– মোশারফ হোসেন মুন্না।
১৯৭২ সালের ১লাআগষ্ট বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আজকের ‘অঞ্জনা’খ্যাত জনপ্রিয় শিল্পী মনির খান। শৈশব-কৈশর সেখানেই কেটেছে। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল। এলাকার অনেক ওস্তাদের কাছে তিনি গান শিখেছেন। তবে সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয় মূলত ওস্তাদ রেজা খসরুর কাছে এমনটাই বলেন শিল্পী মনির খান। পরবর্তীতে স্বপন চক্রবর্তী, ইউনুস আলী মোল্লা, খন্দকার এনায়েত হোসেনসহ আরও কয়েকজন ওস্তাদের কাছে তিনি গানের তালিম নিয়েছেন। তবে সঙ্গীতের ভিত্তি গড়ে উঠেছে মূলত ওস্তাদ খন্দকার এনায়েত হোসেনের কাছে। মিল্টন খন্দকারের জন্মদিনে কথা হয় মনির খানের সাথে। তিনি বলেন প্রফেশনাল শিল্পী হিসেবে ১৯৮৯ সালে খুলনা রেডিওতে অডিশন দিয়ে আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। ১৯৯১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এখান থেকে এন. ও. সি নিয়ে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে বিভিন্ন ওস্তাদের কাছেও গান শিখেছি। এর মধ্যে রয়েছেন আবু বক্কার সিদ্দিক, মঙ্গল চন্দ্র বিশ্বাস, সালাউদ্দীন আহমেদ, অনুপ চক্রবর্তীসহ অনেক ওস্তাদ। ঢাকায় গান করতে এসে পরিচয় হয় জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার মিল্টন খন্দকারের সঙ্গে। সেখান থেকেই সঙ্গীতে আমার ভ্যাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে।
তার গানের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলাম। বলতে পারেন তার গানের ভক্ত ছিলাম। মনে মনে ভাবতাম কোনদিন যদি তার সঙ্গে দেখা করা যেত। একদিন বেতারের বারান্দা দিয়ে যাচ্ছিলাম একজন মিল্টন ভাই বলে ডাক দিল। আমি বুঝে গেলাম এটাই মিল্টন ভাই। দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। তিনি বললেন, তুমি কে ? পরিচয় দিলাম এবং বললাম আমি ঢাকা এসেছি একটি এ্যালবাম করতে। তিনি বাসার ঠিকানা দিয়ে বাসায় যেতে বললেন। তাকে খুলে বললাম আমার বাবা স্কুল শিক্ষক। তিনি আমাকে একলাখ টাকা দিয়েছেন একটি এ্যালবাম করতে। আপনি সুযোগ দিলে এ্যালবাম করতে চাই। তিনি আমার গান শুনলেন। গান শুনে বললেন, ভালো গাও কিছু বিষয় তোমাকে ঠিক করতে হবে। রাজি থাকলে তোমার এ্যালবাম করবো। তোমার কোন টাকা লাগবে না। তুমি তোমার বাবার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আসো। আমি অবাক হয়েছিলাম তার কথা শুনে। এইতো তার কাছে আসা যাওয়া করতে থাকলাম। বিভিন্ন উচ্চারণসহ আমাকে সঙ্গীতের খুঁটিনাটি কাগজে নোট করে দিতেন। আমি পরেরদিন সেগুলো ইমপ্রুভ করে দেখাতাম। এভাবে করতে করতে আমার প্রথম এ্যালবাম ‘তোমার কোন দোষ নেই’ রিলিজ হলো। এই এ্যালবাম আমাকে শিল্পী মনির খান হিসেবে চিনিয়েছে। আজকের মনির খান হওয়ার পেছনে আমার বাবার অবদান রয়েছে। কিন্তু সঙ্গীতে যিনি আমাকে নবজন্ম দান করেছে তিনি হলে শ্রদ্ধেয় ‘মিল্টন খন্দকার’। তিনি আমার সঙ্গীতের পিতা। তার জন্ম না হলে মনির খান হয়তো আজকের মনির খান হতো না। মনির খানের কথা শুনে মিল্টন খন্দকারের জন্য শ্রদ্ধাটা আরো বেড়ে গেলো। মিল্টন খন্দকারের জন্মটা হয়তো আমার জন্য হয়েছে। আজ সেই সঙ্গীত পিতার জন্মদিন। আল্লাহপাকের কাছে তার সুস্থ জীবনের প্রার্থনা করি। সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আমার উপর ছাঁয়া হয়ে আছেন মিল্টন খন্দকার। তার সঙ্গ পাওয়া আমার সৌভাগ্য। তার উপদেশ আমার জীবনের চাবি। তাই সব সময় তার কথা মেনে চলতে চেষ্ঠা করি। আল্লাহ তাকে দীর্ঘ হায়াত দান করুক। বেচেঁ থাকুন হাজার বছর। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে মনিরখানের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মিল্টন খন্দকারকে জানাই শুভ জন্মদিন।