asd
Saturday, November 23, 2024

নয়জন নারী সঙ্গীতশিল্পী ও পাঁচজন গীতিকবিকে নিয়ে-সুরকার বাপ্পা মজুমদারের পথচলা…

– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।
সারা পৃথিবীতেই সঙ্গীত কোনো না কোনোভাবে মানুষের মনে বিচরণ করে থাকে। মানুষের ক্লান্ত মনকে উজ্জ্বীবিত করতে একমাত্র সঙ্গীতই পারে। যদি ভুল না বলে থাকি, তাহলে প্রতিটি মানুষই যে কোনো সময় নিজের মনের অজান্তে গুন গুন করে থাকে। আর যদি কোনো মানুষ জন্মসূত্রেই পারিবারিকভাবে সেই সঙ্গীতের উৎস তাঁর শরীরে বহন করে থাকে তাহলে তো কথাই নেই! তাঁর ধ্যান, জ্ঞান তো সঙ্গীতকে ঘিরে প্রভাবিত হবেই। তেমনই একজন মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছি সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে। প্রথমেই জেনে নেই তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা-
যার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে তাঁর নাম শুভাশিস মজুমদার বাপ্পা। এ নামটি শুনলে হয়তো অনেকেই ভাবনায় পড়ে যাবেন (যারা তাঁকে এই নামে চেনেন, তাঁরা ছাড়া) এই ভেবে যে, উনি আবার কে ? এই নামের তো কেউ নেই সঙ্গীত ভূবনে। অথচ এই নামের যে মানুষটি সঙ্গীত জগতে দাপটের সাথে জড়িয়ে আছে সে আর কেউ নন! অসম্ভব জনপ্রিয় একজন সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার। যার পারিবারিক নাম শুভাশিস মজুমদার বাপ্পা। ওস্তাদ বারীণ মজুমদার এবং ইলা মজুমদারের ঘরে ১৯৭২ সালের ৫ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন বাপ্পা মজুমদার। তাঁর বাবা ওস্তাদ বারীণ মজুমদার ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত সঙ্গীতবিশারদ। বাবা-মা দুজনেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। একটি সঙ্গীত পরিবারের মধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে তাঁকে বাড়ির বাইরে গান শিখতে যেতে হয় নি। তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি শুরু হয় পরিবারের কাছ থেকেই। পরবর্তীকালে সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ বারীণ মজুমদারের সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মণিহার সংগীত একাডেমি’-তে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতের ওপর পাঁচ বছর মেয়াদী একটি কোর্স গ্রহণ করেন। তাছাড়া বড় ভাই পার্থ মজুমদারের কাছে খুব ছোটবেলায় গিটার বাজানো
শিখেছেন। তিনি সঙ্গীত জীবন শুরু করেন একজন গিটারবাদক হিসেবে। ১৯৯৫ সালে তিনি সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি মূলত বাংলা রোমান্টিক গানের জন্য পরিচিত। তাঁর ব্যান্ড, দলছুট। বাপ্পা মজুমদার এবং সঙ্গীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী মিলে গড়ে তোলেন এই ব্যান্ড দল। সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি নিজেই দলছুটের হাল ধরেন। বাপ্পা মজুমদার ব্যান্ড ও নিজের জন্য গান লেখার পাশাপাশি অন্য শিল্পীদের জন্যেও গান লিখেছেন। সমসাময়িক গান ও আন্তরিকতার কারণে তরুণ ভক্তদের কাছে তিনি বাপ্পা’দা নামেই অধিক পরিচিত।

জনপ্রিয় শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের প্রকাশিত এ্যালবামের মধ্যে রয়েছে-
তখন ভোর বেলা (১৯৯৫)
কোথাও কেউ নেই (১৯৯৭)
রাতের ট্রেন (১৯৯৯)
ধুলো পড়া চিঠি (২০০১)
ক’দিন পর ছুটি (২০০৩)
দিন বাড়ি যায় (২০০৫)
সূর্যস্নানে চল (২০০৮)
এক মুঠ গান (২০১০)
জানি না কোন মন্তরে (২০১৪) ইত্যাদি।
বাপ্পা মজুমদারের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- পরী, দিন বাড়ি যায়, সূর্যস্নান, বায়স্কোপ, রাতের ট্রেন, বাজি, লাভ ক্ষতি, আমার চোখের জল, ছিল গান ছিল প্রাণ, কোথাও কেউ নেই ইত্যাদি।

সম্প্রতি এই জনপ্রিয় শিল্পী বাপ্পা মজুমদার নয়জন নারী শিল্পী এবং পাঁচজন গীতিকারের বাণী নিয়ে তাঁর সুর ও সঙ্গীতে একটি গানের এ্যালবাম তৈরি করছেন। সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে এই এ্যালবাম সম্পর্কে এবং সঙ্গীতজগতের নানান বিষয় নিয়ে তাঁর সাথে কথা হয়েছে। সেই বিষয়গুলো হল-

সম্প্রতি আপনি নয়জন নারীশিল্পীদের নিয়ে একটি এ্যালবামের কাজ শুরু করেছেন তা আমরা জানি কিন্ত কি চিন্তা করে শুধুমাত্র নারীশিল্পীদের নিয়ে এই কাজটি করছেন! তা যদি বলেন-
এই এ্যালবামটি করার কারণ একদমই আমার ভালোলাগার জায়গা থেকে। আমার মনে হল এই সময় কিছু একটা করা উচিত। কারণ দীর্ঘসময় ধরে তো আমরা কোনো কাজ করতে পারছি না! পারফর্মেন্স-টারফর্মেন্স সব বন্ধ। তো সবাইকে নিয়ে একটা কিছু করা আর কি! এই ভাবনা থেকেই শুরু।

এই এ্যালবামের গানগুলি নিশ্চয়ই বিভিন্ন গীতিকার লিখেছেন ? তাঁদের নামগুলো যদি জানাতেন-
হ্যাঁ, কয়েকজন গীতিকার লিখেছেন। যারা গানগুলো লিখেছেন তাঁরা হচ্ছেন- ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়, শাহান কনন্ধ, শেখ রানা, জুলফিকার রাসেল, মারুফ হোসেন।

সুর তো আপনিই করেছেন! এই এ্যালবামের নয়জন নারীশিল্পীর নাম যদি জানাতেন-
হ্যাঁ, সুর ও সংগীত আমারই করা। আর এই এ্যালবামে শিল্পী যারা আছেন তারা হলেন- আঁখি আলমগীর, কণা, কোনাল, আলিফ আলাউদ্দিন, এলিটা, জয়িতা, টিনা রাসেল, তাশফী আর রমা রহমান।

এই এ্যালবামের সবগুলো গান কী ধরনের হবে ?-
সবগুলো গানই মেলোডিবেইসড গান। দু’একটি গান থাকছে একটু এক্সপেরিমেন্টাল। যেমন কোনাল আর এলিটারটা। এই দুটো গান খুবই এক্সপেরিমেন্টাল।

আপনি তো এই এ্যালবামের কাজ নিয়ে ব্যস্ত! এর পাশাপাশি অন্য কোনো কাজ কি করছেন ?-
এই এ্যালবামের কাজের পাশাপাশি আমার এখন ‘ভালোবাসার প্রীতিলতা’ মুভির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ চলছে এবং সেই সাথে আরেকটি মুভির কথা চলছে। সেই মুভির নাম হল- ‘যুদ্ধ জয়ের কিশোর নায়ক’।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০বছর পূর্তি পালন করা হল এবং একই সাথে সঙ্গীতজগতের ৫০বছর পূর্তি হল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। প্রশ্ন হল! আপনি সঙ্গীতজগতে ‘৯০ সাল থেকে আছেন, এই দীর্ঘসময় ধরে থাকাকালীন সঙ্গীত জগতের তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে দেখেছেন। এই পরিবর্তনটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন ?-
পরিবর্তন তো! সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। সুতরাং এটা স্বাভাবিক একটা পক্রিয়া। পরিবর্তনটাই স্বাভাবিক কিন্ত যেটা হয়েছে যেমন আগে যে ব্যাপারটা ছিল, সবাই একসাথে বসে গান তৈরি করতো মানে টিমওয়ার্ক ছিল। এই টিম ওয়ার্কটা মাঝখানে এবসেন্স হয়ে গিয়েছিল। সবাই অনেক বেশী নিজস্ব স্টুডিওতে একা একা কাজ করতো। তো সেখান থেকে একটা অন্যরকম সিচুয়েশন তৈরি হয়েছিল। এখন আবার আস্তে আস্তে ওটা ব্যাক করছে। এটা আমি মনে করি একটা পজিটিভ এ্যাপ্রোচ। সবাইকে নিয়ে কাজ করা, বিভিন্ন মিউজিশিয়ানদেরকে ইনভলভ করা, এখন এই বিষয়টা আমার মনে হচ্ছে, আমরা হয়তো আবার টিমওয়ার্কের দিকে ফিরে যাচ্ছি। সেটা কিন্তু পজিটিভ একটা এ্যাপরোচ।

আরেকটা ব্যাপার! সেটা হলো যে, আগে মানুষ যে ফিল নিয়ে গান শুনতো যেহেতু গানটা তেমন চিত্রায়িত হতো না, একমাত্র মুভি ছাড়া। তখন সবাই গানটাকে গানের মত করেই শুনতো এবং গানটাকে অন্তরের ভেতরে নিয়ে নিত। যার ফলে গানগুলো অনেকদিন দীর্ঘস্থায়ি হত। অথচ এখন অনেক গান হচ্ছে কিন্ত শোনার চেয়ে দেখার বিষয়টা বেশী হচ্ছে। ফলে সেই গানের দীর্ঘস্থায়িত্বটা থাকছে না। আপনি এই পরিবর্তনকে কিভাবে দেখছেন ?-
এখানে আমার বক্তব্য হল, এখন মিউজিক ভিডিওর ব্যাপারটা খুব কম্পালসারি হয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে, গান হলেই সেটা ভিডিও করতে হবে। এরকম একটা অদ্ভুত সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। এই বিষয়টাতে আমি পক্ষপাতি না। গান ব্যাপারটা শোনার জিনিস, এটা আমি শুনবো। গানটা শুনে আমার ভেতরে যে অনুভূতি হয় এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি। কিন্ত এটা যখন পিকচারাইজ করা হয় তখন কিন্ত এটা একটা দৃশ্যপটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। একটা আইডিয়া তখন চোখে চলে আসে। তখন একজন শ্রোতার ভাবনার জায়গাটা কমে আসে। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয়! মিউজিক ভিডিও হতে পারে তবে এটা কম্পালসারি হওয়া উচিত না। কারণ গানটা হল প্রথমত শোনার বিষয় এবং গানটা শোনার বিষয়েই থাকা উচিত, এক নাম্বার। দুই নাম্বার হচ্ছে প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। আপনার মত আমিও রেকর্ডে গান শুনেছি। তারপর ক্যাসেট আসলো, মিনি ডিক্স আসলো, লেজার ডিক্স আসলো, সিডি আসলো, ইউটিউব আসলো আরও অনেক কিছু আসলো। এখন বিষয়টা চলে গেছে পুরোপুরি ডিজিটাল প্লাটফর্মে। তো এতে করে যেটা হচ্ছে, যেহেতু সামনে অনেকগুলো অপশন! গান শুনতে গেলেই মানুষ প্রথমে ইউটিউব-এ ঢুকে যায়। সেই কারণে গানটা অনেকবেশি এভেলেবেল আর কি। আমাদের অনেকগুলো টেলিভিশন চ্যানেল আছে। আমরা হাত ঘুরালেই অসংখ্য টিভি চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি। আমরা সুইচ করতে পারছি এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে। তাতে করে যেটা হয়েছে যে, মানুষের ভেতরেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে নিঃসন্দেহে! সেক্ষেত্রে আমরা আগে যেমন ঠাণ্ডা মাথায় গান শুনতাম, সেই ব্যাপারটা এখন কমে গেছে। সেটার মূল কারণ হচ্ছে এখনকার যে ব্যস্ততা! প্রতিটি মানুষই প্রচন্ড রকম ব্যস্ত তাঁর জীবন যুদ্ধে। জীবন যুদ্ধে প্রত্যেকটি মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে। সেখানে আসলে ঠাণ্ডা মাথায় গান শোনার অবকাশও মানুষ কম পাচ্ছে, এটাও সত্যি কথা। পরিবর্তন আসলে অনেক রকমই হয়েছে। তবে আমি মনে করি প্রযুক্তির পর প্রযুক্তির পরিবর্তন হবে। গান শোনার মাধ্যম হয়তো ফিউচারে আরও অন্যকিছু হবে, সেটা কি হবে তা আমি জানি না। গানের মানটা আসলে ধরে রাখা জরুরি। আমরা যাইই করিনা কেন, সেই গানের মানটা যেন মানসম্মত হয়। এটা অত্যন্ত ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর আমার কাছে। কারণ আমরা এখন অনেককিছুই দেখছি, স্পেশালি যদি ইউটিউবে যাই বা অন্য কোনো মাধ্যমে যাই, সেখানে গানের যেভাবে পিকচারাইজেশন বা চিত্রায়িত হচ্ছে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, সেটা গানের সাথেও যায় না। আমার কাছে মনে হয় এই কনসেপশন গুলোর পরিবর্তন দরকার।

গুরু শিক্ষার ব্যাপারটি আপনি কি মনে করেন ?-
অত্যন্ত জরুরী! আমি বলবো অত্যন্ত জরুরী। এখন কেউ শিখতে চায় না। হঠাৎ করে শিল্পী হতে চায়। কঠিন পথটা পাড়ি দিতে চায় না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আপনি বলেছেন। গুরুর কাছে শেখাটা অত্যন্ত জরুরী তারপরেও আমরা কেন যে শিখতে চাই না, তা আমি জানি না! আমার মনে হয় একমাত্র বাংলাদেশেই এই সমস্যাটা দেখা যায় যে, শিখতে চায় না কেউ। আপনি যদি যান দেখবেন, প্রত্যেকটি দেশে সেখানে শেখার একটা বা চর্চার একটা জায়গা আছে। সেই জায়গাটা আনফরচুনেটলি বাংলাদেশে খুবই কম। তাই আমি বলবো গুরু শিক্ষাটা খুবই জরুরী।

আপনার এরকম কী কোনো পরিকল্পনা আছে সঙ্গীত নিয়ে যে, সঙ্গীত বিষয়ক কোনো স্কুল দিবেন বা এই বিষয় নিয়ে অন্য কোনো কাজ করবেন!-
আসলে আমার সংগীত বিষয় নিয়ে একটি স্কুল করার ইচ্ছে আছে। তবে আমার ইচ্ছে আছে স্কুল করার কিন্ত সেটা একদমই বাচ্চা বা শিশুদের জন্য। যেন ছোটবেলা থেকেই গান শিখে বড় হয় ওরা। তারপর বড় হলে সে গান করবে কি করবে না, সেটা তার নিজের ব্যাপার। কিন্ত আমি চাই সে যেন গানটা শিখে। এরকম আমার ইচ্ছা আছে। তবে যদি কখনো সুযোগ হয় এবং ক্ষমতা হয় তখন আমার স্কুল করার ইচ্ছেটা হয়তো পূর্ণ হবে। এটাই আমার পরিকল্পনা, বলতে পারেন।

আপনার তো কিউট একটা ছোট্ট মেয়ে আছে! আপনি কী মেয়েকে সঙ্গীতশিল্পী বানাতে চান ? না অন্য কিছু-
হা, হা, হা- না, না! বাঁধা ধরা কিছুই নাই। আসলে ওর যা ইচ্ছে হবে ও তাইই হবে। ও যদি গান করতে চায় তাহলে গান করবে, না করতে চাইলে করবে না। এখানে কোনো চাপাচাপি নাই। ও যেটা হতে চায়, সেটাই হবে।

আপনি কোনটায় বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, গান গাইতে নাহ! মিউজিক করতে ?-
আমার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ দুই জায়গাতেই! গান করতে এবং গান বানাতে। মানে দুটো মিলেই আমি।

আরেকটি বিষয়! নতুন যারা আসছেন বা নতুন যারা কাজ করছেন, দেখা যাচ্ছে তারা ফিউশন করতে যেয়ে গানটাকে গুলিয়ে ফেলছেন! যেমন ধরেন, বিদেশী সুর নিয়ে এবং কারো কথা নিয়ে তারা ফিউশন তৈরি করছেন। এমনকি অনেক সময় দেখা গেছে নজরুল, রবীন্দ্রনাথের গান নিয়েও কাজ করছেন কিন্ত আমরা জানি যে, নজরুল রবীন্দ্রনাথের গানের ধারাটা আলাদা এবং তাঁদের গানের নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য আছে!-
এখানে আমি আপনার সাথে দ্বিমতপোষণ করছি কারণ আমার মনে হয়। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তাঁরাও কিন্ত চাইতেন যে, আধুনিক আয়োজনে গান করতে।

যদি এভাবে বলি, নজরুল রবীন্দ্রনাথ তাঁরাও কিন্ত ফিউশন করেছেন! কিন্ত তাঁরা বাংলাটাকে বাংলাই রেখেছেন। তাঁদের গান শুনে কিন্ত আপনি বলতে পারবেন না যে, তাঁরা ওখান থেকে সুর নিয়েছেন বা ঐ গানটি থেকে সুর নিয়েছেন। অথচ এখন ফিউশন করতে গেলে দেখা যায় যে, বাংলা গানটাই ওয়েস্টার্ন এর মত হয়ে যাচ্ছে। বাংলা গানের যে ঐতিহ্য! সেই জিনিসটাই কেউ ফলো করছে না। আমি এই কথাটাই বলতে চাইছি।-
হুম! তা ঠিক। আমার বক্তব্য হচ্ছে, ফিউশন করা যেতেই পারে তবে ফিউশন করাটা একটা ক্রিটিকাল ব্যাপার। ফিউশন করা কিন্ত সহজ ব্যাপার বলে আমার মনে হয় না। কারণ ফিউশন করতে গেলে, আমি যে দুটো জিনিসকে ফিউশন করবো বা তিনটি জিনিসকে নিয়ে কাজ করবো! সেগুলোর সম্পর্কে আমার ভাল ধারণা থাকতে হবে। আমি যদি লোকো সংগীতের সাথে রবিন্দ্রনাথের গানের ফিইউশন করতে চাই বা ওয়েস্টার্ন গানের সাথে নজরুলের গানের ফিউশন করতে চাই তাহলে আমার দুটো দিকই ভালোভাবে জানার দরকার আছে। আদারওয়াইজ ফিউশন করা ঠিক হবে না।

তারমানে ওটার ওপর অনেক জ্ঞান থাকতে হবে, তাই নাহ!-
হ্যাঁ, অবশ্যই পুরোপুরি জ্ঞান থাকতে হবে।

সঙ্গীত জগতে আপনার এই দীর্ঘ পথচলায়, আপনার প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি কি ছিল যদি জানাতেন!-
আমার প্রাপ্তি অনেক। আমার সঙ্গীতের এই ছোট্ট জীবনে অনেক প্রাপ্তি। আমি তাই অনেক খুশী। আমি এত মানুষের ভালোবাসা পাই, এত মানুষের শ্রদ্ধা পাই। এটা আমার জীবনে আসলে অনেক বড় প্রাপ্তি। একটা মানুষের এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না।

আর কোনো আক্ষেপ বা অপ্রাপ্তি ?-
আমার ব্যক্তিগত কোনো আক্ষেপ নাই তবে আমার একটাই আক্ষেপ! সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে এখনো সঙ্গীতটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত না। বাংলাদেশের সঙ্গীতের সাথে সম্পৃক্ত মানুষ যারা আছেন, তাঁদেরকে সেই স্বীকৃতিটা দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশে কিন্ত মিউজিক, প্রফেশন হিসেবে এখনো স্বীকৃত প্রফেশন না। আমরা করছি একটা চেলেঞ্জ নিয়ে। কিন্ত এটা এখনো একটা পেশাদারি জায়গায় যাওয়ার মত যথেষ্ট রিসোর্স আছে আমাদের। আমরা যারা কাজ করছি তারা তো পেশাদারি হিসেবেই কাজ করছি। তাই সেখান থেকেই আমরা বুঝতে পারছি যে, আসলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সেই স্বীকৃতিটা আসে নাই। সেটা খুব দরকার!

আক্ষেপটা তো জানা গেল! তাহলে তো আপনার অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই।–
আমার প্রাপ্তির পাল্লা অনেক ভারী, তাই অপ্রাপ্তি বলতে কিছুই নেই। আমার এই প্রাপ্তিতে আমি অনেক অনেক সেটিস্ফাইড। আবারও বলছি, আমি অনেক খুশী। আমি অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এবং এখনও পাই। বহু মানুষ আমাকে দেখলে তাদের ভালোবাসা জানায়, শুভেচ্ছা জানায়, শ্রদ্ধা জানায়। এটা আসলে পৃথিবীতে ক’জন পায়, বলেন ? তাই না! হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার মালিকও যারা, তারাও এই সম্মানটা পায় না।

সেটাই! আপনার ভেতরে সে যোগ্যতা আছে বলেই আপনি তা সবার কাছ থেকে পাচ্ছেন। সবার তো সব যোগ্যতা থাকে না। আপনিও আপনার ভক্ত শ্রোতাদের কিছু দিচ্ছেন বলেই আপনি তা পাচ্ছেন। আপনি কিছু না দিলেতো শুধু শুধু কেউ আপনাকে ভালোবাসবে না! পছন্দ করবে না। আপনি যে রকম সুন্দর সুন্দর গান দিচ্ছেন, মিউজিক দিচ্ছেন, যার জন্য ঐ গান এবং মিউজিকের কারণেই তারা আপনাকে ভালোবাসছেন এবং পছন্দ করছেন। একজন সঙ্গীতশিল্পীকে দেখে না! সঙ্গীতশিল্পীর গানশুনেই কিন্ত সবাই তাঁকে ভালোবাসে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ।

ভাইয়া, সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রতি রইল শুভকামনা এবং পিচ্চির জন্য রইল আদর। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অনেক ধন্যবাদ। সঙ্গীতাঙ্গন এবং আপনার প্রতিও শুভকামনা রইল।

ছবি – বায়েজিদ ওয়াহিদ (বাপ্পা মজুমদার)।
অলংকরন – মাসরিফ।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles