– আফরোজ মিম।
আমরা সাধারণত সামনের মানুষগুলোকেই দেখি, বাহবা দেই। কিন্তু যারা পিছনে থেকে সামনের মানুষগুলোকে এগিয়ে দেন তারা বরাবরই রয়ে যান আড়ালে। তারকা তৈরীর কারিগর হয়েও তারা থাকেন আলোচনার বাইরে। তেমন একজন আলম খান। এদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে তাকে সম্মান করা হয় সুরের জাদুকর বলে। তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা। তার হাত ধরে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন অনেকেই। পপসম্রাট আজম খানের বড় ভাই এই গুণী মানুষটির জন্মদিন আজ। ১৯৪৪ সালের ২২শে অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাথি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেই হিসেবে এবারে তিনি ৭৫তম বছরে পা রাখলেন। এই সঙ্গীতজ্ঞের পুরো নাম খুরশিদ আলম খান। পিতার নাম আফতাব উদ্দিন খান। মায়ের নাম জোবেদা খানম। গুলবানু খানের সাথে দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান এবং এক কন্যা আনিকা খানের জনক তিনি।
আলম খান ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সেই জের ধরেই গানের ভুবনে প্রবেশ। ১৯৭০ সালে আবদুল জব্বার খানের ‘কাঁচ কাটা হীরে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তারপর অসংখ্য ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সৃষ্টি করেন একের পর এক শ্রুতিমধুর এবং জনপ্রিয় গান। আলম খানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় সৃষ্ট অসংখ্য গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো – ওরে নীল দরিয়া, হায়রে
মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা, তুমি যেখানে আমি সেখানে, সবাইতো ভালবাসা চায়, ভালবেসে গেলাম শুধু, চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, তেল গেলে ফুরাইয়া, আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী, জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প, মনে বড় আশা ছিল, সাথীরে যেও না কখনো দূরে, বেলি ফুলের মালা পরে, কাল তো ছিলাম ভাল, চুমকি চলেছে একা পথে, ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া, তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো, আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটাইরে ইত্যাদি। আলম খান দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘বড় ভাল লোক ছিল (১৯৮২), তিন কন্যা (১৯৮৫), সারেন্ডার (১৯৮৭), দিনকাল (১৯৯২) এবং বাঘের থাবা (১৯৯৯) ছবিগুলোতে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ২০০৮ সালে পেয়েছেন ‘কি জাদু করিলা’ ছবির জন্য। এই গুণী মানুষটিকে রাষ্ট্রীয় পদকে সম্মান করার দাবি জানিয়েছেন সঙ্গীত-চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ নানা আঙ্গিনার মানুষ।
জীবনের বাঁকে মানুষকে কতো ঝড় ঝাপটা পারি দিতে হয় তারপর বয়সকালে এসে বিভিন্ন রোগের সাথে চলে যুদ্ধ। আমাদের এই অস্বাস্থ্যকর দেশে রোগ হয়ে দাঁড়ায় নিত্যদিনের সঙ্গী। এখন তিনি ভাল আছেন এবং আমরা সবাই দোয়া করি তিনি সুস্থ থাকুন, আরো অনেকদিন বেঁচে থাকুন আলম খান। শুভ হোক তার প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত। সঙ্গীতাঙ্গন পরিবারের পক্ষ থেকে রইল ৭৬তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা।