Saturday, April 20, 2024

সঙ্গীতাঙ্গন দিচ্ছে জটিল রোগের ফ্রি চিকিৎসা…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

মনে অবসাদ ? কিছুই ভালো লাগে না ? সম্পর্কে তিক্ততা ? চেপে ধরছে রোগ ? ওষুধ একটাই। সঙ্গীত। সঙ্গীতেই নাকি উধাও হবে রোগ। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের দাবি, সঙ্গীতে জাদু আছে। শরীরের জন্মগত রোগ সারাতে সঙ্গীত বা মিউজিক থেরাপির কোনও বিকল্প নেই। তারা বলছেন, সঙ্গীতে মস্তিষ্কের অকেজো কোষগুলি ক্ষণিকের জন্য হলেও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। শরীরকে চনমনে ও মনকে সুন্দর রাখতেও গান অপরিহার্য। নিয়মিত ২৫ মিনিট গান শুনলে ব্যাক পেইন অন্যত্র পাড়ি জমায়। পাওয়া যায় প্রশান্তির ঘুম। ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা বলেছে, মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে মিউজিক। মস্তিষ্কের ডোপামিনের প্রভাবেই এই ঘটনা ঘটে। এই ডোপামিনকে নিয়ন্ত্রণ করে মিউজিক। উচ্চ রক্তচাপ, ডিপ্রেশন, ঘুমে জড়তা বা স্মৃতি লোপের মতো অসুখ সারাতে মিউজিকের বিকল্প নেই। মস্তিষ্কের পেশি স্বাভাবিক রাখে। ফলে, স্ট্রোকের কারণে লোপ পাওয়া বাকশক্তি ফিরে পেতে এবং পারকিনসন্স রোগ থেকে ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ করা যায়। এ ছাড়া সিজোফ্রেনিয়া, অ্যামনেসিয়া, ডিমেনসিয়া, অ্যালঝাইমার্স রোগের দুর্দান্ত ওষুধ মিউজিক। গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত গান শুনলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সুন্দর হয়। গবেষকদের দাবি, গান শোনার পর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ বাড়ে; মনোযোগ এবং দক্ষতাও বাড়ে। অটিজম আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসায় মিউজিক থেরাপির জুড়ি নেই।

বিজ্ঞান বলছে, যারা গান আদৌ পছন্দ করেন না তাদের মস্তিষ্কের দুটি অঞ্চল শব্দ প্রক্রিয়াজাতকরন এবং প্রতিদান প্রদান এই দুটি অঞ্চলের সংযোগ সমস্যা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সঙ্গীত উপভোগ করেন না তারা মস্তিষ্কের বিশেষ ধরনের রোগে আক্রান্ত।
এই রোগের ফলে মস্তিষ্কের শব্দ প্রক্রিয়াজাতকরনকারী অঞ্চল কর্টিপক্যাল অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিদান প্রদানকারী অঞ্চল সাবকর্টিক্যাল অঞ্চলের কার্মিক সংযোগে ঘাটতি থাকে। সঙ্গীতের আনন্দ উপভোগ করার এই অক্ষমতায় আক্রান্ত হন বিশ্বের ৩-৫% মানুষ। কানাডার কুইবেকের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় এই রোগটির এসব বিষয় উদঘাটিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সঙ্গীতের আনন্দ উপভোগে অক্ষম তাদের মস্তিষ্কের উল্লিখিত দুই অঞ্চলের মধ্যে সংযোগে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। বিপরীতে যারা সঙ্গীতের প্রতি উচ্চমাত্রায় সংবেদনশীল তাদের ওই দুই অঞ্চলের সংযোগ জোরালো হচ্ছে।
এই গবেষণার ফলে ব্যক্তিভেদে মস্তিষ্কের প্রতিদান প্রদান পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে তা আরো সহজে বোঝা যাবে। এছাড়া এটি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের প্রতিদান-সংশ্লিষ্ট রোগগুলোর চিকিৎসা পদ্ধতিও আবিষ্কার সম্ভব হবে।
এই রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ঔদাসীন্য, অবসাদ এবং আসক্তি। এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী রবার্ট জাটোরে। প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles