Sunday, April 21, 2024

অস্তিত্ব তৈরি করতে গেলে, মৌলিক গানের কোনো বিকল্প নাই!- সঙ্গীতশিল্পী পলাশ লোহ…

– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।

পৃথিবীতে যখন কোনো মানুষ জন্ম নেয় তখন থেকেই মা বাবা চিন্তা করে রাখেন আমার সন্তান বড় হয়ে এই হবে সেই হবে অথবা তাঁকে এটা বানাবো ওটা বানাবো। তখন কিন্ত সন্তানের যে নিজস্ব প্রতিভা থাকে তা মা বাবার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ধামাচাপা পড়ে যায়। অথচ সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে যার সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তাঁর বহুমুখী প্রতিভা! যে প্রতিভার বিকাশ সে মিডিয়া জগত থেকে শুরু করে মিডিয়ার বাইরেও ছড়িয়ে যাচ্ছেন। বলছিলাম বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী পলাশ লোহ-এর কথা। যে কিনা পারিবারিকভাবে শিল্পীর তিনটি ক্ষেত্র যেমন- সঙ্গীত শিল্পী, অভিনয় শিল্পী এবং চিত্রশিল্পী এই তিনটি ক্ষেত্রই নিজের ভেতর ধারণ করে চলেছেন। কিভাবে তিনি এলেন এই তিনটি ক্ষেত্রে তা আমরা তাঁর সাথে আলাপচারিতায় জেনে নেই এবং সেই সাথে থাকবে ঈদের আমেজ-

প্রথমেই জেনে নেই এবার ঈদে আপনার কি কি কাজ হয়েছে-
এই ঈদে বেশ কিছু কাজ করেছি। বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘রঙের বাজার’ এর ঈদ স্পেশাল-এ গাইলাম। গীতিকবি হাসান মতিউর রহমানের কথা, সুর ও সংগীতে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়েছে। ঈদের পরের দিন বিটিভিতে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়েছে। ‘মাই টিভি’র ঈদ স্পেশাল অনুষ্ঠান ‘কমেডি ফান শো’তে অংশ নিয়েছি। আনন্দমূলক এই অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন আলী আহসান লিটন। ‘এন টিভি’র মৌলিক গানের অনুষ্ঠান ‘গাইব গান আমিও’-তে অংশগ্রহণ করেছি আমার গাওয়া ও সুর করা তিনটি মৌলিক গান নিয়ে।
এছাড়াও আমার গাওয়া বেশ কয়েকটি গান বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে রিলিজ হবে ঈদে। ‘পিরিত ভালা না’ শিরোনামে গানটি আসবে ‘বাংলা মিউজিক ফেয়ার’ চ্যানেল থেকে। গানটি লিখেছেন গীতিকবি এইচ এম ইসমাইল, কম্পোজিশন করেছেন এইচ আর লিটন এবং সুর করেছি আমি, গেয়েছিও আমি। ‘এলএম মিউজিক ষ্টেশন’ থেকে আসবে আরেকটি আধুনিক ধাঁচের গান। এ গানের সুর করেছি এবং গেয়েছি আমি। কম্পোজিশন করেছেন, এইচ আর লিটন।
এবার ঈদে শুধু একটিমাত্র নাটকেই অভিনয় করেছি। নাটকটির নাম ‘অন্য এক প্রেম’। রচনা ও পরিচালনা করেছেন, সোহেল আরমান। অভিনয়ে ছিলাম আমি সহ অপূর্ব, মেহজাবিন, মামুনুর রশীদ প্রমুখ।

আপনি যে সংগীত জগতে এসেছেন! সেটা কি পারিবারিকভাবে এসেছেন, নাকি অন্য কারো অনুপ্রেরণায় এসেছেন-
আমি মূলত ছোটবেলা থেকেই গান শিখতাম। আমার এলাকা হচ্ছে ময়মসিংহ-এর গফরগাঁও। ওখানেই আমার ফুফু সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন, ওনার কাছ থেকেই আমার অনুপ্রেরণা পাওয়া। তারপর ম্যাট্রিক পরীক্ষা যখন দিলাম তখন তো পরীক্ষার পর দুই/তিন মাস পড়ালেখার গ্যাপ থাকে। তখন চিন্তা করলাম ঐ সময়টা কি করব ? তখন গান শেখা শুরু করলাম। তখন ওস্তাদজী বাসায় গিয়ে গান শেখাত। ওস্তদজীর নাম ছিল রাম নাথ ঠাকুর। ওস্তাদজীর কাছে বেশ কয়েক বছর গান শিখে তারপর ঢাকায় চলে আসলাম ২০০৫-এ। ঢাকায় এসে জনপ্রিয় শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী’র কাছে গান শেখা শুরু করলাম। উনার কাছে প্রায় সাত বছর শিখেছি। তারপর রেডিও ও বিটিভিতে অডিশন দিয়ে তালিকাভুক্ত শিল্পী হয়েছি। এদিকে জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু করে শিল্পকলা এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে মোটামুটি পারফর্ম করা শুরু করি। এরই মধ্যে পরিচয় হয় শিল্পী হায়দার হোসেন-এর সাথে ২০১৪ সালে। উনি একজন কাওয়ালী কিং বলা চলে। উনার সাথে কাওয়ালী গাইতে শুরু করলাম বিটিভিতে। তাছাড়া উনার সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাওয়ালীতে অংশগ্রহণ করেছি। একটা সময় উনার কাছ থেকে কাওয়ালী শিখলাম ভালোভাবে। বলতে পারেন, ভিন্ন ধারার একটি সংগীতে চলে গেলাম। তারপর ২০১৫ সালে পরিচয় হয় জনপ্রিয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাসু দেব ঘোষ এর সাথে। তারপর উনার সাথে পরিচয় হওয়ার পর প্রফেশনালভাবে গাওয়া শুরু করি। বিভিন্ন এ্যালবামে উনার সাথে আমার মৌলিক গানের এ্যালবাম প্রকাশ করি। আমার প্রায় ৭০টি মৌলিক গান রিলিজ হয় ইউটিউব-এ এর মধ্যে প্রায় সব গান ভিডিও হয়েছে আর অল্প কিছু গান লিরিকেল ভিডিও হয়েছে।

আপনি তাহলে সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বসু দেব-এর সাথে কয়টি গান করেছেন-
উনার সাথে প্রায় ২০টি গান করেছি। উনার সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় এবং বিভিন্ন গীতিকারের কথায়।

আপনার গানগুলি যে লেবেল বা মিউজিক কোম্পানি থেকে বের হয়েছে তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য লেবেলে বা মিউজিক কোম্পানির নাম বললে ভাল হয়-
তারমধ্যে জি সিরিজ থেকে সোলো এবং ছয় জনের একটা মিক্সড এ্যালবাম হয়েছে। আর লেজার ভিশন থেকে বাবা দিবসে দশ জন শিল্পী মিলে একটি মিক্সড এ্যালবাম করেছি। তাছাড়া নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল হয়েছে। ঐ চ্যানেলে আমি ৩০টি গান গেয়েছি এবং বাংলা মিউজিক ফেয়ার নামে একটি চ্যানেল আছে, ঐ চ্যানেল শুরু হয়েছে আমার গান দিয়ে।

আপনি তো অভিনয়ের সাথেও যুক্ত আছেন!-
হ্যাঁ, আমি প্রথমে মঞ্চ থিয়েটারে অভিনয় করেছি প্রায় ১২বছর।

কোন থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলেন-
আমাদের থিয়েটারের নাম ‘দেশ বাংলা থিয়েটার, ঢাকা’। এখানে ১২ বছর কাজ করেছি। তারপর আস্তে আস্তে টিভি নাটকে কাজ শুরু করি। ২০১০ সালে শুরু করেছিলাম তবে তখন এত কন্টিনিউ ছিলাম না। ২০১৪ সাল থেকে কন্টিনিউ কাজ করছি। তারপর থেকে অনেকগুলো সিঙ্গেল নাটক করেছি এবং বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য টিভি সিরিয়ালেও কাজ করেছি।

আপনার ইন্টারেস্ট তো দু’টো ধারাতে দেখা যাছে, একটা গান আরেকটা নাটক!-
আরেকটা আছে।
আরেকটা কি আছে-
আরেকটা আমি চারুকলায় অনার্স মাস্টার্স করেছি। আমার পড়াশুনা ওখান থেকেই।

চারুকলা! ভালো তো। এখন কি এই বিষয়ের ওপর কোনো জবে আছেন-
না, কোনো জবে নেই। আমি ফ্রিলেন্স আর্টিস্ট।

চারুকলায় আপনি কোন বিষয়ের ওপর পরাশুনা করেছেন-
ড্রইং এন্ড পেইন্টিং।

অভিনন্দন! আপনি তিনটি ধারায় আছেন তাই না! সংগীত, অভিনয় এবং ছবি আঁকা। এই তিনটি ক্ষেত্রে আপনার দুর্বলতাটি কোথায়-
এটা আসলে স্পেসিফিক কিছু বলা যাবে না। কারণ যার তিনটি সন্তান! সে কাকে ছেড়ে কাকে রাখবে ? এই তিনটি ক্ষেত্রই আমার সন্তানের মত। তাই আলাদা করে কিছু ভাবা যায় না।

এই যে আপনি এখন একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী! আপনার কি শিল্পী হওয়া ছাড়া অন্য কোনো স্বপ্ন ছিল-
না, এমন কোনো স্বপ্ন ছিল না। কারণ ছেলেবেলা থেকেই গান করতাম আর ছবি আঁকতাম। ২০০৫-এ যখন ঢাকায় আসলাম তখন থেকেই থিয়েটারের সাথে যুক্ত হলাম এবং বলতে পারেন অভিনয়ের প্রতি হঠাৎ করেই দুর্বলতা আসে। এর আগ পর্যন্ত ছবি আঁকা আর গানের প্রতিই বেশি দুর্বলতা ছিল।

আপনার পরিবারে এমন কেউ কি আছেন যে, গান করেন, ছবি আঁকেন এবং অভিনয় করেন-
হ্যাঁ, আমার মা ছাড়া আমার পরিবারের প্রায় সবাই সংস্কৃতির সাথে যুক্ত। আমার বাবা হচ্ছেন মঞ্চ অভিনেতা। উনি মঞ্চে যাত্রাপালা করতেন। আমার বাবার বাবা মানে আমার দাদা ছিলেন চিত্রশিল্পী। উনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ছাত্র ছিলেন।

আপনার দাদার নাম-
আমার দাদার নাম সত্য রঞ্জন লোহ। আমার আরেকজন দাদা ছিলেন মানে দাদার ছোট ভাই, আশিষ কুমার লোহ। উনি চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। আর আমার ফুফু ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী। যদিও কোনো লাইমলাইটে আসে নাই। উনি নিভৃতচারী শিল্পী ছিলেন।

আপনি কি ঢাকায় থাকেন, নাহ! ময়মনসিং-এ-
নাহ!আমি ঢাকায় থাকি, মালিবাগে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে। বলতে পারেন, যৌথ পরিবার।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি কিছু আছে-
পরিকল্পনা যেটা আছে, যেহেতু সংস্কৃতির তিনটি বিষয়ে জেনে শুনে আসা। অনেকেই তো শখ করে আসে কিন্ত আমাকে তো শিখে আসতে হয়েছে। গানটা অনেক বছর! প্রায় ১৪বছর ক্লাসিকেল শিখে তারপর গান গাইতে আসা। অনেক বড় বড় শিল্পীদের কাছে গান শেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন- ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, হায়দার হোসেন, বাসু দেব ঘোষ। যাঁদের কাছে আমি তালিম নিয়েছি। তাছাড়া শিল্পকলার বিভিন্ন ওয়ার্কশপে বা কর্মশালায় (একমাস বা ১৫দিন ব্যাপী) অংশগ্রহণ করার সময় ওখানে বিশিষ্ট জনদের কাছে শেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন- মোস্তফা জামান আব্বাসী, মীনা বড়ুয়া, নাদীরা বেগম প্রমুখ। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল, যেহেতু ক্লাসিক ধারা নিয়ে ছোটবেলা থেকে চর্চা করেছি তাই ক্লাসিক গান করে যেতে চাই এবং এখনো তাই-ই করছি। আমি গানের লিরিকের ওপর খুব চুজি। অনেক গানের লিরিক এবং অনেক স্ক্রিপ্ট আসে নাটকের জন্য, তবে আমি যেটা ক্লাসিক সেগুলোই করছি। আমার ক্ষেত্রে গান হোক নাটক হোক! ক্লাসিক হতে হবে। ছবি আঁকি যেহেতু, তাই ছবির মধ্যেই আমি আমার দেশটাকে উপস্থাপন করতে চাই।

আপনি কি কভার সং-এর প্রতি ইন্টারেস্ট! নাকি মৌলিক গানের প্রতি-
না, না, আমি কভার সং তেমন একটা গাই না। একমাত্র টিভি চ্যানেলে যখন কভার সং-এর প্রোগ্রাম থাকে তখন করতে হয়। তাছাড়া আমি সবসময়ই মৌলিক গান করছি। আমি মনে করি, নিজের অস্তিত্ব তৈরি করতে গেলে! নিজের মৌলিক গানের কোনো বিকল্প নাই। তাই আমি নিয়মিত মৌলিক গানই করে যাচ্ছি।

আজ সঙ্গীতাঙ্গন এর ঈদের আনন্দ মেলার গানের অনুষ্ঠানে রাত ৯টায় তার সরাসরি লাইভ দেখতে চোখ রাখুন এই প্রতিবেদনে অথবা ভিজিট করুন সঙ্গীতাঙ্গন ফেইসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলে।
সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা ও শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং সাবধানে থাকুন পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
সঙ্গীতাঙ্গন এবং আপনার প্রতিও রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

Related Articles

1 Comment

  1. এ তো আমাদের ত্রিফল ছেলে। অলরাউন্ডার। আমি দেখতে পাচ্ছি,ওর ভবিষ্যত উজ্জ্বল। কর্মে একদিন দেশ মাতাবে। দিনে দিনে ছাড়িয়ে যাবে নিজেকে। হবে শুরু। অনেক দূর যাবে পলাশ লৌহ। তাঁর জন্য নিরন্তর শুভকামনা।

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles