– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক শিল্পী উমা খান। চট্টগ্রামের এক সঙ্গীত পরিবারে ১৯৫৮ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তার জন্ম। চলচ্চিত্র, বেতার, টিভিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সঙ্গীতে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি। গান গেয়ে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মুক্তিযুদ্ধের সময় গান গেয়ে উজ্জীবিত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের, সংগঠিত করেছিলেন লাখ লাখ শরণার্থীসহ সাধারণ মানুষদের।
যখন মুক্তিযুদ্ধো হয় সেই সময় তিনি মাত্র কলেজে ভর্তি হন। তার বাবা ও মা খুব সাহসী ছিলেন তাদের মেয়ে হয়ে তিনিও সাহসী হয়ে উঠেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শোনার পর সেখানের অনেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২৩শে মার্চ সব স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। ২৬শে মার্চের রাতে পাক বাহিনীরা গোলাগুলি শুরু করল। ২৮শে মার্চ পর্যন্ত শহরে থাকার পর উমা খান তার, মা-বাবা, তার বোন কল্যাণী ও তার ভাই বেতার শিল্পী প্রবাল চৌধুরী সহ সবাই চলে গেলো গ্রামের বাড়ি রাউজানের বীনাজুড়িতে। রাজাকারদের অত্যাচারে সেখানে ১৫ দিনের বেশি থাকতে পারিনি। অনেক জায়গায় ঘর থেকে মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ৫ই মে কলকাতায় চলে যান।
যেহেতু তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সঙ্গীত পরিবারে। এবং তার বাবা ছিলেন একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি মাও ভাল গান গাইতেন। সেহেতু উমা খানঁ কল্যাণী দেবী ও প্রবাল চৌধুরী প্রত্যেকেই গান গাইত। বলা যায় ছোটবেলা থেকেই তারা গানের জগতে। অনেকেই সে কারণে তাদের খুব ভালো ভাবেই চিনত। মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন সে কলকাতায় গেলো তখন অনেক গুণী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো। সেখানের ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে তারা তিন ভাই-বোন গান করেছিল। এ সময় দেখা হয়েছিল ড. সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে। তাদের গান শুনে ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’ নামের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করে নেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন, জহির রায়হান, মোস্তফা মনোয়ার, ভারতের দীপেন বন্দোপাধ্যায়সহ অনেকে। তারা ‘রূপান্তরের গান’ নামক গীতিনাট্যে করতেন। পরে এর নাম হয় ‘মুক্তির গান’। এটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশন করত।
জুনের প্রথমদিকে গড়িয়া হাটের মোড়ে সুরকার সমর দাস ও শিল্পী আবদুল জব্বারের সঙ্গে দেখা হয়। তারা তাদের চিনতেন। আর ওনারাই তাদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রটি ছিল কলকাতা ১৯-এর ৫৭/৮ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। সেখানে নিয়মিত গান রচনা, সুর ও রেকর্ডিং হতো এবং স্বাধীন বাংলা বেতারে তা প্রচার হতো। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি গান শেখানো হতো এবং তার রেকর্ডও হতো। সেখানে তারা পঞ্চাশটিরও বেশি গান করেছেন। বেশির ভাগ গান ছিল সমবেত। ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘নোঙর তোল তোল’, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ সহ অনেক গান তাদের রেকর্ড হয়েছে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব’ গানটি রেকর্ড করেছিল উমা খান, তার ভাই প্রবাল ও বোন কল্যাণী দেবী। এটির সুর করেছিলেন সমর দাস। এটাই শিল্পী উমা খানের মুল পরিচয়। আজ তার ৬৯তম জন্মবার্ষিকী। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে গুণী এই শিল্পীর জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই শুভ জন্মদিন।