Tuesday, April 23, 2024

জনপ্রিয় গুণী শিল্পী সমরজিৎ রায়ের আজ জন্মদিন…

– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।

সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সমরজিৎ রায়, ভারত এবং বাংলাদেশে রয়েছে যাঁর সমান জনপ্রিয়তা। একজন আদর্শ সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতশিক্ষক সমরজিৎ রায়। আজ ১লা আগস্ট এই তরুণ সঙ্গীত শিল্পীর শুভ জন্মদিন।
সমরজিৎ রায়ের জন্ম কক্সবাজারের চকরিয়ায়। তাঁর বাবা নেপাল চন্দ্র রায় একজন স্বনামধন্য শিক্ষক, মা রত্না রায় গৃহিণী। বড় দুই ভাই বিশ্বজিৎ রায় ও সত্যজিৎ রায় পেশায় চিকিৎসক এবং ছোট বোন শর্মিলা রায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। জন্মদিনের ঠিক আগেই এই ঈদে প্রকাশিত হলো “সত্যি ভালোবাসি” শিরোনামে সমরজিৎ এর দ্বৈত কন্ঠের নতুন মৌলিক গান। এতে তাঁর সঙ্গে কন্ঠ দিয়েছেন পুনম ঘোষ। গানটির সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন সমরজিৎ নিজেই। গানের কথা লিখেছেন মিজানুর রহমান সামি।

জন্মদিন উপলক্ষ্যে সঙ্গীতাঙ্গনের সাথে কথা হয় শিল্পী সমরজিৎ রায়ের। জন্মদিনের কোন অনুষ্ঠান হবে কিনা জানতে চাইলে জবাবে বলেন, আমি ঘটা করে কোনদিনই নিজের জন্মদিন পালন করিনি। জন্মদিনে অগণিত ভক্ত এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে শুভ কামনা জানান, এতেই আমি যথেষ্ট খুশি। করোনার কারণে এখন মানুষের জীবনধারা একেবারেই অন্যরকম হয়ে গেছে। অবশ্য টানা ৪ মাস ধরে গ্রামের বাড়িতে বাবা মার সঙ্গে কাটাতে পারছি, এটাও জীবনের বড় প্রাপ্তি। এবারের জন্মদিন কাটছে বাবা মার সঙ্গেই এবং আজ ঈদের দিন, সবাইকে ঈদ মোবারক। জন্মদিনের রাতে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব রবিশঙ্কর মৈত্রীর সঞ্চালনায় “সহজ মানুষ” এর ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে আসবো ভক্তদের গান শোনাতে। তাছাড়া জন্মদিনের পরের দিন “আই নিউজ” এর ফেসবুক পেইজ থেকে রাতে লাইভে গান শোনাবো উপমহাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা দিদি এবং আমি।” এছাড়াও সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকার ফেসবুক লাইভে থাকবো ৪র্থ অগোস্ট রাত ৯টায়।

সমরজিৎ এর সঙ্গীত জীবনের প্রথম গুরু হলেন চট্টগ্রাম আর্য্য সঙ্গীতের উপাধ্যক্ষ পন্ডিত নির্মলেন্দু চৌধুরী। এরপরে তিনি সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পদ্মশ্রী পন্ডিত মধুপ মুদ্গল এবং পদ্মভূষণ পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী সহ আরো অনেকের কাছে। ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে দিল্লীর গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে উচ্চতর ডিগ্রী নেন সমরজিৎ। সারা ভারতবর্ষের গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিশারদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি অর্জন করেন বেশ কিছু সাম্মানিক এওয়ার্ড, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পন্ডিত ডি.বি পলুস্কর এওয়ার্ড, হরি ওম ট্রাস্ট এওয়ার্ড, সঙ্গীতা বসন্ত বেন্দ্রে এ্যাওয়ার্ড, বাসুদেব চিন্তামন এওয়ার্ড, নলিনী প্রতাপ কানবিন্দে এ্যাওয়ার্ড, সুশীলা এ্যাওয়ার্ড, সুখবর্ষা রায় এ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি। তাছাড়া তিনি ভারতের চন্ডীগড়ের প্রাচীন কলাকেন্দ্র থেকেও তবলা এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উপর ‘সঙ্গীত বিশারদ’ ডিগ্রী নেন।

শিল্পী সমরজিৎ যে সমস্ত গুণী সঙ্গীতজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন এবং একান্ত সান্নিধ্য পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মান্না দে, মৃণাল চক্রবর্তী, অনুপ জলোটা, পন্ডিত যশরাজ, পন্ডিত শিবকুমার শর্মা, পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া,ওস্তাদ জাকির হোসেন, জগজিৎ সিং, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, নির্মলা মিশ্র, হৈমন্তী শুক্লা,অজয় দাস, বটকৃষ্ণ দে, শ্রাবন্তী মজুমদার প্রমুখ। ভারতের দূরদর্শন চ্যানেলে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। সমরজিৎ ‘ডিডি ভারতী’ চ্যানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে। জার্মানী, বেলজিয়াম, ভারত সহ অনেকগুলো দেশের বিভিন্ন সাম্মানিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান তিনি। ভারতে মৈথিলী ভাষার ‘মুখিয়া জী” ছবিতে সমরজিৎ প্রথম প্লেব্যাক করেন। সমরজিৎ এর প্রথম হিন্দী এলবাম ‘তেরা তসব্বুর’ ২০১১ সালে ভারতের জিমা এওয়ার্ডে “সেরা জনপ্রিয় এ্যালবাম “বিভাগে মনোনয়ন পায়। “অচেনা একটা দিন’ শিরোনামের বাংলা এ্যালবামে সমরজিতের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় কিছু গান করেন কিংবদন্তী শিল্পী অনুপ জলোটা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের এ্যালবাম “রবি রঞ্জনী” এবং হিন্দী গানের এ্যালবাম “প্রতিধ্বনি” ও “ফিকর” এর মোড়ক উন্মোচন করেন যথাক্রমে প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রখ্যাত শিল্পী অনুপ জলোটা এবং ঊষা উত্থুপ প্রমুখ। বিভিন্ন এ্যালবামে সমরজিতের সঙ্গে দ্বৈত কন্ঠে গান করেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা, বলিউডের জনপ্রিয় শিল্পী অন্বেষা দত্তগুপ্ত, রূপরেখা ব্যানার্জী, সঞ্চিতা, প্রিয়াংকা গোপ সহ অনেকেই। বাংলা গানের কিংবদন্তী গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা এবং কিংবদন্তী সুরকার অজয় দাসের সুরে ৪ টি গান এবং কিংবদন্তী শিল্পী ও সুরকার মৃণাল চক্রবর্তীর কথা ও সুরে ৭ টি গান সমরজিৎ তাঁর মৌলিক গান হিসেবে পেয়েছেন, এটা নিঃসন্দেহে তাঁর সঙ্গীত জীবনের অনেক বড় পাওয়া। সমরজিৎ এর কথা, সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় কিংবদন্তী শিল্পী হৈমন্তী শুক্লার সঙ্গে গাওয়া দ্বৈত কন্ঠের গান “তুমি ভোরের পাখির মতো” ভীষণ শ্রোতাপ্রিয় হয়। বাংলা ও হিন্দীতে সমরজিতের প্রকাশিত এ্যালবামগুলো হলো “তেরা তসব্বুর”/ “অচেনা একটা দিন”/ “রবি রঞ্জনী”/ “এক চিলতে রোদ”/ “প্রতিধ্বনি”/ “ফিকর”/ “গোধূলিবেলা”। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর অসংখ্য একক গান। মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, চরণ সিং সহ ভারতের ভূতপূর্ব অনেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকারিভাবে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবে অংশ নিতেন সমরজিৎ, যেসব অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন সময়ের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ উপস্থিত থাকতেন।

সমরজিৎ দীর্ঘ সময় ধরে দিল্লীর গান্ধর্ব মহাবিদ্যালয়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন।
বাংলাদেশে “আরটিভি স্টার এ্যাওয়ার্ড ২০১৫” এর সম্মান পান তিনি।
আগেকার দিনের এবং বর্তমানের সঙ্গীতের মধ্যে তফাৎ জানতে চাইলে শিল্পী জানান, আসলে আগেকার দিনের বেশিরভাগ শিল্পীরাই সংগীতে যথাযথ ভাবে তালিম নিয়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে গলা তৈরি করে তারপর গান করতেন, তাই হয়তো এখনো পুরোনো দিনের গানগুলোই শুনতে আমাদের বেশী ভালো লাগে। কিন্তু আজকাল মনে হয় শ্রোতাদের চেয়ে শিল্পীদের সংখ্যাই বেড়ে গেছে। এটা যদিও খুব ইতিবাচক, তবুও আমি বলবো গানকে যদি প্রফেশনালী আমরা নিতে চাই তবে অবশ্যই এটার প্রতি অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সাধনার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। উপযুক্ত গুরুর কাছে তালিম নিয়ে সাধনা অব্যাহত রাখতে হবে। শেখার কোন শেষ নেই। শিখে-জেনে গাওয়া এবং না শিখে-না জেনে গাওয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই একটি ব্যবধান সবসময়ই থাকে। শিল্পী এবং শ্রোতাদের সেটা বোঝার ক্ষমতাও রয়েছে।”

সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে শিল্পী সমরজিৎ রায়ের জন্মদিনে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইলো। শুভ জন্মদিন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles