Friday, March 29, 2024

করোনা’র যত কথা…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।
সম্পাদক।

সুপ্রিয় সঙ্গীতাঙ্গন এর পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে জানাই বিশ্ব আলোরণ সৃষ্টি কারি ভাইরাস করোনা থেকে মুক্তির প্রার্থনা ও শুভকামনা। সময়টা তত বেশি ভালো নয়। সবাই কম-বেশি অতঙ্কিত আছেন মহামারী এই করোনা নিয়ে। বিপদে ধৈর্য হারানো আর যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে প্রতিপক্ষ সৈন্যের ভয়ে পলায়ন করা একই রকম। সবাই বিপদে মাথা ঠান্ডা করে সু-নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণই পারে বিপদ থেকে রক্ষার পাথেয় হতে। আজ সঙ্গীতাঙ্গন অনলাইন পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনটি করা হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষের পাশে দাড়ানোর ছোট একটি অবলম্বন। আমি আজ এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন পয়েন্টে সাজিয়েছি। যা পড়লে
এতোটুকুও উপকার হবে বলে আশা করছি। আসুন এই প্রতিবেদনের শুরুতে জেনে নেই করোনা আসলে কি ?

করোনা কি ?

করোনাভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরি ডি গোত্রের অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য। তারা পজিটিভ সেন্স একক সূত্রবিশিষ্ট আবরণী বা এনভলপড বলে আবিস্কার করেন বিজ্ঞানীরা।
করোনা ল্যাটিন শব্দ এর অর্থ হলো মুকুট।
ধারনা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করে।
নভেল করোনাভাইরাস (সিওভি) হলো করোনাভাইরাসের এক নতুন প্রজাতি।
নভেল করোনাভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট এই রোগটি প্রথম চীনের উহানে চিহ্নিত হয়েছিল। তখন থেকেই রোগটির নাম করা হয়েছিল করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯)। করোনা থেকে ‘কো’, ভাইরাস থেকে ‘ভি’, এবং ‘ডিজিজ’ বা ‘রোগ’ থেকে ‘ডি’ নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয়। আগে, এই রোগকে ‘২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস’ বা ‘২০১৯-এনসিওভি’ বলা হতো। কোভিড-১৯ হলো একটি নতুন ভাইরাস যা অতীতের সার্স ভাইরাস এবং কয়েক ধরনের সাধারণ সর্দি-জ্বর জাতীয় ভাইরাসের পরিবারভুক্ত বলে ধারণা করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড ১৯-কে মহামারী হিসাবে উল্লেখ করেছে। এর অর্থ কি ?
কোভিড-১৯-কে মহামারী হিসাবে চিহ্নিত করার অর্থ এই নয় যে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা বেড়েছে। মূলত এর ভৌগলিক বিস্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ একে মহামারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কোথায় বিস্তার হয় ?

কোভিড-১৯ ভাইরাসটি যে কোন দেশে এবং যে কোন সম্প্রদায়ের শিশু ও পরিবারের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে পারে। ইউনিসেফ এর প্রশমনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করছে। পরিবার ও শিশুদের এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে ইউনিসেফ বিভিন্ন দেশের সরকার ও সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

আমার আপনার কি করনীয় ?

কোভিড-১৯সহ করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়, এর থেকে নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখতে হয় এবং এই ভাইরাস হয়েছে ধারণা করলে কি কি করনীয় ইত্যাদি বিষয়ে অনলাইনে প্রচুর ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা খুবই জরুরী এবং এই বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য কোথায় পাবেন তা জেনে নেয়া উচিৎ। এখানে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে আপনি সংক্রমনের ঝুঁকি কমাবেন, আপনার সন্তানকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনা প্রয়োজন কিনা, সন্তানসম্ভবা মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ কিনা, এবং ভ্রমনের সময়ে আপনার কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। ইউনিসেফ একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করেছে যেখানে আপনি কোভিড ১৯ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত নির্দেশনা ও তথ্য পাবেন। এছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও একটি কার্যকরী শাখা আছে যেখানে এ সম্পর্কিত বহুল জানতে চাওয়া প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। ভ্রমন, শিক্ষা ও অন্যান্য নির্দেশনার জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুপারিশ ও তথ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

কোভিড-১৯ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় ?

আসুন আমরা জানি করোনা কি ভাবে ছড়ায়।
সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের কাশিঁ এবং হাঁচির মাধ্যমে, সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাস দ্বারা দূষিত অংশ স্পর্শ করার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয় বলে সঠিক ত্বথ্যের মানসম্পন্ন ব্যাখা প্রকাশ করেন ইউনিসেফ। কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশ কয়েক ঘন্টা ভূপৃষ্ঠে বেঁচে থাকতে পারে, তবে সাধারণ জীবাণুনাশক এটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণগুলো কী ?

করোনভাইরাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। আরও মারাত্মক ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে, খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়। এসব লক্ষণগুলো ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, যা কোভিড-১৯ এর চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এ কারণেই কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে নেয়া দরকার। এটি মনে রাখা প্রয়োজন যে, মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো একই রকম।

এবার আসুন জানি –

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গুলো কি কি ?

আমরা প্রথমেই যা করবো তা হলো বার বার হাত ধোঁয়া। যেন জীবাণু হাতের মাধ্যেমে কোন ভাবেই তার ক্রিয়াগত শক্তি না দেখাতে পারে। তারপর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেমন, কাঁশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে ঢেকে নেয়া বা টিস্যু ব্যবহার করা, তারপর টিস্যুটি নিকটবর্তী বন্ধ ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া। এছাড়াও জ্বরের জন্য একটি টিকা রয়েছে। তাই নিজেকে এবং নিজের সন্তানকে সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা মনে রাখবেন। এই কাজগুলো আমাদেরকে অনেকাংশে করোনা প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

এবার আসুন জেনে নেই সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধোয়ার উপাই কি !

হাত ধোয়ার অন্যতম উপায় কী ?

ধাপ ১ : প্রবাহমান পানিতে হাত ভেজানো।
ধাপ ২ : ভেজা হাতে পর্যাপ্ত পরিমান সাবান ব্যবহার করা।
ধাপ ৩ : হাতের পেছনের অংশ, আঙ্গুলের মধ্যের অংশ এবং নখের নিচের অংশসহ হাতের সব অংশই অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে ধুঁয়ে ফেলা।
ধাপ ৪ : প্রবাহমান পানিতে ভালভাবে কচলে হাত ধোয়া;
ধাপ ৫ : একটি পরিষ্কার কাপড় বা এককভাবে ব্যবহার করেন এমন তোয়ালে দিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে ফেলা।
আমরা আমাদের হাত ঘন ঘন ধুঁয়ে নিবো। বিশেষ করে, খাবার আগে, নাক পরিস্কার করার পর, কাঁশি বা হাঁচি দেওয়ার পর এবং বাথরুমে যাওয়ার পরেও। মনে রাখতে হবে যে, সাবান ও পানি যদি সহজে পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। যদি হাতে ময়লা থাকে, তবে সব সময় সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুঁয়ে ফেলুন।

মেডিক্যাল মাস্ক ব্যাবহার –

যদি আমাদের শ্বাসকষ্টের লক্ষণ (কাঁশি বা হাঁচি) থাকে, তবে অন্যের সুরক্ষার জন্য একটি মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি আপনার কোন লক্ষণ না থাকে, তবে মাস্ক পরার কোন প্রয়োজন নেই। যদি মাস্ক পরা হয় তবে ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই এর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের পর এগুলো যথাযথভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে। তবে শুধুমাত্র মাস্কের ব্যবহার এই ভাইরাসের সংক্রমন রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। এর সাথে অবশ্যই ঘন ঘন হাত ধোঁয়া, হাঁচি ও কাঁশি ঢেকে রাখা, এবং ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু-এর মতো লক্ষণ রয়েছে ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।

কোভিড-১৯ কি শিশুদের প্রভাবিত করে ?

অনেকে বিভিন্ন ভাবে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তি করছেন। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অন্য কিছু থাকুক বা না থাকুক তারা কোন বিষয়ে জানুক বা না জানুক ডাক্তারী করতে পারে সবাই। এটা কেউ স্বিকার করতে রাজি নই যে আমি এই বিষয়ে কম জানি। সবাই সব জান্তা শমসের হতে চায়। একবারও ভাবেনা তার এই ভয়ংকরী ভাবনা অল্প বিদ্যার অর্জন। সবাই আমরা জানি যে এটি একটি নতুন ধরনের ভাইরাস। ভাইরাসটি শিশু বা গর্ভবতী মায়েদের কীভাবে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, যে কোন বয়সের মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঘটনা তুলনামূলকভাবে খুব কম ঘটেছে। এখন পর্যন্ত বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রেই এই ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

যদি আমার আপনার সন্তানের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে কি করা উচিত ?

যদি আপনার শিশুর কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয় তখন আমরা অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিব। তবে মনে রাখতে হবে যে, উত্তর গোলার্ধ্বে এখন জ্বরের মৌসুম, এবং কোভিড-১৯ এর লক্ষণ যেমন, কাশি বা জ্বর, ফ্লু’র মত একই রকমের হতে পারে বা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের বিষয়টিও খুবই স্বাভাবিক।
ভালভাবে হাত ধোঁয়া এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। যেসব ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে, দৈনন্দিন হাত ধোঁয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সন্তানকে ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে সেগুলো থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে হবে।

আমার আপনার বা আপনার সন্তানের যদি ফ্লু’র মতো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অন্যান্য সংক্রমন থাকে, তবে দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা নিন। এছাড়াও, অন্যদের মধ্যে এই সংক্রমন ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য জনসমাগমস্থলে, কমক্ষেত্র, বিদ্যালয়, গণপরিবহন যাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles