয়া গানের ভিডিওর মাধ্যমেই এমটিভির প্রসার ঘটেছিলো। গানের তালে তালে মাইকেলের নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রোবোট, ও মুনওয়াক রয়েছে। মুনওয়াক আসলে হলো সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পিছনে যাবার ভঙ্গিমা। তিনি পপ সঙ্গীত এবং মিউজিক ভিডিওর ধারণা পাল্টে দেন। এখন সারাবিশ্বের সকল নৃত্যশিল্পীরা মাইকেল জ্যাকসনকে প্রায়ই শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন।

মাইকেল জ্যাকসন দু’বার রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেইমে নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনিই এই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি গান লেখক, নাচের সর্বপ্রথম আর এন বি’ হল অফ ফেইমে যায়গা করে নিয়েছেন। সঙ্গীত জগতের কেউ এত ক্যাটাগরিতে হল অফ ফেইমে নিজেকে নিতে পারেন নি। গিনেস ওয়াল্ড রেকর্ডস অনুসারে মাইকেল সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী – ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার, ১৩টি ১নম্বর একক সঙ্গীত, এবং ১০০ কোটিরও বেশি মাইকেলের এ্যালবাম বিক্রি হয়েছে এবং যা হচ্ছে।
“থ্রিলার”(১৮৮২) আজ পর্যন্ত ১১০ মিলিয়নের উপর বিক্রি হয়েছে যা সর্বোচ্চ বিক্রিত হওয়া এ্যালবাম। “ব্যাড” (১৯৮২) যেটাতে আছে বিলবোর্ড চার্টে ১ নম্বর হওয়া ৫ টি গান যা সর্বোচ্চ এবং মাইকেল জ্যাকসনের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এ্যালবামের তালিকায় ২য় এবং ৬৭ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। “ডেঞ্জারাস”(১৯৯১) যার মাধ্যমে মাইকেল “নিউ জ্যাক সুইং” নামে নতুন একটা জেনারকে পপুলার করে, এবং এটি সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হওয়া নিউ জ্যাক সুইং এ্যালাবাম, যার পরিমাণ ৩৬ মিলিয়ন কপি। “হিস্টোরি”(১৯৯৫) মাইকেলের নবম স্টুডিও এ্যালবাম এবং এই পর্যন্ত ৩৩ মিলিয়ন(৬৬ মিলিয়ন ইউনিট), যা হচ্ছে এই পর্যন্ত ২ টি ডিস্ক সমন্বিত একটি এ্যালবাম এর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এ্যালবাম। হিস্টোরি একটি বহুল আলোচিত প্রতিবাদি এ্যালবাম। তার ২ বছর পর ১৯৯৭ সালে তিনি রিলিজ করেন তার সর্বপ্রথম রিমিক্স এ্যালবাম “ব্লাড অন দা ডান্স ফ্লোর:হিস্টোরি ইন দা মিক্স” যা
এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রিত হওয়া রিমিক্স এ্যালবাম (৬ মিলিয়ন কপি)। ২০০১ সালে মাইকেল রিলিজ করে “ইনভিন্সিবল”, তার জীবনের ১০ম ও সর্বশেষ স্টুডিও এ্যালবাম। এটি থ্রিলার এর থেকেও তাড়াতাড়ি বিক্রি হচ্ছিল, কিন্তু “সনি মিউজিক ” এর সাথে ঝামেলার কারনে তারা এই এ্যালবামটি প্রোমোট করে নাই, তার পরেও এটি ১৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। এটি এই পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যায়বহুল এ্যালবাম, এই এ্যালবাম এর শুধুমাত্র রেকর্ডিং এই মাইকেল খরচ করে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপর। ২০১০ সালে বিলবোর্ড কর্তৃক একটি পোলে এই এ্যালবামটি ২০০০-২০১০ সালের মধ্যে রিলিজ পাওয়া এ্যালবাম এর সেরা এ্যালবাম নির্বাচিত হয়। জ্যাকসন হচ্ছে এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এ্যাওয়ার্ড ও নোমিনেশন পাওয়া তারকা।

এছাড়াও গিনেস বুক অফ ওয়ার্লড তাকে বিশ্বরেকর্ড এ ভুষিত করেছে বিনোদন জগতের মানুষ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দান খয়রাত করবার জন্যে, এবং তার দানকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এর বেশি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নানা কেলেঙ্কারিতে (যা পরবর্তিতে প্রত্যেকটি ভুল প্রমাণিত হয়) জড়ালেও প্রায় ৪০ বছর ধরে সারাবিশ্বে বিখ্যাত হয়ে ছিলেন এবং তিনি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গায়ক এবং নৃত্যশীল্পির সিংহাসনে বসে আছেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জুন মাইকেল জ্যাকসন মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন পরে যায়। টিএম জেড যখন তাদের ওয়েবসাইটে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তারপর তা সবজায়গায় খুবই দ্রত ছড়িয়ে পড়ে। তার মৃত্যুর ফলে পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যাবস্থা এক প্রকার ভেঙে পড়ে। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পৃথিবীর সকল অঞ্চল থেকে তার ভক্ত ও সাধারণ মানুষ গুগল এ সার্চ করা শুরু করে। “Michael Jackson” শব্দটি এত বেশি(মিলিয়ন মিলিয়ন) ইনপুট হবার কারনে তারা ভেবেই বসে ডি ডস ভাইরাস এ তাদের সার্চ ইঞ্জিন আক্রান্ত হয়েছে যার ফলে তারা প্রায় ৩০ মিনিট গুগল বন্ধ রাখে। উইকিপিডিয়াতে ১ ঘন্টার মধ্যে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ মাইকেলের বায়োগ্রাফি দেখে, আর এই চাপ উইকিপিডিয়া লোড নিতে সক্ষম না হওয়াতে ক্র্যাস করে (পরে কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের ইতিহাসে এরকম ঘটনা এই প্রথম), একিরকম ভাবে টুইটার-ও ক্র্যাস হয়,যেখানে মোট টুইটের ১৫ % মেনশন করা হচ্ছিল মাইকেল (প্রতি মিনিটে ৫০০০+ টুইট)। এছাড়াও বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে, ইন্টারনেটে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারন ইন্টারনেট ট্রাফিকের ১১% হতে তা ২০% এ উন্নিত হয়। এমটিভি ২৪ ঘন্টা ধরে তার মিউজিক ভিডিও, ডকুমেন্টারি, ভক্ত, ফ্যামিলি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার শেষ কৃত্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠান পৃথিবীর ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ সরাসরি টেলিভিশন ও অনলাইনে দেখে, যা এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ কারো কৃত্যানুষ্ঠান দেখা হয়েছে। দায়িত্বে খামখেয়ালি করার কারণে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী মার্কিন চিকিৎসক ডঃ কনরাড মারেকে ৪ বছরের জন্য কারাবাস সাজা দেয়া হয়েছিল।
আজ তার ৬২তম জন্মবার্ষিকী। সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে জানাই হাজার গোলাপ শুভেচ্ছা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles