Thursday, April 25, 2024

না ফেরার দেশে চলে গেছেন মোবারক হোসেন খান…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ মোবারক হোসেন খান গতরাত ঘুমের ঘরে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মোবারক হোসেন এর মৃতদেহকে বারডেম হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তার ছেলে দেশের বাহিরে থেকে ফিরে এলে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে এরই মধ্যে ঢাকা বারডেম হাসপাতালের মর্গে তাকে অনেকেই দেখার জন্য গিয়েছেন।
মোবারক হোসেন ১৯৩৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের এক সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ একজন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী। তার চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁরা ছয় ভাই ও তিন বোন। ভাইরা হচ্ছেন – ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান, ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান, মোবারক হোসেন খান, সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান, তানসেন খান এবং বিটোফেন খান। আর তাঁর তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর, ও রাজিয়া।

পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী সবাই সঙ্গীতে মগ্ন। তাই তার পিতা চেয়েছিলেন তিনি যেন সঙ্গীতের পাশাপাশি পড়াশুনা করেন। এজন্য সঙ্গীতে দীক্ষা গ্রহণের পূর্বে তিনি মাইনর স্কুলে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। দেশ বিভাগের পূর্ব থেকে তার পিতার গান শিখানোর উদ্দেশ্যে কুমিল্লা জেলায় যাতায়াত ছিল এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা সপরিবারে সেখানে চলে যান। মোবারক সেখানে কুমিল্লা জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৫২ সালে মেট্রিক পাস করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। মোবারক হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয় বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে ২০ অক্টোবর, ১৯৬২। পরে তিনি বেতারের মহাপরিচালক হিসেবে ৩০ বছর কর্মরত ছিলেন। এসময়ে তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার সঙ্গীত বিষয়ক লেখা কেউ প্রকাশের দায়িত্ব না নিতে চাইলে তা প্রকাশের দায়িত্ব নেন রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। লেখালেখি সূত্রে পরিচয় হন কবি আল মাহমুদের সাথে। আল মাহমুদ তখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক। তার মাধ্যমে ১৯৮০ সালে শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন তার প্রথম সঙ্গীত বিষয়ক বই সঙ্গীত প্রসঙ্গ। বিভিন্ন পত্রিকায় তার সঙ্গীত বিষয়ক লেখা নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় বই বাদ্যযন্ত্র প্রসঙ্গ। এরপর তিনি রচনা করেন সঙ্গীত মালিকা। এই বইটিও প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। পরবর্তীতে তিনি সঙ্গীত ও শিশু বিষয়ক ৫০টির মত গ্রন্থ রচনা করেন।

মোবারক হোসেন সঙ্গীতশিল্পী ফৌজিয়া ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান – কন্যা রিনাত ফৌজিয়া সঙ্গীতশিল্পী, পুত্র তারিফ হায়াত খান স্থাপতি এবং অপর পুত্র তানিম হায়াত খান। পরিবারের মাঁয়া কাটিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন মোবারক হোসেন খান। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে তার পরিবারের জন্য সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles