Saturday, April 13, 2024

বাবা আমার প্রথম ওস্তাদ – সুনীল চন্দ্র দাস…

– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।

জানিনা কে কোন সময় ওপারের ডাকে সারা দিয়ে স্বর্গবাসি হয়
যাবার আগে দেশ ও দশের জন্য কিছু জীবনের মহুর্ত করে ক্ষয়
স্বার্থের কাছে বলিদান নয় অর্জিত জ্ঞান
আর বিবেকের খোলা ধার,
কর্মে তারা জন্মের চিহ্ন স্থাপন করে যায়
দিগন্তের মহালয়ের পার।
নিজের জন্য চায়না কিছু জীবনের কোন
প্রান্তিয় কালের কাছে,
দিয়ে যায় নিজের যা কিছু সব পরের হিতে
তারা যত দিন বাচেঁ।।

বলছি বেহেলা বাদক সুনীলদার মতো কিছু কৃতিমান মানুষের কথা। যারা বহু সাধনা করে সঙ্গীত জীবনের স্বার্থকতা খুজে বেড়ায়। যাদের প্রবল ইচ্ছা আর সঙ্গীত প্রিয়তার জন্য ব্যয় করেছেন জীবনের মূল্যবান সময়। যাদের হাত ধরে আমাদের সঙ্গীত ভুবন হয়েছে সুন্দর আর প্রানবন্ত। যাদের বাজনার তালে কথাগুলো পেয়েছে তাল আর ছন্দ। সাজিয়েছে হাজার বীনার সুর, সমৃদ্ধ করেছে আমাদের মনকে। দিয়েছে ভালো লাগার, ভালোবাসার গান ও মনকে টেনে নিয়েছে সঙ্গীতের ভুবনে। এমনই এক গুনী মানুষ যার মুখের অমূল্য বানী শুনার জন্য কথা হয় সঙ্গীতাঙ্গন এর। তিনি হলেন আমাদের সঙ্গীত ভুবনের একজন অতিব সু-পরিচিত মুখ সুনীল চন্দ্র দাস। যাকে বাংলাদেশ সহ বিদেশেও গ্রেট ওয়ান বেহেলা বাদক হিসেবে চিনেন। তিনি হলেন ওস্তাদ মতি লাল চন্দ্রের সুযোগ্য সন্তান। তার বাবা মতিলাল ছিল একজন ভালো বেহেলা বাদক। তার কাছেই তার সন্তান সুনীল চন্দ্র দাস বেহেলায় হাতে খড়ি।
বলা চলে প্রথম ওস্তাত হলেন তার স্বর্গীয় পিতা মতিলাল। তার সাথে কথা বলে জানা গেল বেহেলা শিখার গল্প। তিনি বলেন, আমার বাবা আমার প্রথম ওস্তাদ। তার কাছ থেকেই আমি প্রথম বেহেলা শিখি। তার পর মুক্তিযুদ্ধকালে আমি ইন্ডিয়াতে চলে যাই আর সেখানে স্বর্গীয় ওস্তাদ পরিতোষ শীলের কাছে অনেকদিন শিখি। এবং তিনি জানান আমি প্রোফেশনালি জীবনে ১৯৬৯ সাল থেকে বিভিন্ন টিভি, চ্যানেল ও মঞ্চে অনুষ্ঠানে বাজানো শুরু করেন। এবং সরকারী ভাবে গ্রেট ওয়ান যন্ত্রশিল্পী হিসেবে আমি বাংলদেশ শিল্পকলায় চাকরী করেছি। বিভিন্ন দেশে আমি আমার বেহেলার সুরও ধ্বনি শুনিয়েছি। তার মধ্যে কিছু দেশ জাপান,রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইন্ডিয়া, তুরুস্ক, ভিয়েতনাম, ওমান, দুবাই, আবুধাবি সহ বিভিন্ন দেশে।

২০০৯ সালে আমি অবসর গ্রহন করি। আমিই একমাত্র ব্যাক্তি যাকে গ্রেট ওয়ান বেহেলা বাদক থেকে পদোন্নতি দিয়ে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বলেন আমি এখন কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীদের শিখাচ্ছি। আসলে এখন ছেলেমেয়ের আগ্রহ আছে শিখার কিন্তু সময় ও ধৌর্য নাই। আমাদের সময় আমরা যখন শিখেছি তখন অনেক শ্রম ও সময় ব্যয় করেছি। এসবের পিছনে ১০-১২ বছর ব্যয় করতে পারলে তবে কিছুটা শেখা যায়। আর এসময়ের শিক্ষার্থীরা বছর খানেক শিখে প্রোফেশনালিজম বাজাতে শুরু করে দেয়। তিনি বলেন তবুও শিখাচ্ছি একদিনতো নামটা বলবে যে সুনীল দার কাছ থেকে শিখেছি। বেহেলা বাজানো ওস্তাদ হিসেবে এই পাওয়াটাই আমার কাছে অনেক বড়।

তার কাছে জানতে পারলাম যে বেহেলার সুরে রবীন্দ্র সঙ্গীতের উপর একটি সিডি প্রকাশ করেছেন তার নাম ‘আমারও পরানো যাহা চায়’ মিউজিকের সাথে বেহেলার সুরে তিনি সিডি করেছেন। তিনি বলেন, এ কাজটি আমি একমাত্র করেছি বাংলাদেশে আর কেউ করেনি। এটা করেছি আমি ২০১৫-র শেষের দিকে।

তার কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যদিও কোন ব্যান্ডের সাথে যুক্ত থেকে কাজ করিনি তবু কেউ কোন দিন আমাকে চেয়ে ফেরত যায়নি। কেউ কোনদিন বলেনি যে সুনীলদাকে ডেকে পাইনি। সবার ডাকে সাড়া দিয়েছি সব সময়। আইয়ুব বাচ্চুর সাথে বাজিয়েছি। তার সাথে প্রায় ২৮ বছর আগে একটি এ্যালবামে কাজ করেছি তার নাম ছিল ‘ফেরারী মন’ অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলাম। চ্যানেল আইতে পাচঁ পর্বের একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল একবার সেখানে আমি আইয়ুব বাচ্চুর সাথে বাজিয়েছি। সুবীর নন্দীর গানের সাথে আমি একক বেহেলা বাজিয়েছি। প্রায় ১৫-১৬ হাজার গানের সাথে আমি বেহেলা বাজিয়েছি। অর্কেস্ট্রার সাথে বাজিয়েছি। একক ভাবে বাজালে বাজনাটা চিহ্নিত করা যায় সুনাম অর্জন হয় আর দলবদ্ধ ভাবে বাজালে সেটা হয় না। তার পর নগর বাউল জেমসের সাথে বাজিয়েছি। এবং শ্রেষ্ট যন্ত্রশিল্পী হিসেবে ১৯৯৬ সালে আমি পুরুস্কৃত হই। এবং ২০১৬তে সঙ্গীত মেলায় সম্মাননা দেয়া হয় বাংলাদেশ মিউজিক জার্নালিষ্ট ফোরামের মাধ্যেমে। কখনো টাকা পয়সার জন্য বাজাইনি বাজিয়েছি শুধু সম্মানের জন্য।

বাংলাদেশের মিউজিকের পরিবর্তনশীল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরির্তন হচ্ছে হবে। তবে কতটা লাষ্টিং করবে বলতে পারিনা। একটা গান করতে গেলে যখন গানের ধারাটাই নষ্ট হয়ে যায় বাজনার সাথে যদি গানের সাদৃশ্য না থাকে, তবে মানুষ কেন সেই গান শুনবে? গানে যদি মানুষ আনন্দ খুঁজে না পায় তাহলে সে গানের মান থাকেনা। মানুষ এ গান থেকে কোন কিছু মনে রাখার মত খুঁজে পায়না। তখন আস্তে আস্তে কালের গহিনে হারিয়ে যায়। বাঁশি, তবলা, বেহালা, সেতার, ঝাজড়া, গিটার, এগুলো একষ্টিক মিউজিক যাকে বলে ইন্সট্রোমেন্ট মিউজিক। এগুলোর যদি ট্রেনিং দিয়ে শিখানো যেত তাহলে গানের মান বজায় থাকতো। সবাই শর্ট টাইমে শিখা যায় এমন যন্ত্রের প্রতি আগ্রহ দেখায়। বছর খানেক বাজিয়ে যাতে টাকা পয়সা উপার্জন করা যায়। ভালো ধারনা না থাকলে কি বিভিন্ন গানের সাথে বাজানো যায়। অনেক সাধনা শ্রম, সময় দিয়ে তার পর একষ্টিক যন্ত্র শিখতে হয়।

সঙ্গীতাঙ্গনেরর মাধ্যেমে তিনি সবাইকে সুষ্টধারার গান ও বাজনা উপহার দেবার জন্য আহবান করে বলেন একটি একষ্টিক যন্ত্র শিখে যদি কেউ বাজায় তাহলে বহুদিন তার মান বজায় থাকবে। তাই সবাই সুষ্ট ধারার সঙ্গীত তৈরি করার জন্য একনিষ্ট হয়ে কাজ করতে হবে। আমরাও সুনীলদার সাথে একমত বাংলাদেশে সুন্দর মিউজিক আর ভালো বিনোদনের লক্ষ্যে কাজ করলে আবার ফিরে আসবে আমাদের নতুন সঙ্গীত ভুবনের সঠিক যাত্রা। ফিরে পাব গানের মাধ্যেমে সুখের অনুভুতি। সেই লক্ষ্যে সঙ্গীতাঙ্গন এর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো সব সঙ্গীত ভুবনের সঙ্গীত প্রেমীদের জন্য।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles