– সরদার জিল্লুর রহমান।
জনপ্রিয় আধুনিক কবি কাদের নেওয়াজ বলেন –
“মা কথাটি অতি ছোট কিন্তু যেন ভাই
মায়ের চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভূবনে নাই।”
যদি ও মাকে ভালবাসতে বিশেষ কোন দিনের প্রয়োজন হয় না।
মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়, ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ৮মে মার্কিন কংগ্রেস। আনা মেরি জার্ভিসকে মা দিবসের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।
সন্তান হয়তো মায়ের সাথে কখনও বিরূপ আচরণ করে, জাগতিক টানে মায়ের অবদান ভুলে যায়, কিন্তু মা ঠিকই তাদের আগলে ধরেন। পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তের মানুষের আচার-আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হয় কিন্তু সন্তানের সাথে মায়ের যে সম্পর্ক পৃথিবীর সব প্রান্তে একই রকম,মায়ের কোনো পরিবর্তন নেই। যে বৃত্তে বন্দী প্রায় প্রতিটি প্রানী শুধু মানুষ বললে ভুল হবে প্রায় প্রতিটি জীবই মাতৃত্বের এই গোলক ধাধার কাছে হার মানতে হয়েছে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,
“চিড়া বল পিঠা বল ভাতের সমান নাই,
মাসী বল পিসি বল মায়ের সমান নাই।”
মা দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে, মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা সম্মান করে। মা দিবস আসলে বাংলাদেশী শিল্পীরা ‘মা’ নিয়ে গান করায় ব্যস্ত থাকে। মায়ের পায়েতে স্বর্গ আছে স্বর্গ খুঁজিনা তাই অন্যখানে। জীবনের সবখানে, সব গানে মাকে ছাড়া জীবনের নেই মানে। মাকে নিয়ে অনেক গান, কবিতা,উপন্যাস, ছবি, গল্প কাহিনী, রচিত হয়েছে।
যে গানের কথা ও সুরে মুগ্ধ আমরা।
যে গান এর কারণে অনেক শিল্পীর জনপ্রিয়তা তৈরী হয়েছে, এবং এ্যালবাম হিট করেছে।
মাকে নিয়ে সকল গানের মাঝেই আলাদা দরদ এবং শ্রুতি আছে। মায়ের গানে সবারই মন ভরে যায়। মায়ের গানের সুরে তৃপ্ত হয় অন্তর।
বাংলাদেশের চারণ কবি শ্রদ্ধেয় ফকির আলমগীর জনপ্রিয় একটি মায়ের গান। গেয়েছিলেন – মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম। পাপোষ বানাইয়া দিলে ঋণ শোধ হবে না। গানটি এক অবিস্মরণীয় মায়ের গান।
প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর গাওয়া ‘কতদিন দেহিনা মায়ের মুখ’। গানটি শুনলে মা ও মাটির কথা মনে পড়ে জায়। প্রিন্স মাহমুদ এর লেখা জেমসের মা নিয়ে সেই জনপ্রিয় গানটি। “দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ” গানটি সমকালকে জয় করে বাংলা গানের ইতিহাসে অলিখিতভাবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে ‘এখনো দুচোখে বন্যা’ নামের এ্যালবামটি শুধু এই একটি গানের জন্যই সুপার ডুপার হিট করে। প্রিন্স মাহমুদ এমনভাবে লিখেছেন যারা মা হারিয়েছে, তারা বলতে পারবে এই গানের আসল অর্থ। রকস্টার আইয়ুব বাচ্চুর ‘আম্মাজান’ গানটি সময়ের জনপ্রিয় গান। স্বনামখ্যাত গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ এর ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত’।
‘ওই আকাশের তারায় তারায়’ শিল্পী: রাশেদ জামান সুর: শওকত আলী ইমন, কথা: আসিফ ইকবালের, মায়ের প্রতি অন্যরকম এক ভালো লাগা তৈরী করে দেয় গানটি। ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো’ – শিল্পী ও সুর: হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এই গানটিতে প্রকৃত মায়ের চেহেরা তুলে ধরেছেন। ১৯৫৭ সালে উত্তম কুমার অভিনীত ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ নামের ছবিতে প্রথম ব্যবহার করা হয় এই গানটি। মধুর আমার মায়ের হাসি – সুর: সুধীর লাল চক্রবর্তী কথা:প্রণব রায়। মধুর আমার মায়ের হাসি/চাঁদের মুখে ঝরে/মাকে মনে পড়ে আমার/মাকে মনে পড়ে গানটি বাংলায় বহু শিল্পী গেয়েছেন।
শ্রদ্ধেয় খুরশিদ আলম এর ‘মাগো মা, ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা’ গানটির জন্য তিনি বিখ্যাত। অনেক জনপ্রিয় একটি গান। শ্রদ্ধেয় সৈয়দ আব্দুল হাই আল হাদীর গাওয়া ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, মাকে নিয়ে অসাধারণ একটি গান। গানটির জন্য তিনি অনেক সাড়া পেয়েছেন। ফোক সম্রাট মমতাজকে উনার সঙ্গীত জীবনের সফলতা এনে দিয়েছেন ‘মায়ের কান্দন’ গানটি। ফেরদৌস ওয়াহিদ এর গাওয়া ‘এমন একটা মা দেনা’।
আসিফ আকবর তার ‘মা জননী’। প্রখ্যাত গায়ক মনির খান ‘শুধু মা নেই’। জনপ্রিয় গায়ক পলাশ এর গাওয়া ‘মা তুমি আমার আগে যেওনা গো মরে’। সকলের পছন্দের মত একটি গান। স্বনামখ্যাত গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ এর ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত’।
মাকে নিয়ে ফকির লালন শাহ থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের শিল্পীরা ‘মা’ শিরোনামে অসংখ্য গান লিখেছেন।
পৃথিবীতে মাকে নিয়ে গাওয়া গানের সংখ্যা অসংখ্য বাংলাতে ও কোন অংশে কম হয়নি।
এই গান গুলো সমৃদ্ধশালী করেছে সুরের ভুবনকে। মাকে নিয়ে এই গান গুলো কখন ও পুরাতন হবে না এবং হারিয়ে ও যাবে না। এই গান গুলো বেঁচে থাকবে মানুষের মাঝে যুগ থেকে যুগান্তরে। মায়ের প্রতি সন্তানের হৃদয়ের যে আকুতি, এবং একই সাথে মায়ের সারল্য অসাধারণভাবে শব্দে, বাক্যে গেঁথে দিয়েছেন গীতিকার ও সুরকার।
এই মা দিবস উপলক্ষে আমরা হতে পারি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা হবো আদর্শ সন্তান, শুদ্ধ মানুষ।
মায়ের হাসিমাখা মুখ দেখে প্রতিটি মুহূর্ত অতিক্রম করি, মায়ের আশীর্বাদে ধন্য হয়ে।
ঠিক তেমনি করে ‘মা’কে পরম শ্রদ্ধায়, পরম মমতায়, পরম সম্মানে এবং পরম শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস নিতে সহায়তা করবো। এই শপথ হোক আমাদের বেঁচে থাকার উজ্জীবনী শক্তি।