Friday, April 19, 2024

বাচ্চু ভাইকে নিয়ে এতো স্মৃতি বলে শেষ করা যাবে না: আসিফ আকবর…

– রোদেলা জয়ী।

১৮ অক্টোবর। হৃদয় ভাঙার একটি দিন। এই দিনে আমরা হারিয়েছি দেশীয় ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে সারা বাংলাদেশ স্তব্ধ। তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছেন দেশের
সঙ্গীতপ্রিয় শ্রোতারা এবং সহকর্মীরা। তার এমন মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু নশ্বর এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে। আমরা কেউই সারা জীবন এখানে থাকতে পারবো না। এটা চরম
ও কঠিন একটি সত্য। তবুও কিছু মৃত্যু মানুষের হৃদয়কে আহত করে, দুর্বল করে, যা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে এবং মানতে কষ্ট হয়। প্রিয় ও ভালবাসার মানুষের চলে যাওয়ায় ব্যথিত হয় প্রতিটি প্রাণ।

আইয়ুব বাচ্চু ও আসিফের সাথে সম্পর্ক ছিল বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মতো। আইয়ুব বাচ্চু যেদিন মারা যায় সেদিন ‘গহীনের গান’ ছবির শুটিং-হওয়ার কথা ছিল আসিফের। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরেই
তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। একসময় শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে যান। এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছামাত্র গহীনের গান-এর শুটিং বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রযোজক-পরিচালক।

বাংলা সঙ্গীতের যুবরাজ আসিফ আকবর এবিকে নিয়ে তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বেশ বিষন্ন হয়ে পড়েন। তিনি বললেন, বাচ্চু ভাইকে নিয়ে কি বলবো? তার সাথে আমার জীবনের এতোই স্মৃতি যা আমি সারাজীবন বললেও শেষ হবে না। আল্লাহতালা ওপারে বাচ্চু ভাইকে ভাল রাখুন। ক্ষমা করে দেবেন বাচ্চু ভাই বলেই চোখে জলে ধারা বয়ে এলো।।

নিরব থেকে খানিক পর বললেন, ১৯৯৫ সালের দিকে একটি ব্যান্ডদল গড়েছিলেন। তখন এলআরবি অর্থ ছিল লিটল রিভার ব্যান্ড। পরে অবশ্য নাম পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু আমাকে সেই লিটল রিভার নামটাই খুব টানে। আমরাও
একটা ব্যান্ড দল গঠন করি যার নাম রাখি ফিকেল বয়েজ ব্যান্ড (এফবিবি)। বাচ্চু ভাইয়ের এলআরবি আর আমাদের এফবিবি।

১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে অবশেষে আমাদের ব্যান্ড দলের অভিষেক হয়। তখন কনসার্টে আমরা এলআরবি, উইনিংসহ অন্যান্য ব্যান্ডের গান কাভার করতাম। এমনও অনেক হয়েছে আমি গান গাইছি অন্যদিকে বাচ্চু ভাই ড্রামস বাজাচ্ছেন। তখন আমি বলতাম বাচ্চু ভাই আপনার গান গাইবো। তিনি আমাকে বলতেন, আমার লিস্টেরগুলো বাদ দিয়ে গা। আমিও তাই করতাম।

১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলে বাচ্চু ভাই আমার সঙ্গে বাজিয়েছিলেন। এরপর একসঙ্গে অনেক শো করেছি। তখন আমি আজকের মতো এই আসিফ ছিলাম না। ২০০১ সালে আমার ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ এ্যালবাম
প্রকাশের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশ-বিদেশে বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে অনেক শো করেছি। অনেক সময় গল্প আর আড্ডায় কাটিয়েছি। বাচ্চু ভাই অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন। আমার সাথে তার সম্পর্ক
ছিলো টম অ্যান্ড জেরির মতো। এই ভালো এই খারাপ। ইন্ডাস্ট্রিতে আমিই মনে হয় তাকে সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছি। কোনও কিছু হলেই বাচ্চু ভাই এইটা করলেন কেন ওইটা করলেন কেন? আর ভাই বলতেন, আসিফ গোস্বা
(রাগ) করিস না ভাই।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে ভাই সব সময় আমার আম্মার সঙ্গে দেখা করতেন। আমাকে বলতেনও না। আম্মা পরে আমাকে জানাতেন, তোর ভাই এসেছিল। কোন ভাই জিজ্ঞেস করতেই তিনি বাচ্চু ভাইয়ের কথা বলতেন।

আসিফ আকবর বলেন, এই নীল মনিহার কিংবা আবার এলো যে সন্ধ্যায় গানগুলো আমরা যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছি। ঠিক তেমনিভাবে বাচ্চু ভাইয়ের গানও আমরা বাঁচিয়ে রাখবো। তার গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে তার গান গাইবার চেষ্টা করবো।

বাচ্চু ভাই বেঁচে থাকবে বাংলার কোটি মানুষের হৃদয়ে। যুগের পর যুগ তিনি বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টির মাধ্যমে। ভাল থাকবেন বাচ্চু ভাই।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles