Friday, April 19, 2024

আমরা কি ভুলে যাচ্ছি ?…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

“আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে
ঢক্কুর ডু ঢুক্কুর ডু সানাই বাজিয়ে
যাবো তোমায় আমার বাড়ি নিয়ে”

কি গান ? আহ! আমরা কি ভুলে যাচ্ছি? আমরা কি ভুলে যাচ্ছি আমাদের ঐতিহ্যের কথা ? আমাদের সভ্যতা কি আজ ধ্বংসের পথে ? হ্যা তাই! আমারা আজ আমাদের মাঝে নাই, হারিয়ে গেছি পশ্চিমাদের মাঝে। একটু পিছনে ঘুরে তাকাই আমরা। কোন এক সময়ের কথা।

গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরু ও ঘোড়ার গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। যা একসময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত ছিল এবং গ্রাম বাংলার জনপথে গরু-মহিষ ও ঘোরার গাড়িই যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল। এই বাহনগুলো বিভিন্ন জনপদের সরগরম অস্তিত্ব ছিল, ছিল সর্বত্র এই গাড়ি গুলোর কদরও। পণ্য পরিবহন ছাড়াও গ্রাম বাংলায় বিবাহের বর-কনে বহনেও বিকল্প কোন বাহন ছিল না।
সুপ্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীণ জনপদের কাঁচা মেঠো পথে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ী, মহিষের গাড়ী ও ঘোড়ার গাড়ীর বহুল প্রচলন পরিলক্ষিত হতো। পায়ে চলার পথে মানুষ পশুর শ্রমে চলিত গরু-মহিষ, ঘোরার গাড়ি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ও বাণিজ্যের পণ্য পরিবহনে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করত প্রাচীন কাল থেকেই। বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্য গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এখন বিলুপ্তির পথে।

বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এই বাহনগুলো ছিল অপরিহার্য। বিয়ে এবং অন্য কোন উৎসবে গরুর গাড়ি অথবা ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া বিয়েই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। আগে অনেকেরই এই গাড়িগুলো ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন।
তখন গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল। গ্রামের বউ-ঝিদের নাইওর যেতে গরু অথবা ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহৃত হতো অহরহ। সময়ের বিবর্তনে আজ গরুর গাড়ি চালক ‘গাড়িয়াল’ ভাই না থাকায়, হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা গাড়িয়াল ভাইয়ের কণ্ঠে সেই অমৃত মধুর সুরের গান। গাড়িয়ালরা গাড়ি চালানোর সময় আনন্দে গাইতো ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে..।’ এখন আর চাইয়া থাকলেও একটি গরুর ও ঘোড়ার গাড়ি চোখে পড়ে না আজকাল। এখন আর গানও গায়না গাড়িয়ালরা। আধুনিকতার দাপটের ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু ও ঘোড়ার গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। যা একদা ছিল বংশ পরম্পরায়।

সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন, আধুনিকায়ন সাধিত হয়েছে। আধুনিক এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি। আজ শহরের ছেলে মেয়েরাতো দূরে থাক গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ি এই যানবাহনের সাথে খুব একটা পরিচিত না। ইঞ্জিনের স্পর্শে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক যানবাহনই কালপরিক্রমায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার ঐতিহ্যবাহী অনেক বাহনই হারিয়ে যাচ্ছে দৃশ্যপট থেকে। তেমনি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রকৃতিবান্ধব গরু, ঘোড়ার গাড়ী বহুবিধ কারণে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে। কয়েক বছর আগেও কালে ভাদ্রে দু’একটি গরু, ঘোড়ার গাড়ীর দেখা মিললেও বর্তমানে তা ডুমুরের ফুল। শুধু গরুর গাড়ি না আরো অনেক গ্রামীন জিনিস হারিয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে।
আমরা আমাদের ঐতিহ্য আজ হারাতে বসেছি। যে সোনার বাংলাকে দেখে পল্লী কবি জসিমউদ্দিন কবিতা রচনা করতো। যেই সোঁনার বাংলাকে ভালোবেসে কাজী নজরুল বিদ্রোহ করতো। যেই সোনার বাংলাকে নিয়ে কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ লিখেছেন জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। সেই সোনার বাংলার ঐতিহ্য আমাদের শিকড়ের সন্ধান বহন করে। এদের হারিয়ে যেতে দিলে আমাদের সভ্যতার ঐতিহ্য বিলিন হয়ে যাবে।
আসুন নিজের দেশকে ভালোবাসি দেশের ঐতিহ্যকে ভালোবাসি। সেই শুভ কামনায় সঙ্গীতাঙ্গন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles