Saturday, April 20, 2024

বিশিষ্ট সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ চলে গেলেন না ফেরার দেশে! শোকাহত সঙ্গীতাঙ্গন…

– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।

বিশিষ্ট সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় ফরিদ আহমেদ একটানা ২০দিন করোনার সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে যাত্রা করলেন, আজ সকাল সোয়া নয়টার দিকে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক ফরিদ আহমেদ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে, কয়েকদিন ধরেই গায়ে জ্বর অনুভব করছিলেন। এমন কি! খাবারের স্বাদ বা গন্ধ কিছুই পাচ্ছিলেন না। তিনবার করোনার পরীক্ষা করানো হয়। প্রথম দুই দফায় নেগেটিভ এলেও তৃতীয়বারে কোভিট-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। তাছাড়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই তাঁর শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছিল। সুরকার ফরিদ আহমেদের পরিবারে তাঁর মা সহ ছয়জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ছিল। অন্যান্যরা সুস্থ হয়ে গেলেও তিনি অনবরত যুদ্ধ করছিলেন করোনা ভাইরাসের সাথে। যার ফলে তাঁকে ১১ এপ্রিল রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আইসিউতে ভর্তি করা হয়।
গতকালকে (সোমবার,১২/০৪/২০২১)সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে ভাবীর (শ্রদ্ধেয় ফরিদ আহমেদ-এর স্ত্রী) সাথে কথা বলার সময়ই বুঝতে পেরেছিলাম, ভাবী গতকাল ডাক্তারের কল পেয়ে এবং ফরিদ ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি জানতে পেরে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন এবং সেজন্যে সবাইকে বার বার দোয়া করতে বলছিলেন। আমি তাঁর অবস্থা বুঝতে পেরে বৃথাই সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছিলাম! কেন না, ভাবী বলেছিলেন যে, তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না এবং লাইভ সাপোর্টে আছেন। তাছাড়া ডাক্তার জানিয়েছেন ক্রিটিনিন বেড়ে গিয়েছে এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন অনেক কমে গেছে। ফুসফুসের কার্যকারিতার কোনো উন্নতি হয় নাই। দোয়া করি আল্লাহ্‌ রাব্বুল-আল-আমিন তাঁকে জান্নাতবাসী করুন, আমীন।

বিশিষ্ট সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক, ফরিদ আহমেদ অনেক কালজয়ী গানের সুরকার। স্কুলবন্ধু বায়েজীদের কাছে তাঁর গীটারে হাতেখড়ি। এরপর ফিরোজ সাঁইের হাত ধরে তাঁর পেশাদার সঙ্গীতাঙ্গনে পথচলা। ব্যান্ড ‘স্পন্দন’ -এ তিনি গীটার বাজাতেন। ফিরোজ সাঁই ব্যান্ড ‘স্পন্দন’ ছেড়ে দিলেও তার সঙ্গে তিনি গীটার বাজাতেন। লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ও কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া গান ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’ গানে সুর করে প্রশংসিত হন সুরকার ফরিদ আহমেদ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বহু জনপ্রিয় গানের সুর করেছেন তিনি এবং বহু সঙ্গীতায়োজনও করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয় হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদির’ -টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি চুপি’। কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘মনেরই রাগ অনুরাগ’, ‘আমি তোরই সাথে ভাসতে পারি মরণ খেয়ায় একসাথে’, রুনা লায়লার গাওয়া ‘ফেরারী সাইরেন’, রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে, ‘দলছুট
প্রজাপতি’, চ্যানেল আইয়ের ‘আজ জন্মদিন’, ‘খুদে গানরাজ’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’, সেরাকণ্ঠ প্রতিযোগীতার থিম সং, সুমী শবনমের জনপ্রিয় গান, ‘ললিতা’, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে সিনেমার গান, ‘তুমি আমার জীবনের গহিনে’ সহ আরও অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকার তিনি। নূর হোসেন বলাইয়ের ‘নিস্পত্তি’ চলচ্চিত্রের প্রথম সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ফরিদ আহমেদ। ২০১৭ সালে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘তুমি রবে নীরবে’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনা করে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই সিনেমার পরিচালক ছিলেন মাহবুবা ইসলাম। এই সিনেমার আবহ সঙ্গীতের কাজও ফরিদ আহমেদ নিজেই করেন।

দেশের সঙ্গীত জগত ও সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে তাঁর বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করছি। আল্লাহ্ তাঁকে বেহেস্থ নসীব করুক। আমীন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles