আপনার বা আপনার সন্তানের যদি জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এমন কোনও এলাকা যদি আপনি ভ্রমণ করে থাকেন, বা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এমন কোনও এলাকা ভ্রমণ করেছে ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার লক্ষণ রয়েছে এমন কারও সাথে যদি আপনার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়, তবে আগে থেকেই স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর সাথে কথা বলুন।
আমার সন্তানকে কি বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করা উচিত ?
আমাদের বাংলাদেশে বর্তমান সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে দেশের সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেছেন। সুতরাং তাদেরকে বাড়িতে রাখতে হবে। যদি আপনার সন্তানের উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকে, তবে চিকিৎসা সেবা নিন এবং স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর নির্দেশনা অনুসরণ করুন। অন্যথায় ফ্লু’র মতো শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য লক্ষণগুলো থাকা অবস্থায় আপনার শিশুকে বাড়িতে রাখুন এবং অন্যদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ানো রোধ করতে অবশ্যই তাকে লোকালয়ে যেতে দিবেন না। তারচেয়ে ভালো হবে তাদেরকে এই রোগ বিষয়ে শিক্ষা দিন।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরিবারের জন্য আমার কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ?
বাংলাদেশ এখনো করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতম দৃশ্য দেখেনি। দেখতে চাইও না। তাই দেশ বা দেশের বাহিরে ভ্রমন না করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে হ্যাঁ যদি একান্তই করতে হয় তাহলে, সেই ব্যক্তির উচিত গন্তব্যস্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে সে দেশে ভ্রমণের জন্য কোনও বিধি নিষেধ আছে কিনা, প্রবেশের সময় আলাদা থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ভ্রমণ পরামর্শ যাচাই করা। মানসম্পন্ন ভ্রমণ সতর্কতা যাচাই করা ছাড়াও নিজেকে আলাদা রাখা বা নিজের দেশে ফেরত পাঠানো এড়াতে সর্বশেষ কোভিড-১৯ আপডেট জানতে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার ওয়েবসাইটটি দেখে নেয়া উচিত। এই ওয়েবসাইটে কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলির একটি তালিকা এবং বিধি নিষেধ সম্পর্কে বলা আছে। আরও যেসব পরামর্শ রয়েছে সেগুলো হলো: বিমান বা অন্যান্য যানবাহনের অভ্যন্তরের বসার জায়গা, সিটের হাতল, টাচস্ক্রিন ইত্যাদি জীবানুনাশক কাপড় দিয়ে পরিস্কার করা। এছাড়াও, আপনি ও আপনার সন্তান অবস্থান করছেন এমন হোটেল বা অন্য বাসস্থানের মূল অংশগুলো, দরজার হাতল, রিমোর্ট কন্ট্রোল ইত্যাদি পরিস্কার করার জন্য জীবানুনাশক কাপড় ব্যবহার করা।
গর্ভবতী নারীদের মাধ্যমে কি তাদের অনাগত সন্তানের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে ?
এখন পর্যন্ত এমন কোন প্রমান হাতে নেই যাতে বলা যেতে পারে যে, গর্ভাবস্থায় এই ভাইরাস মায়ের থেকে তার সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়াও, শিশুর উপর এই ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করার মতোও কোন প্রমাণ নেই। বর্তমানে এ বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে গর্ভবতী নারীদের রক্ষা পেতে হলে জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট জাতীয় লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা এবং আগেভাগেই চিকিৎসা সেবা নেওয়া উচিত।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মায়েদের কি তাদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানো নিরাপদ ?
আক্রান্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের সকল মা যাদের জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের লক্ষণ রয়েছে, তাদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা নেওয়া উচিত এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত। বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধা এবং বিভিন্ন ধরনের শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস সংক্রমণে বুকের দুধের গৌণ ভূমিকা বিবেচনা করে বলা যেতে পারে যে, প্রয়োজনীয় সকল সতর্কতা অবলম্বন করে মায়েরা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে পারেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমনের লক্ষণ রয়েছে এমন মায়েরাও বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। তবে তারা যখন সন্তানের কাছে থাকবেন এবং দুধ খাওয়াবেন তখন মাস্ক পরবেন, সন্তানের সংস্পর্শে আসার আগে ও পরে দুধ খাওয়ানোর সময় ভালো করে হাত ধুয়ে নিবেন, এবং জীবানু রয়েছে এমন জায়গা ভালভাবে পরিস্কার করবেন। কোভিড-১৯ এ নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত বা এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন যে কোন মানুষ শিশুসহ অন্যদের সংস্পর্শে আসার সময় সকল ক্ষেত্রে উপরোক্ত সতর্কতাগুলো অবলম্বন করবেন।
মা যদি খুবই অসুস্থ হয়, তখনও বুকের দুধ সংরক্ষন করে তার সন্তানকে দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা উচিত। এই দুধ কোন পরিস্কার কাপ বা চামুচে করে দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে একই ধরনের সংক্রমন প্রতিরোধ সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে।
আপনার সন্তান, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কি করা যাবে এবং কি করা যাবে না সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ: এই বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলুন –
যা করা যাবে নাঃ
রোগের সাথে এর ভৌগলিক অবস্থান বা জাতিসত্তা সংযুক্ত করা যাবে না। মনে রাখবেন, ভাইরাসটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, জাতি বা বর্ণের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে না। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ এর ‘শিকার’ হিসাবে উল্লেখ করা যাবেনা।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত লোকেরা ‘অন্যকে সংক্রামিত করে’ বা ‘ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়’ – এ সব বলা যাবে না কারণ এটি ইচ্ছাকৃতভাবে সংক্রমণ ছড়ানো বোঝায় এবং দোষ চাপিয়ে দেয়। অসমর্থিত গুজবের পুনরাবৃত্তি এবং আতঙ্ক ছড়ায় এমন ভাষা ব্যবহার করা যেমন “প্লেগ”, “অ্যাপোক্যালিপস” ইত্যাদি।
যা করা যাবেঃ
কোভিড-১৯ আছে এমন লোক সম্পর্কে, কোভিড-১৯ এর জন্য চিকিৎসা গ্রহন করছে এমন লোক সম্পর্কে, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থতা লাভ করেছেন এমন লোক সম্পর্কে বা কোভিড-১৯ সংক্রমনের পরে মারা যাওয়া লোক সম্পর্কে কথা বলা যাবে।
বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং সর্বশেষ অফিসিয়াল স্বাস্থ্য পরামর্শের উপর ভিত্তি করে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিকভাবে কথা বলুন।
ইতিবাচকভাবে কথা বলুন এবং হাত ধোঁয়া সম্পর্কিত টিপস অনুসরণ করে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর জোর দিন। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এটি এমন একটি রোগ যা তারা কাটিয়ে উঠতে পারে। নিজেকে, প্রিয়জনদেরকে এবং সবচেয়ে দূর্বলকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা সকলেই নিতে পারি এমন সহজ পদক্ষেপ।
আসুন আমরা সবাই সবাইকে সুস্থ্য রাখতে নিজেকে নিজে নিরাপদ করি। দেশ ও দশের কল্যান করি। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন সেই প্রত্যাশায় সঙ্গীতাঙ্গন।