asd

জলতরঙ্গ কি ?…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

একক বা সঙ্গতকারী সুর সৃষ্টিকারী বাদ্যযন্ত্র। এতে ব্যবহার করা হয় চীনামটির তৈরি ছোটো ছোটো বাটি। এই বাটির প্রান্তে আঘাত করলে সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি সৃষ্টি হয়। সঙ্গীতে ব্যবহৃত স্বরের কম্পাঙ্ক নির্দিষ্ট করার জন্য পাত্রের ভিতর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দ্বারা পূর্ণ করা হয়। এরপর কাঠের দণ্ড দিয়ে আঘাত করে স্বর উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে একটি সুর সৃষ্টির জন্য যতগুলো স্বরের দরকার পরে, ঠিক ততগুলো বাটি ব্যবহার করা হয়। অনেকসময়
উপযুক্ত চিনামাটির বাটির বিকল্প হিসেবে ধাতুর তৈরি বাটি ব্যবহার করা হয়। বাদনের সময় প্রয়োজনীয় সুরের জন্য বাটিগুলোকে যথার্থ পরিমাণ পানি দ্বারা পূর্ণ করে, অর্ধ-বৃ্ত্তাকারে সাজানো হয়। বাদক এই বৃত্তের কেন্দ্রে বসে
দুই হাতে কাঠের দণ্ড দিয়ে বাটির প্রান্তভাগে আঘাত করে সুর তৈরি করেন।

শুরুর দিকে ইউরোপে কাঁচের তৈরি পানি খাওয়ার গ্লাসে আঘাত করে কেউ কেউ সুর তৈরি করতেন। কারো কারো মতে এই যন্ত্র পরে ভারতে বর্ষে আসে এবং ভারতীয় শিল্পীরা কাঁচের গ্লাস-এর পরিবর্তে চীনা মাটির পাত্র ব্যবহার
করে এই যন্ত্রটি নতুনরূপ দেন। অন্যমতে, ভারতের রাজস্থানের জয়সালিমার অঞ্চলের এই যন্ত্র তৈরি হয়েছিল। গোড়ার দিকে একক ধাতব থালা পানি দ্বারা পূর্ণ করে সুর তোলার যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। রাজস্থানী শিল্পীরা এই যন্ত্রের নাম দিয়েছিলেন জলতাল। নাম শুনে মনে হয়, এই যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের তাল বাজানো হতো, সঙ্গীতের সুরের সাথে সমন্বয় করে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে থালার পরিবর্তে চীনামাটির বাটি ব্যবহার করে, আধুনিক জলতরঙ্গ যন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কে প্রথম এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা জানা যায় না। এর অনুরূপ এক ধরনের যন্ত্রের উন্নয়ন হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার জাভা এবং বালিতে। এই যন্ত্রের ব্যবহার মায়ানমারেও প্রচলিত হয়েছিল। একে বলা হয় – গংস অফ গ্যামেলিন। কিন্তু এতে ব্যবহার করা হয় নানা আকারের ধাতব পাত্র। প্রতিটি খণ্ড একটি সুনির্দিষ্ট সুরে বাঁধা হয়। এতে বাঁশের তৈরি লাঠি ব্যবহার করে সুর সৃষ্টি করা হয়। উল্লেখ্য শব্দের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের জন্য লাঠির মাথায় কাপড়ের পট্টি ব্যবহার করা হয়। অনেকে মনে করেন ভারতীয়রা এই যন্ত্রের আদিরূপটি ভারতবর্ষে এনেছিলেন। পরে ভারতবর্ষে আধুনিক জলতরঙ্গে রূপ লাভ করেছিল ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পীদের দ্বারা।

জলতরঙ্গের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, সঙ্গীত পারিজাত অংশে। সেক্ষেত্রে ইউরোপের গ্লাস-যন্ত্র থেকে ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পীরা জলতরঙ্গের ধারণা পেয়েছিল এটা মনে হয় না। সঙ্গীতসারে জলতরঙ্গের জন্য ২২টি বাটি নিয়ে জলতরঙ্গের সেট তৈরি হয়, এমন উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্তমানে জলতরঙ্গ শিল্পীরা ১৬টি বাটি প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করে থাকেন। প্রয়োজনে এই সংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি হয়। স্বরের প্রকৃতি অনুসারে বাটির পানিও হ্রাসবৃদ্ধি করা হয়।
আজ এই পর্যন্ত, নতুন কোন বিষয় নিয়ে আবার লেখা হবে সঙ্গীতাঙ্গনে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest Articles