– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
রেশ ফাউন্ডেশন-এর একজন পরিচালক জামাল উদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে কল করে জানা গেল যে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার ফরিদ আহমেদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আছেন। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক! তাঁর ৬০% ফুসফুস অকেজো হয়ে গেছে এবং অক্সিজেন লেভেল বাড়ছে না। ৫লিটার অক্সিজেন দরকার সেখানে তাঁকে ১৫ লিটার হাইস্পিড অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে তবুও স্যাচুরেশন ৯১/৯২ মাঝে মাঝে ৮৭ হয়ে যাচ্ছে। যেখানে মিনিমাম ৯৮ দরকার।
সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক ফরিদ আহমেদ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে, কয়েকদিন ধরেই গায়ে জ্বর অনুভব করছিলেন। এমন কি! খাবারের স্বাদ বা গন্ধ কিছুই পাচ্ছিলেন না। তিনবার করোনার পরীক্ষা করানো হয়। প্রথম দুই দফায় নেগেটিভ এলেও তৃতীয়বারে কোভিট-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। তাছাড়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই তাঁর শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে। সুরকার ফরিদ আহমেদের পরিবারে তাঁর মা সহ ছয়জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী শিউলি আক্তার ফরিদ আহমেদের দেখাশোনা করছেন। তিনিও তিন সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তবে করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ না এলেও তাঁর শরীরে অন্য কোনও জটিলতা নেই।
ফরিদ আহমেদ অনেক কালজয়ী গানের সুরকার। স্কুলবন্ধু বায়েজীদের কাছে তাঁর গীটারে হাতেখড়ি। এরপর ফিরোজ সাঁইের হাত ধরে তাঁর পেশাদার সঙ্গীতাঙ্গনে পথচলা। ব্যান্ড ‘স্পন্দন’ -এ তিনি গীটার বাজাতেন। ফিরোজ সাঁই ব্যান্ড ‘স্পন্দন’ ছেড়ে দিলেও তার সঙ্গে তিনি গীটার বাজাতেন। লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ও কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া গান ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’ গানে সুর করে প্রশংসিত হন সুরকার ফরিদ আহমেদ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বহু জনপ্রিয় গানের সুর করেছেন তিনি এবং বহু সঙ্গীতায়োজনও করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয় হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’র -টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি চুপি’। কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘মনেরই রাগ অনুরাগ’, আমি তোরই সাথে ভাসতে পারি মরণ খেয়ায় একসাথে’, রুনা লায়লার গাওয়া ‘ফেরারী সাইরেন’, রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে, ‘দলছুট প্রজাপতি’, চ্যানেল আইয়ের ‘আজ জন্মদিন’, ‘খুদে গানরাজ’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’, সেরাকণ্ঠ প্রতিযোগীতার থিম সং, সুমী শবনমের জনপ্রিয় গান, ‘ললিতা’, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে সিনেমার গান, ‘তুমি আমার জীবনের গহিনে’ সহ আরও অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকার তিনি। নূর হোসেন বলাইয়ের ‘নিস্পত্তি’ চলচ্চিত্রের প্রথম সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ফরিদ আহমেদ। ২০১৭ সালে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘তুমি রবে নীরবে’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনা করে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই সিনেমার পরিচালক ছিলেন মাহবুবা ইসলাম। এই সিনেমার আবহ সঙ্গীতের কাজও ফরিদ আহমেদ নিজেই করেন।
সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার ফরিদ আহমেদ এর জন্য রইল অনেক অনেক দোয়া। আল্লাহ্ তাঁর সহায় হউন এবং আল্লাহ’র অসীম কৃপায় তিনি ভালো এবং সুস্থ হয়ে যান এই কামনা করি। সকলের প্রতি শ্রদ্ধেয় সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ এর সুস্থতার জন্য দোয়া করার অনুরোধ রইল।