Friday, March 29, 2024

আজ ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এর মৃত্যুবার্ষিকী…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গীতিকবি, গবেষক। আবু হেনা ১৯৩৬ সালের ১১ মার্চ পাবনা জেলার উল্লাপাড়ার গোবিন্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ হতে ১৯৫৮ সালে অনার্সসহ বি এ এবং ১৯৫৯ সালে এম এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

পঞ্চাশের দশকে ঢাকাকে কেন্দ্র করে সাহিত্য ও সংস্কৃতির যে নতুন ভুবন তৈরি হচ্ছিল, আবু হেনা ছিলেন সে পরিবৃত্তের তরুণ সদস্যদের একজন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি সংস্কৃতিসেবী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ সহযোগে আবু হেনা ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার কবিতা নামে একটি সঙ্কলনগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তরুণ বয়সে কবি ও গীতিকাররূপে তাঁর সফল আত্মপ্রকাশ ঘটে। বন্ধু আবু বকর খান, আনোয়ারউদ্দিন খান ও মোঃ আসাফদ্দৌলাসহ তিনি আধুনিক গান চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মিলন গড়ে তোলেন। আবু বকর খানের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘সেই চম্পা নদীর তীরে’ আবু হেনারই লেখা। তিনি ঢাকা বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। অন্তরঙ্গ অনুভব, গাঢ় আবেগ, রোমান্টিক আর্তি এবং কখনো কখনো স্বদেশবোধের শিল্পিত পরিচর্যা তাঁর কবিতা ও গানগুলিকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। তিনি একই সঙ্গে কবি ও গীতিকবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন বাংলা গানের এক উজ্জ্বল বাণীকার, টেলিভিশনের বাককুশল রসিক উপস্থাপক ও আলোচক।

কলেজে শিক্ষকতার মাধমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৬২ সালে তিনি জনসংযোগ পরিদপ্তরে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্যা বাঙ্গালী প্রেস এন্ড লিটারেরি রাইটিং ১৮১৮-১৮৩১ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।

গদ্যচর্চায় আবু হেনার সৃষ্টিশীলতার নিদর্শন রয়েছে। সাহিত্যপাঠের ব্যাপকতা, সাহিত্যবোধের রসঘনতা এবং ভাষাপরিচর্যা তাঁর গদ্য রচনায় স্বতন্ত্র স্বাদ সৃষ্টি করেছে। প্রবন্ধ, গবেষণাধর্মী লেখা, সমালোচনা, ভাষ্য-সব ধরনের গদ্য রচনার বক্তব্য, ভাষা, উপস্থাপনা ও ভঙ্গিতে তাঁর স্বকীয়তা সুস্পষ্ট। আবু হেনা বাংলা সাহিত্য ও বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের মূল্যায়ন করে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ লিখেছেন এবং সেগুলি তাঁর শিল্পীর রূপান্তর এবং কথা ও কবিতা নামের দুটি প্রবন্ধ-সংকলনে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের সাহিত্য-সমালোচনায় তাঁর এ গ্রন্থ দুটি বিশিষ্টতার দাবি রাখে।
আবু হেনার তিনটি কাব্যগ্রন্থ আপন যৌবন বৈরী (১৯৭৪), যেহেতু জন্মান্ধ (১৯৮৪) ও আক্রান্ত গজল (১৯৮৮) এবং আমি সাগরের নীল (১৯৯৫) তাঁর গানের সংকলন। তিনি একসময় সাময়িক পত্রিকায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সরস কলাম লিখে প্রশংসিত হন।

সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুহূদ সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৮৬), একুশের পদক (১৯৮৭), আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), সাদত আলী আকন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯১)-এ ভূষিত হন। এতো সৃষ্টিশীল মানুষটি আমাদের ছেড়ে ১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পরপারে চলে যান। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে তার রুহের শান্তি কামনা করি।
(তথ্য সংগৃহিত)

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles