Friday, March 29, 2024

হৃদরোগ আর কিডনি জটিলতাই তাকে পৃথিবী থেকে চুরি করেছে…

মোশারফ হোসেন মুন্না।

গান মানুষকে চির ওমর করে দেন। গান মানুষকে বাঁচিয়ে রাখেন যুগের পর যুগ ধরে। গানকে যারা ভালোবাসে, গানকে যারা নিজের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করে, গানও তাদের কোন দিন ভুলতে পারেনা। কথা আর সুরের মাঝে বেঁচে থাকে তেমনি গানের মাধ্যেমে বেঁচে আছেন আমাদের দেশের বিখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকি। শুয়া চানঁ পাখি তার জনপ্রিয় গান। বারী সিদ্দিকির গাওয়া- ‘শুয়া চাঁন পাখি আমার, আমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছ নাকি’- সঙ্গীতপ্রেমীদের মুখে মুখে ফেরে। বাঁশি বাজানো দিয়ে সঙ্গীত জীবনের শুরু হলেও পরে তিনি গান গেয়ে অনেক বেশি পরিচিত হয়ে ওঠেন। সিদ্দিকির জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন গীতিকবি শহিদুল্লাহ ফরায়জী।
সঙ্গীতাঙ্গনের সাথে ফোনালাপে তিনি বলেন, বারী সিদ্দিকি গতানুগতিক ধারার বাইরে গান গাইতে চাইতেন। বারী সিদ্দিকি বাংলা গানের একটা ভিন্ন ধারা একটা ভিন্ন প্রকৃতি প্রবর্তন করেছেন। তিনি তার গানের উপস্থাপনা, ও আবেগ দিয়ে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছেন এবং মানুষের বিবেককে শানিত করতে পেরেছেন। তিনি মনে করেন বাংলার লোকায়ত গানের সঙ্গে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সফল সংমিশ্রণ করে তিনি তার গানকে মাটির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। বংশীবাদক হিসাবে সঙ্গীত জগতে যাত্রা শুরু বারী সিদ্দিকির। বাঁশির ওপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি দীর্ঘদিন ভারতে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বাংলাদেশে ওস্তাদ আমিনুর রহমানের কাছে তিনি শিক্ষা নেন, বলেন শহীদুল্লাহ ফরায়জী। তিনি বলেন বারী সিদ্দিকি টেলিভিশনে প্রথম বংশীবাদক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর আস্তে আস্তে তিনি সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপস্থাপিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি বারী সিদ্দিকিকে একটি গান গাইতে দিয়েছিলেন “বন্ধুঁয়ারে তোমার মনে যাহা লয়”, বলছিলেন শহীদুল্লাহ ফরায়জী। ঐ গানের পর হুমায়ূন আহমেদ তাকে বলেছিলেন তুমি ভাল গান গাও – তোমার গান আমি সিনেমায় রাখব। প্রথমে বারি সিদ্দিকিকে উনি সুর করতে বলেছিলেন, পরে বললেন তুমি গাও। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে বারী সিদ্দিকী বাঁশিবাদক থেকে লোকগান এবং আধ্যাত্মিক গানের জন্য পরিচিতি পেয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ শ্রাবণ মেঘের দিন নামের একটি ছবি নির্মাণ করেন। সেই ছবিতে ‘শুয়া চান পাখি’ এবং ‘আমার গায়ে যত দু:খ সয়’, ‘পুবালি বাতাসের’ মতো গানগুলো গেয়ে সারাদেশে পরিচিতি পান বারী সিদ্দিকী। এরপর তিনি একের পর এক লোকগান গেয়েছেন। শুয়া চাঁন পাখি আমার , আমার গায়ে যত দু:খ সয়, এমন জনপ্রিয় ১৬০টি গান গেয়েছেন বারী সিদ্দিকী। শহীদুল্লাহ ফরায়জী বলেন বারী সিদ্দিকি তাকে বলতেন, আমরা যদি গাতনুগতিক ধারার গান করি, লোকে শুনবে কেন ? আপনার গান লেখায় যেমন বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, তেমনি সুর করার ক্ষেত্রেও আমাকে বিশিষ্টতা আনতে হবে। তাই আমিও গান লেখার ক্ষেত্রে বিশিষ্ঠতা আনতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু তিনি থাকলেন না আমাদের মাঝে। হৃদরোগ আর কিডনি জটিলতায় তাকে পৃথিবী থেকে চুড়ি করে নিয়েগেছেন। হারিয়েছি তাকে। মাত্র ৬০ বছর বয়সে তিনি আমাদের মাঁয়া ছাড়িয়ে চলে গেলেন। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন। নেত্রকোণা জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে কারলি গ্রামে তিনি বাউল বাড়ি নামের একটি আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন। সেখানেই তাঁর গ্রামের বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামে ইতিহাসে স্নাতক পাশ করে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন সঙ্গীতের সাথে। তখন প্রথম তিনি নিজেকে বাঁশিবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমরা তার জন্য শুভ কামনা করি। আজ তার শুভ জন্মদিন। যদিও আজ মানুষটি নাই। কিন্তু দেশের সব মানুষের মনের মাঝে তিনি। ভালো থাকুন ঐ পাড়ে। সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে সেই শুভকামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles