– শাহরিয়ার খান সাকিব।
আজকের চারা গাছ আগামীর সম্পদ। এই উক্তির সাথে সবাই পরিচিত। কারণ আমরা আমাদের নিজেদের উপকারের জন্যই চারা গাছ রোপন করি। গাছ হয় কাঠ দেয় নয় ফল দেয় আর নয়তো ঔষধ তৈরির উপদান হয়। কিন্তু আমরা কি এমন কোন চারাগাছ রোপন করি যা আমাদের ছাঁয়ার কাজেও আসে না ? উত্তরটা হবে! না। আমরা চারাগাছ রোপন করি কোন না কোন আশা নিয়ে। কিন্তু সঙ্গীতাঙ্গন এর প্রধান সম্পাদক জনাব মোঃ আহসানুল হক এমন এক চারাগাছ রোপন করেছেন আজ থেকে ২৯ বছর আগে, যে চারাগাছ বড় হয়ে তার কোন কাজে আসবে না। তার কোন উপকার হবে না। অন্যের ভালোর জন্য অন্যের উপকারের জন্য। দেশের সেবার জন্য তিনি রোপন করেছেন সেই চারাগাছ। এবার ভাবুন তো! যে ব্যাক্তি অপরের কল্যাণে ২৯ বছর ধরে একটা গাছের প্রতিপালন করেছে, যে গাছ আজ ছাঁয়া দিয়েছে সারা বাংলাদেশকে। যার শাখা প্রশাখায় ধরেছে হাজারো সঙ্গীতের ফুল। সেই মানুষটিকে কতটা সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা উচিত! সেই গাছটির নাম “সঙ্গীতাঙ্গন ” যা আজ সারা বাংলাদেশের কাছে শুধু নয় দেশের বাইরেও আছে এর সুনাম।
যেদিন মানুষের পেশি শক্তির সাথে কন্ঠ শক্তি মিলে সঙ্গীতকে অস্ত্র হিসেবে নিয়ে পরাশক্তির সাথে যুদ্ধে নেমেছিলো। হারিয়ে ফেলেছিলো মন থেকে বেচেঁ থাকার আশা। লক্ষ ছিলো পূর্ব পাকিস্তান নয় বাংলাদেশ নামে একটা ভূখন্ড তৈরি করার। সেই ভয়ংকর সময়ে সঙ্গীত আমাদের পাশে ছিলো। আর যখন আমরা আমাদের ভূখন্ডকে স্বাধীন করে বিশ্ব মানচিত্রে নাম লিখিয়েছি আমরা বাঙ্গালী। আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। তখন আমরা কি সেই মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাদের অস্ত্র গুলোকে সম্মান দেইনি ? দিয়েছি। দেশের নাম সহ বিভিন্ন নামে বাংলাদেশে হাজারো পত্র পত্রিকা তৈরি হয়ে যায়। স্বাধীন দেশে ২১ বছর চলে যাবার পরও সঙ্গীতকে ঘিরে যখন কোন পত্রিকা হলো না। মনের বিবেকটা তখন নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো। সঙ্গীত কি আমাদের কাছে এতটাই মূল্যহীন ? স্বাধীনতার ২১ বছর কেটে গেলো অথচ শুধু সঙ্গীতের জন্য কেউ এগিয়ে এলোনা! সেই বিবেকের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আহসানুল হক শুধু সঙ্গীতকে ঘিরে। সঙ্গীতের জন্য। বাংলা সংস্কৃতির পূর্ব ধারাকে ইতিহাসের কাছে চিরদিনের জন্য খোদাই করে লিখে দেবার প্রয়াসে ১৯৯২ সালে তৈরি করেন সঙ্গীত বিষয়ক পত্রিকা “সঙ্গীতাঙ্গন!” সর্বপ্রথম সঙ্গীত বিষয়ক বাংলাদেশের একমাত্র পত্রিকা। এর আগে ১৯৮৫ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার ১৪ বছর পর তাঁর ভাই এর সাথে তৈরি করেছিলেন সং হিটস (Song Hits) নামে সঙ্গীত বিষয়ক একটি ইংরেজি পত্রীকা। সঙ্গীত শ্রদ্ধা নিবেদন সেই মহান মানুষটির জন্য। যার হাতে হাত রেখে সঙ্গীতাঙ্গন চলছে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। এখন হার্ডকপি হিসেবে ২৯ বছরের যাত্রা চলছে সঙ্গীতাঙ্গন এর। কিন্তু অনলাইনে ডিজিটাল ভাবে পথ চলার ৮ বছর।
আজ ৩১শে মে। অনলাইন হিসেবে আজ সঙ্গীতাঙ্গন এর ৮ম জন্মবার্ষিকী।
সঙ্গীতাঙ্গন এর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের পপ সঙ্গীতের কিংবদন্তী সুরকার ও কি-বোর্ডিষ্ট ফিডব্যাক এর কর্ণধার ফুয়াদ নাসের বাবু। তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের বয়স হিসেবে তুলনা করলে স্বাধীনতার পর সর্বপ্রথম সঙ্গীতের হাল ধরেছে সঙ্গীতাঙ্গন। সেহেতু আমার মতে এটি একটি বাংলাদেশ প্রাচীন পত্রিকা। সঙ্গীতাঙ্গন সঙ্গীতকে যে ভাবে লালন করে আসছেন এটা নজিরবিহীন ঘঠনা। নিঃস্বার্থভাবে সঙ্গীতের জন্য এভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশে নয় শুধু সারা বিশ্বে এমন স্বার্থহীন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি সঙ্গীতাঙ্গন ছাড়া নাম্বার ওয়ান সঙ্গীত পত্রিকা আর দেখিনা। সঙ্গীতের সকল শাখায় থেকে সঙ্গীতকে এগিয়ে নিতে সঙ্গীতাঙ্গন সর্বক্ষণ কাজ করে যাচ্ছে। আমি মন থেকে চাই সঙ্গীতাঙ্গন বাংলার প্রতিটি মানুষের মনে জায়গা করে নিক যেভাবে বাংলা সঙ্গীতকে নিয়েছে। সঙ্গীতাঙ্গন এর পাঠক-পাঠিকা যারা আছেন তাদেরকে সঙ্গীতাঙ্গন এর জন্মদিনে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা সঙ্গীতাঙ্গন এর পাশে থাকুন। আমি আমরা সবাই সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে থাকলে বিশ্বাস করি সঙ্গীতাঙ্গন একদিন বাংলাদেশ নয় বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিবে। সেই শুভ কামনায় সঙ্গীতাঙ্গন এর সকল কলাকুশলীদের জানাই শ্রদ্ধা ও মন থেকে ভালোবাসা।
সঙ্গীতাঙ্গনকে সঙ্গীতের বাতিঘর হিসেবে অবহিত করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক কবি সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ ফরায়জি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এটাই একমাত্র পত্রিকা যে শুধুমাত্র সঙ্গীতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিগত ২৯ বছর ধরে। যাদের অনলাইন কার্যক্রম ৮বছরে সঙ্গীতকে দিয়েছে অনেক কিছু। সঙ্গীতে যারা কাজ করেন। যারা শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, বাদক এমনকি যারা সঙ্গীতের সহযোগীতায়ও আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করেন সঙ্গীতাঙ্গন। আমার বিশ্বাস সঙ্গীতাঙ্গন সঙ্গীতের বাতিঘরে রুপ নিয়েছে এবং ভবিষৎ-এ সঙ্গীতের কোষাগার হয়ে থাকবে। সঙ্গীতাঙ্গন বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন, কনসার্ট, প্রতিযোগীতা, লাইভ শো ইত্যাদিতে বিশেষ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এভাবে সঙ্গীতের জন্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। আমার ব্যাক্তিগত মতামত থেকে সঙ্গীতাঙ্গনকে স্যালুট জানাই। একদিন সঙ্গীতাঙ্গন দেশের শুদ্ধসঙ্গীতের বিকাশ ঘটাবে। স্থান করে নিবে সঙ্গীতের হৃদয়ে। যারা সঙ্গীতাঙ্গন-এ কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে অন্তর থেকে ভালোবাসা জানাই। দোয়া করি যাদের চেষ্ঠায় সঙ্গীতাঙ্গন আজ এই পর্যন্ত এসেছে তারাও যেনো তাদের সঠিক সম্মান লাভ করতে পারেন। শুভ জন্মদিন সঙ্গীতাঙ্গন।
সঙ্গীতাঙ্গন এর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে রেঁনেসা ব্যান্ড এর নকীব খান বলেন, সঙ্গীত যেমন ভালোবাসি তেমনি ভালোবাসি সঙ্গীতাঙ্গনকে। সঙ্গীতাঙ্গন আমার দেশের পত্রিকা সঙ্গীতাঙ্গন আমার পত্রিকা। দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে ছিলাম এখনো আছি এবং ভবিষ্যৎ-এও সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে থাকব যতদিন বেঁচে থাকব। আমরা যারা সঙ্গীতকে নিয়ে কাজ করি আমরা যারা সঙ্গীতকে ভালবাসি আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সঙ্গীতাঙ্গনকে ভালোবাসা সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকার সাথে থাকা সঙ্গীতাঙ্গনকে সহযোগিতা করা সঙ্গীতাঙ্গনকে আরো সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দেওয়া। যে পত্রিকা দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে সঙ্গীতের জন্য কাজ করে যাচ্ছে আমরা কেন তাদেরকে সহযোগিতা করবো না ? কেন আমরা তাদের পাশে থাকবো না ? আমাদের উচিত হবে সঙ্গীতকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে সঙ্গীতাঙ্গনকেও বাঁচাতে হবে। কেন নয়, সঙ্গীতাঙ্গন সঙ্গীতের রক্ষক। একমাত্র সঙ্গীতাঙ্গনে সঙ্গীতকে বাঁচানোর জন্য সঙ্গীতের জন্য কাজ করতে সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। আমি সঙ্গীতাঙ্গন এর সফলতা কামনা করি সঙ্গীতাঙ্গন এর পাঠক-পাঠিকাকে ধন্যবাদ জানাই এবং যারা সঙ্গীতাঙ্গন এর কলাকুশলী আছেন সবাইকে আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। ভালো থাকবেন সবাই।
সঙ্গীতাঙ্গন এর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় জাদুঘর এর মহাপরিচালক মোঃ শওকত আলী। তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকা বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সঙ্গীতবিষয়ক পত্রিকা। এদের বিভিন্ন কালচারাল অনুষ্ঠান কনসার্ট বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে সঙ্গীতাঙ্গন সঙ্গীতের ধারক হিসেবে আছেন। সঙ্গীতের সকল কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। সঙ্গীতাঙ্গন আমার জানামতে একমাত্র পত্রিকা যারা শুধু সঙ্গীত নিয়েই কাজ করেন। করোনাকালীন সময়ে তারা পাশে দাঁড়িয়েছেন অর্থসংকটে পড়া মিউজিশিয়ানদের। আমার কাছে এটি সত্যিই চোখে পড়ার মতো। সঙ্গীতাঙ্গন এর মত সঙ্গীতকে ভালবেসে এভাবে কাজ করে যাওয়া আমি এই প্রথম দেখলাম। সঙ্গীতাঙ্গন এর জন্য আমার দোয়া রইল। সঙ্গীতাঙ্গন এগিয়ে যাক। আরো বড় বড় প্রোগ্রাম করে সঙ্গীতাঙ্গন সঙ্গীতে টিকে থাকুক অনন্তকাল। শুভ জন্মদিন সঙ্গীতাঙ্গন। এর সাথে জড়িত সকল কলাকুশলীদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ভালো থাকুক সবাই।
সঙ্গীতাঙ্গন সবার ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছে। আর কিছুই চাওয়ার নাই। সবার ভালোবাসাই সঙ্গীতাঙ্গন এর পরম পাওয়া। বাংলা সঙ্গীতকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সঙ্গীতাঙ্গন এর পথ চলা শুভ হোক। সবার সহযোগিতা কামনা করি। দোয়া চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর জন্য। ভালো থাকুন সবাই। ভালো রাখুন সবাইকে।