– মোশারফ হোসেন মুন্না।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা দেওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ এবং ‘নোঙর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’ কালজয়ী এ দুটি সহ এমন অনেক গানের গীতিকবি নয়ীম গহর। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার লেখা গণজাগরণী গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। ২০১২ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত নয়ীম গহর একাধারে গীতিকার, ঔপন্যাসিক, গায়ক, নায়ক, নাটক রচয়িতা, বিবিসির বাংলা ভাষ্যকার, খবর পাঠকসহ নানা প্রতিভার অধিকারী হওয়ার পরও ছিলেন প্রচারবিমুখ। ছাত্রজীবনেও অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ভালো চিত্রকরও ছিলেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি আজীবন সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। সর্বমহলে পরিচিতি পেয়েছিলেন আধুনিক ও মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণী গান রচনার মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালে রক্তঝরা দিনগুলোতে তার লেখা ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’, ‘সাগর পাড়িতে ঝড় জাগে যদি’, ‘পুবের ঐ আকাশে সূর্য উঠেছে’, ‘জয় জয় জয় জয় বাংলা’সহ অন্যান্য গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্ত-স্বাধীন একটি দেশ গড়ার।
দেশাত্মবোধক গানের পাশাপাশি তিনি দুই শতাধিক গানের কথা লিখেছেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি সংস্কৃতির অন্যান্য শাখাতেও নিজস্ব সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তার রচিত প্রথম নাটক ‘পাখি আমার জয়ন্ত’ বিটিভিতে প্রচারিত হয়। কিন্তু এমন মহান মানুষটির পরিবার আজ ভালো নেই। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর বার্তা লেখক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের লেখক নয়ীম গহরের পরিবার আজ চরম অর্থসংকটে। তার সহধর্মিনী রিজিয়া গহর, মরণব্যাধী ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন। ২০১৬ সালে তার পরিবারকে প্লট বা ফ্ল্যাট দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ২৫ লাখ টাকা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় আজও প্রধানমন্ত্রীর উপহার বুঝে পাননি তারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র নিজ হাতে লিখেছেন নয়ীম গহর। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনে যেমন ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বিশেষ দূত তেমনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বহন করেছেন বঙ্গবন্ধুর বিশেষ বার্তাও। তবে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সনদ না নেয়া এই মানুষটির বার্তা বহন করেছে কে কবে ? কেউ কি রেখেছে খোঁজ তাঁর পরিবারের ?
ভালো যে নেই তার সহধর্মিনী রিজিয়া গহর। জীবন পার করছেন নিদারুন অর্থসংকটে লড়ছেন মরণব্যাধী ক্যান্সারে ও পারকিনসন রোগে। এ তথ্য জানা মাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গীতিকবি নয়ীম গহরের অসুস্থ স্ত্রী রাজিয়া গহরকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। যদিও পাঁচ বছর আগে পার্থিব মায়া ত্যাগ করেছেন নয়ীম গহর তবে তিনিও কি চেয়েছিলেন স্বাধীন দেশে পরিবারের এমন মানবেতর জীবন ? যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বরে নয়ীম গহরের পরিবারকে দেয়া হয় রাজউকের একটি প্লট বা ফ্ল্যাট। কিন্তু কাগজে কলমে সাড়ে তিন বছরেও তা পাননি বুঝে…রয়ে গেছে তা মৌখিক আশাতেই। আবারও সেই আশার বাণী প্রধানমন্ত্রীর। জানিনা এবারো কি তা আগের মতোই হবে নাকি আশার স্বপ্ন রেখা কেটে গিয়ে সত্যিই পাবে সেই উপহার। আর উপহারটা পেলো কি পেলোনা জানতে চোখ রাখি সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকায়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, করোনায় সাবধানতা অবলম্বন করুন।