Sunday, April 21, 2024

শেষ হলো সঙ্গীতের ‘পঞ্চকন্ঠ’…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

কথা ছিল গানে গানে মুখরিত হবে ১৫ই মার্চের ঢাকার জাতীয় যাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়াম। কিন্তু তার সাথে দেশের স্বনামধন্যে সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকারসহ নতুন ভাবে আন্দলিত হবে মূখরিত হবে যাদুঘর তা যেন সঙ্গীতাঙ্গন এর ভাবনার উর্ধে এবং এক বড় আর্শিবাদ। হ্যাঁ বলছি গতকালকের সঙ্গীতাঙ্গন আয়োজিত ‘গানে গানে বাংলাদেশ’ এর পঞ্চকন্ঠের খোঁজে ফাইনাল প্রতিযোগীতা’র কথা। এখানে গানের নবীন প্রবীণ সঙ্গীতজ্ঞ দূরন্ত পাখীদের মিলনমেলা বসেছিলো। কবি সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়াম এর সাফল্য অর্জন হলো সঙ্গীতজ্ঞদের পদধূলিতে। অনুষ্ঠানের আগেই সব বিচারকগন চলে এসেছিলো যাদুঘরে। তাদের সময়ের আগেই অডিটোরিয়ামে আসাতে যেন সঙ্গীতাঙ্গন আজ সব দিক দিয়ে পূর্ণতা পেলো। সঙ্গীতের কি দরদ তাদের অন্তরে তা আমরা আগেও বুঝেছিলাম, আজও বুঁজেছি। সকাল নয়টার পরপরই সবাই চলে আসার প্রতিচ্ছবি আমাদের মুগ্ধ করে। বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার ওস্তাদ শেখ সাদী খান, ওস্তাদ শাহাদাৎ হোসেন খান, শহীদুল্লাহ ফরায়জী, শিল্পী খুরশীদ আলম, লীনু বিল্লাহ, ফকির আলমগীর, জানে আলম, প্রফেসর রিনাত ফৌজিয়া খান, কামাল আহমেদ, মিলন খান, শহিদ মোহাম্মদ জঙ্গি, পার্থ মজুমদার, নজীবুল হক, পাপিয়া আকতার শাহিনা, সুমন আলী, মোর্শেদ খান, শাহনাজ দীপু, রাজীব, প্রদীপ্ত বাপ্পী, আহমেদ রোনো তূর্য’সহ আরো অনেক গুণী মানুষ যাদুঘরের এই অনুষ্ঠানে গানে গানে বাংলাদেশ’ এর পঞ্চকন্ঠের খোঁজে এসেছিলেন। সঙ্গীতাঙ্গন এর প্রধান সম্পাদক আহসানুল হক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। এই সময়ে বক্তব্যের মধ্যে উঠে আসে সঙ্গীতাঙ্গন ও গানে গানে বাংলাদেশের অজানা কথা। কেন বা কি উদ্দেশ্য নিয়ে সঙ্গীতাঙ্গন এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো তার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। কোন স্বার্থ বা ব্যাবসায়ী প্রলোভনে নয় সঙ্গীতকে ভালোবেসে সঙ্গীতের প্রেমে পরে সঙ্গীতকে নিয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছরের পথচলা বলে উল্লখ্য করেন আহসানুল হক। সঙ্গীতাঙ্গনের গোড়ার কথাও ওঠে আসে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। তারপর সবার অনুরোধে আসে গানের পালা।

যদিও প্রতিযোগীদের গান শুনে শুনে বিচারকগন তাদের উপদেশ দিচ্ছিলেন। ভালো মন্ধ মন্তব্য করছিলেন আর এটাই করবেন। কিন্তু সঙ্গীতজ্ঞ শেখ সাদী খান তার গুরুস্থানে থেকে সুক্ষ্মদর্শী বিচার করেছেন। একজন প্রাতিষ্ঠানিক গায়ক গায়কির যেমন ধারণা থাকার দরকার গান সম্পর্কে ঠিক তেমনটা খুঁজেছিলেন তিনি। যদিও এখানে যারা অংশ নিয়েছিলো তাদের মধ্যে অনেকরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করে গান করতে আসেনি। তবে প্রতিযোগীরা তাদের সব দিয়ে চেষ্ঠা করেছেন কিছু করতে। বিচারকদের খুশি করতে। কারো কারো গান শুনে বিচারকমন্ডলীর ভালো লেগেছে তাদের উৎসাহীত করেছেন আবার বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠান সার্থক হয়েছে। কখনো গান কখনো গল্প এভাবেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে চলেছে। এবার যখন এলো সে শুভক্ষন। যখন ১৫জন প্রতিযোগীদের বিচারক মন্ডলীর উপস্থিতে ফলাফল ঘোষণা করতে যাবেন। তখন প্রতিযোগীদের মনটা নিজের অজান্তেই ভয়ে ভয়ে কাঁপছিলো। আর সবার মন বলছিলো আজ কে যেনো হয় পঞ্চকন্ঠের সেরা পাচঁ বিজয়ী। ১৫ জনের মধ্যে যারা ছিলো তারা হলেন – আবির আহমেদ (মিরপুর), কিরন আহম্মেদ (নেত্রকোনা), মোঃ ফরহাদ সরকার (কুমিল্লা), মোঃ কাজল মিয়া (আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ), তুষার মল্লিক রকি (পটিয়া, চট্রগ্রাম), মিথুন চন্দ্র্র শীল (নরসিংদী), ফাতেমা আক্তার স্মৃতি (নরসিংদী), হামিদুর রহমান হামিদ (কিশোরগঞ্জ), আসমাউল হোসনা স্বর্ণা খান (মিরপুর), মোঃ মিরাজুর রহমান (মিরপুর), বাউল শাহীন শাহ্ (কুষ্টিয়া), সাদ্দাম হোসেন মিয়া (কিশোরগঞ্জ), সুব্রত মন্ডল সৃজন (গোপালগঞ্জ), ডি এল বিজয় (নারায়নগঞ্জ) ও সোহেল রানা জয় (টাঙ্গাইল)।

তাদের মধ্যে থেকে সেরা পাঁচে প্রথমেই স্থান করে নেন লালনের দেশের মানুষ যাদের অন্তরে গানকে লালন করে থাকেন, বলছি কুষ্টিয়ার বাউল শাহিন শাহ। তারপর দ্বিতীয় হলেন নারায়ণগঞ্জের ডি এল বিজয়। তৃতীয় হলেন মিরপুর থেকে আসমাউল হোসনা স্বর্ণা খান। চতুর্থ স্থনে উঠে আসেন কুমিল্লার মোঃ ফরহাদ এবং পঞ্চকন্ঠের শেষ বিজয়ী হন নেত্রকোনার কিরণ আহম্মেদ। বিজয়ি হবার পর গর্বে যেনো বিজয়ীদের বুকটা ভরে গেছে। আনন্দের আবেগ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারছিলেন না। কিন্তু যারা পঞ্চকন্ঠের নামের তালিকা থেকে বাদ পরে যান তাদের মনের উপর দিয়ে যেনো ঝড় বয়ে যেতে থাকে। কিন্তু তারাও পেয়েছেন আশার বাণী সঙ্গীতাঙ্গন এর প্রধান সম্পাদকের মুখ থেকে। তিনি বলেন আসছে জুনে আবার হবে দ্বিতীয় প্রতিযোগীতা। তোমরা সেখানে আবারও আবেদন করতে পারবে। আমার আশা যে তোমরা পরেরবার বিজয়ীদের তালিকা দখল করতে পারবে। শান্তনায় আরো ছিলো নতুন চমক হিসেবে তিনজন ব্যাক্তি একজন সেরা কন্ঠের সেরা বাপ্পি, রাজিব ও তূর্য তিনজন একটি গানের কাজে হাত দিবেন বলে জানান। এবং বাকিদের থেকে দু’জন যারা ভালো কন্ঠ ছিলো কিন্তু পঞ্চকন্ঠে ওঠে আসতে পারেনি তারা তাদের তিনজনের সাথে কাজ করার আশার বানী পেয়েছেন। তারপর হলো বিদায়ের পালা। গুণী সঙ্গীতজ্ঞদের সাথে বিজয়ীরা ছবি তুলেন এবং তাদের আর্শিবাদ নেন। এবং অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এভাবেই সঙ্গীতাঙ্গন আয়োজিত ‘গানে গানে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানের ফাইনাল রাউন্ড সফলতা লাভ করেন। সঙ্গীতাঙ্গনের সাথে থাকুন জুনের পরবর্তী অনুষ্ঠান নিয়ে আবারো আসবো সেই পর্যন্ত শুভ বিদায়।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles