asd
Wednesday, October 30, 2024

গান এর কর্ড ও স্কেল…

– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।

মেজর স্কেল আর মাইনর স্কেলের কথা। আমাদের পরিচিত বেশিরভাগ গান এই দুই স্কেল অনুসরণ করে থাকে। কথাটা পুরোপুরি ঠিক হলো না অবশ্য। বিশুদ্ধ মেজর বা মাইনর স্কেলে যে সাতটি নোট থাকার কথা, ভাবের প্রয়োজনে প্রায়ই তার বাইরের কিছু নোট চলে আসে। তারপরও, যেহেতু মূল কাঠামোটা মেজর বা মাইনর স্কেলের, আমরা অল্পজ্ঞানীরা ওগুলোকে মেজর বা মাইনর স্কেলের গান হিসেবেই চিহ্নিত করব। আমার মাথায় কর্মক্ষম স্মৃতিকোষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কম বলে বেশি জিনিস আমি একসাথে মাথায় রাখতে পারি না। গিটার যারা শিখতে চান, তাদের অধিকাংশের প্রথম চেষ্টা থাকে, গিটারে কর্ড বাজিয়ে গান গাইবার গলা যেমনই হোক না কেন। কাজেই যারা অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে গিটার শেখান, গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তারা দ্রুত কিছু কর্ড ধরা শিখিয়ে দিয়ে কিছু সহজ গানের অল্প কিছু বেসিক কর্ড ব্যবহার করে গাওয়া যায় এমন নাম বলে দেন। নিজের গিটারে ঝংকার তুলতে পেরে নবীশ মিয়া তো মহাখুশি। আমি বলছি না এটা আপত্তিকর। সহজ জিনিস সবাই চায়। কিন্তু ডামাডোলে যে জিনিসটা তার শেখা হয়ে ওঠে না সেটা হলো, কর্ডগুলো কি নিয়ম মেনে এই গানে ব্যবহার করা হচ্ছে ? কেন এই কর্ডগুলো দিয়েই গানটা বাজাতে হবে, অন্য কোনটা নয় কেন ? আমার পরিচিত নব্বই শতাংশ নব্য গিটারিস্টকে ইনক্লুডিং মাইসেলফ দেখেছি, কর্ডের জন্য অন্ধের মত গিটার হাতড়ে ফিরতে। যাই হোক, একটা সময় জানতে পারলাম, গানের কর্ড বের করার কিছু সহজ নিয়ম আছে। অল্প কিছু তথ্য জেনেই বেশিরভাগ গানের কর্ড বের করে ফেলা যায়, এর জন্য ভাবধরা গিটার গুরুর পেছনে পেছনে দৌড়ানো লাগে না গিটারিস্টরা এত ভাব নেয় কেন কে জানে!। এই নিয়মাবলীর ইংরেজি নাম কর্ড রিলেশনশিপ। কথাটা শুনে আমার অবশ্য খুব হাসি এসেছিলো, কর্ডেরও তাহলে বাপ, মা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজন এইসব আছে ? মজার কথা হলো, আছে। আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন কর্ড তৈরি হয় স্কেল থেকে। কোন মেজর স্কেলের প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম নোট একসাথে বাজালে হয়ে যায় সেই নামের মেজর কর্ড। তারমানে C মেজর কর্ডের বাপ/মা হচ্ছে C মেজর স্কেল। C মেজর স্কেল থেকে বাকি যে কর্ডগুলো পাওয়া যাবে, সেগুলোকে C মেজর কর্ডের ভাইবোন বললে খুব ভুল হবে না। চলুন C মেজর স্কেলের একটা রিভিউ হয়ে যাক। এই স্কেলে সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি এই সাতটি নোট হচ্ছে যথাক্রমে C, D, E, F, G, A, B।
যদি এমন কোন গান পাওয়া যায়, যেটার সুর বাজাতে গেলে ঘুরে ফিরে এই নোটগুলোই আসতে থাকে, তবে আমরা বলব, গানটা হয়তো সি মেজর স্কেলের। হয়তো কেন ? আপনার মনে থাকতে পারে, আগের বার দেখিয়েছিলাম, সি মেজর স্কেল আর এ মাইনর স্কেলের নোটগুলো একই। তবে এ মাইনর স্কেলের সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি এই সাতটি নোট হচ্ছে যথাক্রমে A, B, C, D, E, F, G তাহলে গানটি এ মাইনর স্কেলের হওয়াও বিচিত্র নয়। একটু ঝামেলা হয়ে গেল। থিওরী দিয়ে ব্যাখ্যা করে অনেকভাবে মেজর আর মাইনর স্কেলের তফাৎ বোঝানো যায়, আমার জ্ঞান সীমিত বলে ওই রাস্তায় যাচ্ছি না। কিন্তু খুব সহজ এবং বেশিরভাগ সময় কার্যকর একটা পদ্ধতি হলো, গান গাওয়া শুরু করে সি মেজর অথবা এ মাইনর কর্ডটি বাজাতে থাকুন। যার সাথে গানের মুখ অথবা প্রথম অন্তরা মিলে যাচ্ছে বলে মনে হবে, গানটি সেই নামের স্কেলেই বাজবে ধরে নিতে হবে। যেহেতু দুটো স্কেলের কর্ডগুলো একই, বাকি কর্ডগুলো সূত্র মেনে বের করে ফেলা যাবে। তাহলে ব্যাপার কি দাঁড়ালো ? গানের কর্ড বের করার আগে গানের স্কেল বের করে ফেলতে হবে। তাহলেই পুরো ব্যাপারটা ছকে এসে যাবে অনেকখানি। স্কেল বের করতে হলে গানের সুর বাজাতে হবে বাদ্যযন্ত্রে। যখন আপনি কিছুটা অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন, তখন স্কেল বের করার জন্য পুরো গানও বাজাতে হবে না আপনাকে। এক কিংবা দুই লাইন বাজালেই আপনি বলতে পারবেন, এই গানের সা নোটটি কোথায়। সা যে নোটে, স্কেলও সেই নোটের। আসুন হাতে কলমে দেখি। এই গানটা বাজাই কীবোর্ড অথবা গীটারে –

C-C–D—-D—-E–E–F-G-F-E
আ হা আ – জি – এ – ব – স ন তে

F—G—-A–G-F-G-F-E
এ – ত – ফু – – ল ফু – টে

D—E—D-E-D—B-D-C
এ – ত – বাঁ – শি – বা – জে

C—G—G–F–E-F-G-F-E-F(E)D
এ – ত – পা-খি গা – – – – – – য়

এক আর এক দুই যোগ করার উদাহরণের মত হয়ে গেল। খুব সহজে বাজানো যায় এরকম একটা গান তুলে দিয়ে দেখিয়ে দিলাম যন্ত্র বাজিয়ে নোট বের করা কতই সহজ। যাই হোক, এখানে দেখা যাচ্ছে, C নোট থেকে শুরু হয়ে গানটি C মেজর স্কেলের নোটগুলো অনুসরণ করে চলেছে। নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায়, গানটা সি মেজর স্কেলের। C মেজর কর্ড বাজিয়ে গান গাওয়া শুরু করে দিলেই হবে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, পরের কর্ড গুলো কি হবে ?
সেটা জানার আগে, কিছু ছক আলোচনা করে নেয়া জরুরী।

বেসিক সাইকেলঃ
লক্ষ্য করে থাকবেন, সি মেজর স্কেলের
প্রথম তৃতীয় পঞ্চম নোট (C,E,G) বাজালে পাওয়া যায় C মেজর কর্ড
দ্বিতীয় চতুর্থ ষষ্ঠ নোট (D,F,A) বাজালে পাওয়া যায় D মাইনর কর্ড
তৃতীয় পঞ্চম সপ্তম নোট (E,G,B) বাজালে পাওয়া যায় E মাইনর কর্ড
চতুর্থ ষষ্ঠ অষ্টম নোট (F,A,C) বাজালে পাওয়া যায় F মেজর কর্ড
পঞ্চম সপ্তম নবম নোট (G,B,D) বাজালে পাওয়া যায় G মেজর কর্ড
ষষ্ঠ অষ্টম দশম নোট (A,C,E) বাজালে পাওয়া যায় A মাইনর কর্ড
সপ্তম নবম এগারোতম নোট (B,D,F) বাজালে পাওয়া যায় B ডিমিনিশড কর্ড
কাজেই, আপনার গান যদি বিশুদ্ধভাবে C মেজর স্কেলের নোটগুলো অনুসরণ করতে থাকে, সাধারণভাবে ওপরে আলোচ্য কর্ডগুলোর পারমুটেশন কম্বিনেশন করে পুরো গানের সব কর্ড বের করে ফেলতে পারার কথা।

সারাংশ দেখিঃ মেজর স্কেলের

১ম নোটের মেজর
২য় নোটের মাইনর
৩য় নোটের মাইনর
৪র্থ নোটের মেজর
পঞ্চম নোটের মেজর
ষষ্ঠ নোটের মাইনর
৭ম নোটের ডিমিনিশড কর্ড

মিলে তৈরি হয় একটি বেসিক কর্ড সাইকেল (চক্র)। এই চক্রে আপনার কাঙ্ক্ষিত গানের কাঙ্ক্ষিত কর্ড থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এক্সটেন্ডেড সাইকেলঃ
কখনো কখনো কর্ডটি তিন নোটের না হয়ে চার নোটের হতে পারে। চার নোটের কর্ড সমষ্টিকে আমরা বলব এক্সটেন্ডেড কর্ড সাইকেল। আসুন দেখি চার নোটের কি কি সহজ কর্ড আছে C মেজর স্কেলে।

C, E, G, B = C M7 (C মেজর সেভেন)
C, E, G, A = C6 (C সিক্সথ)
D, F, A, C = Dm7 (D মাইনর সেভেন)
D, F, A, B = Dm6 (D মাইনর সিক্সথ)
E, G, B, D = Em7 (E মাইনর সেভেন)
E, G, B, C = Em6 (E মাইনর সিক্সথ)
F, A, C, E = F M7 (F মেজর সেভেন)
F, A, C, D = F6 (F সিক্সথ)
G, B, D, F = G7 (G সেভেন)
A, C, E, G = Am7 (A মাইনর সেভেন)
A, C, E, F = Am6 (A মাইনর সিক্সথ)
B, D, F, A = B Dim7 (B ডিমিনিশড সেভেন)
তিন এবং চার নোটের আরও কিছু কর্ড আছে যেগুলো আমরা গানে কম দেখি। উদাহরণঃ
C, F, G = C sus 4 (C সাসপেন্ডেড ফোর, লক্ষ্য করুন, C মেজর কর্ড থেকে E নোট টিকে বাদ দিয়ে বা সাসপেন্ড করে F নোটটি যুক্ত হয়েছে, যেটি আবার স্কেলের চতুর্থ নোট। তাই কর্ডের নাম C sus 4)
E, A, B, D = E 7 sus 4 ( E সেভেন সাসপেন্ডেড ফোর, E সেভেন কর্ডের G# নোট টিকে বাদ দিয়ে A নোট যুক্ত হয়েছে, তাই কর্ডের নাম E 7 sus 4)

বুঝতেই পারছেন, সাতটি নোট থেকে তিন বা চার নোটের কম্বিনেশন করে সত্তরটি বিভিন্ন কর্ড বানানো সম্ভব এবং এতে করে আপনার কর্ড খোঁজার কাজে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে যদি আপনি জিনিসটাকে কোন সাধারণ নিয়মে ফেলে দিতে না পারেন। নবীশদের জন্য সেই অতি সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, গানের কর্ড খোঁজার সময় বেসিক সাইকেলে সীমাবদ্ধ থাকুন। মনে করুন কোন গানে Em 7 কর্ডটি বাজছে। এটি এক্সটেন্ডেড সাইকেলের কর্ড। আপনি গান গাইবার সময় ধরলেন Em কর্ড, যেটি বেসিক সাইকেলের অন্তর্ভুক্ত। আপনি যদি বিগিনার হন আপনার কানে দুটো কর্ডের আওয়াজ প্রায় একই রকম শোনানোর কথা। সেক্ষেত্রে কর্ড হাতড়ে বেড়ানোর পরিবর্তে জটিল কর্ড বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত সহজটা ধরাই কার্যকর নয় কি? আপনি যখন কিছুটা অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন, কর্ডের জাত চিনতে শিখবেন, তখন আপনি Em 7 কর্ডটাই ধরবেন, তদ্দিন পর্যন্ত গানের কর্ড খোঁজাখুঁজিতে বেসিক সাইকেল ব্যবহার করারই পরামর্শ দেব আমি।
নতুন একটা শব্দ বললাম, কর্ডের জাত। জাত না বলে আওয়াজের ধরণ বলাটাই হয়তো যুক্তিযুক্ত ছিল। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, মেজর কর্ড বাজালে এক ধরণের ঝংকার হয়, শান্ত, গম্ভীর এবং জোরালো। মাইনর কর্ড বাজালে আওয়াজটিকে আমার কানে অসম্পূর্ণ লাগে, মনে হয় কি যেন একটা নেই। তারপরও, শব্দটা বেশ সুরেলা। সেভেন কর্ডে অসম্পূর্ণতা অনেক বেশি প্রবল হয়ে বাজে, প্রথম দিকে কিছুটা বেসুরোও লাগতে পারে। মেজর সেভেন কর্ডে আপনি ঝর্ণার পানি বয়ে যাবার মত একটা মিষ্টি রিনিঝিনি ঝংকার পাবেন, সাসপেন্ডেড কর্ড শুনলে মনে হতে পারে কালো গলা বুঝি সর্দি লেগে শুকিয়ে গেছে। ডিমিনিশড সেভেন কর্ড শুনলে আমার কেন যেন ভুতের কথা মনে পড়ে যায়। সবই ব্যক্তিগত অভিমত, কারো সাথে আংশিক বা পূর্ণভাবে না মেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কাজেই একটা সময়ে আপনি আওয়াজ শুনেই বলে দিতে পারবেন কি ধরণের কর্ড বাজছে, তখন আপনার একশত ভাগ সঠিক কর্ড বের করতে কোন সমস্যা হবে না।

বিভিন্ন স্কেলের বেসিক সাইকেলঃ

এবার একটু এক্সারসাইজ। আসুন C মেজর স্কেলের বেসিক সাইকেলটির কর্ডগুলো পরপর লিখি

C – Dm – Em – F – G – Am – Bdim – C

C মেজর এর যায়গায় যদি A মেজর স্কেলের বেসিক সাইকেল বের করতে হলে স্কেলের নোটগুলো বের করে ফেলুন। তারপর ওপরের নিয়ম ধরে মেজর মাইনর ডিমিনিশড বসাতে থাকুন। আরেকটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে। যেহেতু A নোটটি C নোট থেকে ৩ সেমিটোন পেছনে, সবগুলো কর্ডকে তিন সেমিটোন পেছনে নিয়ে যান। যেভাবেই করুন, নিচে লেখা জিনিসটাই পাবেন।

A – Bm – C#m – D – E – F#m – G#dim – A

চলুন এই কর্ডগুলোর ক্রমিক নম্বর দিয়ে দেই। ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম এইভাবে। কাজেই আমি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি, সি মেজর স্কেলের ৫ম কর্ডটা কি, আপনি নিশ্চয়ই বলতে পারবেন, G মেজর। একই ভাবে, A মেজর স্কেলের ৫ম কর্ডের নাম, E মেজর। কর্ড রিলেশনশিপে এই ক্রমিক নম্বরগুলোর বিশেষ ভূমিকা আছে। মেজর স্কেল যে নোটেরই হোক না কেন, মেজর মাইনর কর্ডের আপেক্ষিক অবস্থান কখনো বদলে যায় না। C মেজর স্কেলে কোন গান C মেজর কর্ড থেকে G মেজর কর্ডে চলে গেলে যে ধরণের পরিবর্তন আপনার কানে বাজে, A মেজর স্কেলে ১ম কর্ড থেকে ৫ম কর্ডে সেই একই রকম পরিবর্তন আপনার কানে ধরা পড়ার কথা, শুধু পীচ একটু বেশি বা কম হবে কোন অক্টেভে বাজছে সেটার ওপর, এই যা। কিছুদিন একটা বেসিক কর্ড সাইকেলের সবগুলো কর্ড এলোমেলোভাবে বাজাতে থাকলে আপনার কান সেগুলোকে চিনে নেবে। C মেজর বাজানোর পর D মাইনর বাজালে আপনি বলতে পারবেন, সাইকেলের ২য় কর্ড বাজছে। A মাইনর বাজালে বলতে পারবেন, ৬ষ্ঠ কর্ড বাজছে। শব্দ শুনে কর্ডের ধরণ চিনতে হলে বেশি বেশি বাজানোর কোন বিকল্প নেই। একটা স্কেলের সবগুলো কর্ডের আপেক্ষিক অবস্থান সনাক্ত করতে শিখে যাবার পর, যে কোন স্কেলে সেই একই বিদ্যা প্রয়োগ করে গানের কর্ড খুঁজে বের করাকে আপনি ডালভাত বানিয়ে ফেলবেন, আমি নিশ্চিত।

হাতে কলমে চার লাইনঃ

শুকনো প্যাঁচালের পর আসুন হাতে কলমে কিছু কাজ হয়ে যাক। সেই যে কিছুক্ষণ আগে বসন্তের গান গাইলাম, আসুন এটার কর্ড বের করে ফেলি বেসিক সাইকেল ব্যবহার করে। গানটাকে এইভাবে লিখছি, যাতে ওপরে নোটের নাম, মাঝখানে গানের কথা আর নীচে কর্ডের নাম থাকে। মনে রাখুন, গানটা C মেজর স্কেলের, তাই এখানে বেসিক সাইকেলে কর্ড থাকার কথা C, Dm, Em, F, G, Am (B ডিমিনিশড কে বাদ দিলাম কারন পুরো গানে কোন ভৌতিক (!) আবহ নেই )

C-C–D—-D—-E–E–F-G-F-E
আ হা আ – জি – এ – ব – স ন তে
C………G…………C……………C /(Am )

এই লাইনে, প্রথমে “আহা” এর C নোট দুটোর জন্য C মেজর কর্ড এসেছে। “আজি” তে গিয়ে স্বর অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে বলে এখানে একটা ভিন্ন কর্ড আসবে। D নোটের জন্য আমরা দুটো কর্ডকে বিবেচনা করতে পারি, G মেজর আর D মাইনর, কারন এই দুটো কর্ডেই কেবল D নোট আছে। অনেকে আছেন আওয়াজ শুনেই বলে দিতে পারেন এই মুহুর্তে মেজর না মাইনর কর্ড ধরতে হবে। অভিজ্ঞ কানে দুই ধরণের স্বরের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে। আপনার সেই ক্ষমতা থাকলে আপনি অনায়াসে বলতে পারবেন, “আজি” যখন গাওয়া হচ্ছে তখন ধরণটা মেজর, মাইনর নয়। সেক্ষেত্রে, G মেজর কর্ড হচ্ছে যথাযথ। যদি মনে করেন আপনার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই, তাহলে একটু কষ্ট করে G মেজর আর D মাইনর দুটো কর্ডই বাজিয়ে দেখুন কোনটার সাথে মিলছে। G মেজরের সাথেই মেলার কথা। ভালো কোন তত্ত্ব যোগাড় করতে পারলাম না, যেটা অনুসরণ করে নিশ্চিতভাবে মেজর/মাইনর কর্ড চিহ্নিত করা সম্ভব। কারো জানা থাকলে মন্তব্যে উল্লেখ করে দিতে পারেন। তবে পুরো গানে এমন কোন জায়গা নেই যেটা শুনলে স্বর অসম্পূর্ণ মনে হয়, যা আমার মতে মাইনর কর্ডের একটা বড় বৈশিষ্ট্য, তাই পুরো গান জুড়েই মেজর কর্ডের ছড়াছড়ি। সম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ মনে হওয়াটাও আবার একটা বায়বীয় ব্যাপার। একটা আওয়াজ শুনে কেন আমার অসম্পূর্ণ লাগবে, সেটা আমি বলে বোঝাতে অক্ষম।

“এ বসন্তে” অংশটায় E নোটটির প্রাধান্য লক্ষণীয়। E নোট আছে এমন কর্ড বেসিক সাইকেলে আছে তিনটি। C মেজর, E মাইনর, A মাইনর। C মেজর কর্ড বাজাতে থাকলেই পুরোটা মিলে যাবার কথা, তবে “বসন্তে” অংশটায় A মাইনর কর্ড ধরলে একটা বাড়তি ফ্লেভার চলে আসে বলে আমার মনে হয়েছে। E মাইনর কর্ড এখানে আসছে না কারন এই কর্ডের B নোটটা খুবই ডমিন্যান্ট, এটার প্রভাব এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল। কিন্তু গানের সুর B এর আশেপাশে দিয়েও যায় নি কাজেই পরিবেশটা মিলবে না।

F—G—-A–G-F-G-F-E
এ – ত – ফু – – ল ফু – টে
F……………F……………C

“এত” অংশটা শুরু হচ্ছে F নোট দিয়ে। কাজেই প্রথম পছন্দ F মেজর D মাইনর বাদ কারন ধরণটা মাইনর নয়। “ফুল” অংশটা মজার। এটা শুরু হচ্ছে A নোট দিয়ে, যেটা F মেজর কর্ডে আছে, আবার ফু—ল এর প্রলম্বিত জায়গাটার প্রধান নোট G। এখানে F মেজর বা G মেজর কর্ড কোনটাই খাপছাড়া লাগে না। তবে আমার কানে F মেজর বেশি মানানসই লেগেছে। “ফুটে” তে গিয়েও একই ব্যাপার। “টেএএ” জায়গাটা প্রলম্বিত, এখানে E নোট ডমিন্যান্ট। A মাইনর আর E মাইনর দুটো কর্ডেই E নোট থাকলেও গানের ভাব অনুযায়ী ওগুলোকে কাঁচকলা দেখাতে পারি আমরা। বাকি রইল C মেজর।

D—E—D-E-D—B-D-C
এ – ত – বাঁ – শি – বা – জে
G…………G…………C

এখন মনে হয় কিছুটা সহজ হয়ে এসেছে পদ্ধতিটা। ডমিন্যান্ট D নোটের জন্য G মেজর আর “বা-জেএএ” এর প্রলম্বিত অংশটার C নোটের জন্য C মেজর কর্ড এসেছে। গান শুনে কি মনে হচ্ছে না যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো সেখানে ফেরত এসেছে এতক্ষণে ?

C—G—G–F–E-F-G-F-E-F(E)D
এ – ত – পা-খি গা – – – – – – য়
C………….F……….C

“এত” অংশে C নোটের জন্য C মেজর কর্ড, “পাখি” ‘র F নোটের জন্য F মেজর কর্ড, “গায়” এর বিবিধ স্থানে E নোটের প্রাধান্যে C মেজর কর্ড এসেছে।
পুরো গান নীচে তুলে দিলাম, কর্ড বের করাটা আপনার হোমওয়ার্ক –
আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,
সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল–
কার অনাদরে আজি ঝরে যায়।
কেন কাছে আস, কেন মিছে হাস,
কাছে যে আসিত সে তো আসিতে না চায়।
সুখে আছে যারা, সুখে থাক্‌ তারা,
সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা,
দুখিনী নারীর নয়নের নীর
সুখী জনে যেন দেখিতে না পায়।
তারা দেখেও দেখে না, তারা বুঝেও বোঝে না,
তারা ফিরেও না চায়।
সহজ পাঠ শেষ হলো। এই গানটায় বেসিক সাইকেল থেকে কোন বিচ্যুতি ছিলো না। স্কেলের বাইরের নোট গানের মাঝে ঢুকে গেলে কিরকম ভাবে নতুন কর্ড বের করা যায়, সেই নিয়ে “খুবই অল্প জটিল পাঠ” নামে আরেকটা পোস্ট দেয়া যেতে পারে।
পুনশ্চঃ বেসিক কর্ড সাইকেলের একটা ব্যাপার উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছি। হয়তো আপনি সেটা ইতিমধ্যেই জানেন। আগেই বলেছি, C মেজর স্কেল আর A মাইনর স্কেলের নোটগুলো একদম এক। মেজর আর মাইনর স্কেলের মধ্যে এরকম মিল থাকলে তাদের বলা হয় রিলেটিভ স্কেল। আর মাইনর কর্ডটিকে বলা হয় রিলেটিভ মাইনর। সুতরাং C মেজর কর্ডের রিলেটিভ মাইনর হচ্ছে A মাইনর কর্ড।
একইসূত্রে, G মেজর কর্ডের রিলেটিভ মাইনর হচ্ছে E মাইনর কর্ড, F মেজরের রিলেটিভ মাইনর হচ্ছে D মাইনর কর্ড। খেয়াল করে দেখুন, এই কয়েকটি কর্ডই কিন্তু প্রধানভাবে আছে C মেজর স্কেলের বেসিক সাইকেলে। এত্ত এত্ত রিলেটিভ, জিনিসটাকে কর্ড রিলেশনশিপ নাম দেয়াটা বেশ লাগলো। সবাইকে ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles