Friday, April 19, 2024

আমরা লাকী ভাইকে মূল্যায়ন করতে পারিনি…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

বাংলাদেশের আধুনিক ও ব্যান্ড সঙ্গীত কতটা সমৃদ্ধ এবং কত অসাধারন মেধাবীরা এই অঙ্গনে কাজ করেছিলেন সেটা যারা বাংলাদেশের গানের ভাণ্ডারে প্রবেশ না করবে তারা বুঝবে না। এই বাংলাদেশের আধুনিক ও ব্যান্ড সঙ্গীতের মাঝে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বসেরাদের তালিকায় ঠাঁই করে নেয়ার মতো একাধিক মেধাবীরা রয়েছিল যাদের আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি। বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের আকাশে যে ক’জন মেধাবী উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে চিরদিন জ্বলজ্বল করবে তাঁদের মধ্যে ‘লাকী আখন্দ’ অন্যতম। এমন করেই বলছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিক কম্পোজার পার্থ মজুমদার। তিনি বলেন, লাকী আখন্দের সুর করা প্রতিটি গানের কথার উপর সুরের যে প্রভাব তা যে কাউকেই সহজে মুগ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস। লাকী আখন্দকে তাই সুরের বরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না। সুর ও সঙ্গীতায়োজনের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনে তিনি কিংবদন্তী। সফট্‌-মেলোডি, মেলো-রক, হার্ড-রক যেটাতেই হাত দিয়েছেন সেটাই হয়ে উঠেছে এক একটি মাষ্টারপিস।

লাকী আখন্দ’সহ আরও অনেক শিল্পীর অনেক অনেক জনপ্রিয় গান, বাংলা সঙ্গীতের এই কিংবদন্তীর সুরারোপ ও সঙ্গীতায়োজনে করা। ছোট ভাই হ্যাপি আখন্দের চলে যাবার পর অনেকদিন গান থেকে দুরে ছিলেন। কিন্তু সুরের টানে ফিরে আসেন গানের মাঝে। সঙ্গীতভক্ত শ্রোতাদের সৃষ্টির বেদনায় ভাসাতে আবারও দু’টি হাত মেলে দিয়ে ধরেন সেই পুরোনো কীবোর্ডস, কথার পরতে পরতে সাজান সঙ্গীতের অপার্থিব স্বরলিপি। আর কথামালাগুলো সুরের ওম পেয়ে মেতে উঠে সৃষ্টির উল্লাসে। পার্থ মজুমদার বলেন, লাকী আখন্দ শুধু একজন উঁচু মানের শিল্পী নন একজন সুরকারও বটে। লাকী আখন্দ কেমন সুরকার তা জানতে লাকী আখন্দের নিজ কণ্ঠের ও অন্য শিল্পীদের গাওয়া সব গান বাদ দিয়ে শুধু যদি ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ এ্যালবামটি শুনলেই হবে। দীর্ঘদিন গান থেকে দূরে থাকার পর ১৯৯৮ সালে ফিরলেন নিজের একক ‘পরিচয় কবে হবে’ এ্যালবাম দিয়ে আর অন্য শিল্পীদের দিয়ে তৈরি করলেন ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ নামের একটি চিরস্মরণীয় অতুলনীয় এ্যালবাম । ১৯৯৮/৯৯ সালের দিকে ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ প্রকাশিত হয় সাউন্ডটেক থেকে যা প্রকাশের সাথে সাথেই শ্রোতাদের মাঝে আলোড়ন তোলে। এতে শিল্পীরা ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান, তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ ও সামিনা চৌধুরী। অর্থাৎ বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক গানের দেশসেরা ৬ জন শিল্পী যারা দু’টি ধারার গানে নিজেদের চিরস্মরণীয়দের তালিকায় নিয়ে গেছেন ততদিনে। সেই ৬জন শিল্পীর দু’টি করে ১২টি গান যেন নান্দনিক কোন প্রেমকাহিনী হয়ে ধরা দিলো। এ্যালবামটি প্রথম দিন শোনার পর ভাবছিলাম সম্ভবত ভুলবশত ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ রাখা হয়েছে, এ্যালবামের নাম হওয়া উচিৎ ছিল ‘নান্দনিক জীবন আমার’ কারণ কথা, সুর, কম্পোজিশন, গায়কি মিলিয়ে ১২টি গানই মুগ্ধ করা মন শীতল করা গান, যা হাজারবার শুনলেও পুরনো হবে না কোনদিন।

পার্থ মজুমদার আরও বলেন যে, মহান এই মানুষটি সঙ্গীতজগৎকে এতকিছু দিয়ে গেলেন কিন্তু সে জীবনে এসে এই সঙ্গীত তাকে কিছুই দিতে পারল না। আফসোসের বিষয় হলো আমরা বাংলাদেশ সঙ্গীত, সংস্কৃতিকে তেমন গুরুত্ব দেইনা। যেই দেশে সংস্কৃতি-সাহিত্যকে প্রাধান্য দিবে না সেই দেশ কখনো উন্নতি করতে পারবে না। লাকী ভাই এর জীবনের শেষ কনসার্ট ছিল ওয়েস্টিন হোটেলে। তিনি তখন অসুস্থ থেকে কিছুটা সুস্থ হয়েছিলেন। সেদিন
আবেগভরা মন নিয়ে একটা গান গেয়েছিলেন যে গান শুনে আমরা সবাই কেঁদেছিলাম। গানটি ছিলো “এ জ্বালা আর সইতে পারিনা” আসলে শিল্পীদের আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনা। আমরা এমন এক জাতি। যাই হোক তিনি চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে, তার কষ্ট নিয়ে। অভিমানি মানুষটি আর কোনদিন আসবে না। সহজ সরল মানুষটি আর কোনদিন গান করবেনা। সুরের খেঁয়া আর ভাসবেনা। যদিও তার সাথে কাজ করিনি, কিন্তু প্রায় সময় যেতাম। দেখতে তার কাজের ধরণ। এত কেয়ারফুল ছিলেন গানের ব্যাপারে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো না। আমরা আজকের এই দিনে তার জন্য প্রার্থনা করি। ভালো থাকুক তিনি। আমরা মনে রেখেছি তাকে। মনে রাখবো যতদিন বাঁচি। কারণ এতো ভালো মানুষকে ভুলে যাই কি করে। লাকী ভাইকে ভুলে যাওয়া মানে সঙ্গীতের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। লাকী ভাই স্বর্গবাসী হোক। তার জন্য শুভ কামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles