asd
Friday, November 22, 2024

আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা, সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক মোঃ শাহনেওয়াজ – গিটারিস্ট স্বাধীন নেওয়াজ…

– রহমান ফাহমিদা, সহকারী- সম্পাদক।

অনেকেই সঙ্গীত জগতে আসার জন্য বা সুযোগ পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। অনেকেই সুযোগ পায়, আবার কেউ কেউ পায় না। যারা সুযোগ পান তাঁদের অনেকেরই কাঠখড় পুড়িয়ে তারপর সঙ্গীত জগতে পদার্পণ করতে হয়। তবে যারা জন্মগত ভাবেই সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের সঙ্গীত জগতে আসার পথ খোলা থাকে, যদি সে সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত হয়। যাই হোক, আজকে পরিচিত হব এমন একজন মানুষের সাথে, যার জন্ম হয়েছে একটি সাংস্কৃতিক পরিবারে। তিনি হচ্ছেন গিটারিস্ট স্বাধীন নেওয়াজ। তাঁর বাবা জনপ্রিয় সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক মোঃ শাহনেওয়াজ এবং বাংলাদেশে তিনিই প্রথম মিউজিশিয়ান হিসেবে মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন বিটিভিতে। তাঁর মা অনামিকা শাহনেওয়াজ একজন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ছিলেন। গিটারিস্ট স্বাধীন নেওয়াজের কাছ থেকেই জেনে নেই কার অনুপ্রেরণায় তিনি এই পথ বেছে নিলেন –

আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা, বিশিষ্ট সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক মোঃ শাহনেওয়াজ। তাঁকে দেখেই আমার এই সঙ্গীত জগতে আসা। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি এই জন্য যে, আমার একটি সঙ্গীত পরিবারে জন্ম
হয়েছে। যেহেতু ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার বাবা সঙ্গীত নিয়ে কাজ করছেন এবং তাঁর সুরে বিভিন্ন শিল্পী গান করছেন। তাই দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি।

ছোট বেলা থেকেই কী গান নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল আপনার –
ছোটবেলায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রায় চল্লিশটি নাটকে অভিনয় করেছি। যেহেতু বাবা তখন সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালনা হিসেবে বিটিভিতে কর্মরত ছিলেন তাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে শিশুশিল্পী হিসেবে
অভিনয় করিয়েছেন সব জনপ্রিয় প্রযোজকগন, যেমন জিয়া আনসারী, মুসা আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, আবু তাহের, আলাউদ্দিন আহমেদ, হাবিবা হাসান, ফকরুল আবেদিন দুলাল, লায়লা হক, কামরুন্নেসা হাসান, সাইদা আরবী প্রমুখ। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেছি। পরবর্তীতে অভিনয় করা আর হয়নি কারণ পড়াশুনার চাপ ছিল খুব। তবে ছোটবেলা থেকেই বাবা আমাকে খুব আদর করেন তাই আমাকে ছোট বেলায় তাঁর সাথে সাথে বিভিন্ন স্টুডিওতে নিয়ে যেতেন। সেই কারণে আমার সৌভাগ্য হয়েছে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন সহ অনেক বিশিষ্ট শিল্পীদেরকে কাছ থেকে দেখা। এই সৌভাগ্য অনেকেরই হয় না। বাবা আমাকে পাশে বসিয়ে তাঁদের গান দেখিয়ে দিতেন। সেই সময় সুরকার আলী আকবর রুপু বাবার সাথে প্রধান সহকারী হিসেবে বিভিন্ন কাজ করতেন, গিটারিস্ট হিসেবে। তখন আলী আকবর রুপু ও সেলিম হায়দার চাচাদের গিটার বাজানো দেখে মনে হত, কবে তাঁদের মত মিউজিশিয়ান হতে পারবো! আমি মনে করি, এখনো মিউজিশিয়ান হতে পারি নি। তখন থেকেই গানের প্রতি আকর্ষণবোধ করছি।

সঙ্গীতে আরও অনেক বাদ্য যন্ত্র থাকতে আপনি গিটারকে বেছে নিলেন কেন ?-
আমি ছোটবেলায় তবলা বাজাতাম। আমার বাবাতো তবলা শিল্পী ছিলেন। যখন আব্বা গানে সুর করতো তখন সে আমাকে তবলা বাজানো দেখিয়ে দিতেন। এভাবে তবলা বাজাতে বাজাতে একদিন যখন একটু বড় হলাম মানে
ম্যাট্রিক পাশ করলাম। তখন অডিও ক্যাসেটে আইয়ুব বাচ্চুর সেই তুমি, কষ্ট গান গুলি যখন শুনতাম তখন গিটারের সুরগুলো এত ভালো লাগত! একদিন আম্মাকে বললাম আমাকে একটি গিটার কিনে দাও। এই কথাটি আব্বা শুনতে পায়। পরে সে কলকাতায় কিছু গানের কাজ নিয়ে এইচএমভি স্টুডিওতে রেকর্ডিং করতে যায়। সেখানে ডঃ ভুপেন হাজারিকার ছেলে আব্বার গানের সাথে গিটার বাজিয়েছিল। আব্বা তখন তাঁর মাধ্যমে আমার জন্য একটি গিটার কিনে নিয়ে আসেন। আব্বার সেদিন বাসায় আসেন অনেক রাতে তখন আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার বিছানার পাশে গিটারের ব্যাগ। আমিতো গিটার দেখে আকাশ থেকে পড়েছি!
যে জিনিসটা স্বপ্নে দেখতাম, সেই জিনিসটা কাছে পেয়ে কিরকম অনুভূতি হতে পারে বলেন। আমি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। গিটার দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি এসে পড়েছিল। গিটার তো পেলাম। আব্বা কিছুটা দেখিয়ে দিয়েছিল তাইই সারাক্ষণ বাজাতাম। একদিন আম্মা আব্বাকে বললেন, গিটার এনে কি লাভ হল ? শিখতেই যদি না পাড়লো। একজন শিক্ষক এনে দাও, ছেলেকে যদি প্রফেশনে আনতে চাও। আলী আকবর রুপু এবং সেলিম হায়দার চাচা যখন বাসায় আসত তখন আমাকে দেখিয়ে দিত কিন্তু সেভাবে শেখা হচ্ছিল না। আব্বা বাংলাদেশ বেতারের গেলেন একদিন। তখন বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক ও গিটারিস্ট অশোক পাল, তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে আব্বা বললেন, আমার ছেলেকে গিটার শেখাতে হবে। তারপর তাঁর কাছেই গিটার শেখা। সে আমার গুরু। ওই বয়সে একটু চঞ্চল ছিলাম তাই সেরকম মনোযোগ ছিল না আমার। বছর খানেক গেল এইভাবে। তারপর অশোক কাকুর ব্যস্ততার কারনে তাঁর আমাদের বাসায় আসা বন্ধ হয়ে গেল। পরবর্তীতে ২০০১ কিংবা ২০০২ এর দিকে আব্বা আমাকে বিশিষ্ট গীতিকার রিটন অধিকারী রিন্টু তাঁর কাছে গিটার শেখাতে নিয়ে গেলেন। আমাকে প্রতি শনিবার প্রয়াত সুরকার জালাল আহমেদ তাঁর কাছে নিয়ে যেতেন। উনি বলতেন শাহনেওয়াজের ছেলে মানে আমার ছেলে। সেই থেকে শুরু হল আমার গিটার শেখা। আমার ওস্তাদ রিটন অধিকারী রিন্টু’র অবদান আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। ডন স্টুডিওতে আমার প্রথম গিটার বাজানো শুরু, আব্বার একটি গানের রেকর্ডিং-এ । আমি সেখানে একদম নতুন। সেখানে ছিল বাঘা বাঘা যন্ত্রশিল্পীরা। মনে করেন, বদরুল আলম বকুল, কীবোর্ড বাজাতো। মিলন ভদ্র, তবলা। ফিরোজ খান, সেতার। মনিরুজ্জামান, বাঁশি। সুনীল দত্ত ভায়োলিন। কাজী বাবু, রিদেম। আমি একমাত্র গিটারিস্ট। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমাকে বাঘের খাঁচায় ছেড়ে দিয়েছে। আমারতো হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। যাহোক পরে প্র্যাকটিস করতে করতে শিখে গিয়েছিলাম এবং বাজিয়েছিও। বলতে পারি তাঁদের সবার উৎসাহে আমার এই লাইনে আসা। তারপর বিভিন্ন সুরকারদের সাথে আমার কাজ করা শুরু হল এবং ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজ করতে থাকি।

বর্তমানেতো একুস্টিক যন্ত্রের ব্যবহার খুব কম, এই সম্পর্কে কি বলবেন –
আমি বলবো একদিক দিয়ে ভালো আরেকদিক দিয়ে খারাপ। খারাপ মনে করি এইজন্য যে, বাংলাদেশে একুস্টিক বাদ্যযন্ত্র প্রায় উঠে গেছে। এটাতো আপনারা ভালো জানেন, তাই না! আমি ইউটিউবে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন মিউজিকের খবরগুলো দেখি। আমাকে এই জিনিসটা গাইড করেছেন আমার বড় ভাই, সঙ্গীতাঙ্গন-এর কর্ণধার আমার প্রিয় মানুষ আহসানুল হক ভাই। তাই আমি আমেরিকা বা ইউরোপে যাব না। আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারত, ভারতে এখনও এ আর রহমান ১১০ জন মিউজিশিয়ান নিয়ে গান করে। যেখানে সারা পৃথিবীতে এখন টেকনোলজি অনেক ডেভেলপ! একজন শিল্পীকে সফট ওয়ারের মাধ্যমে তালে ফেলানও যায়। আমার বাবা সারাজীবন একুস্টিকে কাজ করে গেছেন আমিও একুস্টিকেই কাজ করি। কেউ যদি পছন্দ না করে তাহলে বলে দেই অন্য কোথাও যেতে।

বর্তমানে আপনি কি করছেন এবং পরবর্তীতে কি ইচ্ছে আছে, আপনি এই সুর বা সংগীত নিয়ে কিছু করবেন! –
বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমি একজন বিশেষ শ্রেনির তালিকাভুক্ত গিটারবাদক হিসেবে আছি এবং আমি সুর করি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০০৫ সালে আমি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হই। বিটিভিতে আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিটার বাজাই। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ বেতারের হোমসার্ভিসে গিটারবাদক হিসেবে কর্মরত আছি। পরবর্তীতে আমার কিছু কাজ রেডি আছে এখন পরিস্থিতি ভাল হলে রেকর্ডিং-এ যাব। আমার নিজের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় ১০টি গান রেডি আছে। আমার ইচ্ছে আছে গানগুলো প্রকাশ করার।

আপনার কি আর কিছু বলার আছে ? –
আমার একটা কথাই বলার আছে যে, জীবিত থাকতে থাকতেই যেন বাংলাদেশের শিল্পীদের সঠিক সম্মাননা দেয়। এটাই আমার সবার কাছে অনুরোধ। জীবিত থাকাকালীন যার যে যোগ্যতা এবং যে যেরকম মেধাবী, সেই ধরণের লোকদের যেন সম্মান দেওয়া হয়। আর আমার চলার পথে যাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা তাঁদের নামগুলো না বললে আমার খারাপ লাগবে তাই বলছি- প্রথমেই আমার বাবা-মা যাদের অবদান আমি কখনই ভুলবো না। আমার বোন, আমার ভাই, আমার আত্মীয়স্বজন, আমার সহকর্মী, আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই বিশিষ্ট তবলাবাদক জগন্নাথ বানার্জী, শাকিল মাহমুদ জীবন ভাই, আলী আকবর রুপু ভাই সবার কাছে কৃতজ্ঞ। তাছাড়া আমার গুরু আমার ওস্তাদ রিটন অধিকারী রিন্টু ভাই, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। তাঁর জন্য আজ আমি মিউজিশিয়ান হিসেবে কর্মরত। তাছাড়া অশোক পাল, তাঁর কথা ভুলে গেলে চলবে না। প্রয়াত সুরকার জালাল আহমেদ এর অবদান অনেক আমার মিউজিশিয়ান হওয়ার পেছনে। আরেকজনের কথা না বললেই নয়! সে হচ্ছে বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক শ্রদ্ধেয় কামাল আহমেদ। বাংলাদেশ বেতারে আমার কর্মরত অবস্থায় তাঁর অবদান অসীম। আর সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকার আপনি ও আহসানুল হক ভাই সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।

আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস আর এই দিনটিতেই জন্ম গ্রহন করেছেন স্বাধীন নেওয়াজ। তাই জন্মদিনে সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এবং তার সাথে উপহার হিসেবে থাকছে সঙ্গীতাঙ্গন ইউটিউব চ্যানেল থেকে স্বাধীন নেওয়াজ এর সঙ্গীতায়োজনে নতুন গানের মিউজিক ভিডিও ‘বাংলার মানচিত্র’র আত্নপ্রকাশ, গানটির কথা লিখেছেন গীতিকবি ওসমান শওকত, সুরকার মোঃ শাহ্ নেওয়াজ ও গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী তপন চৌধুরী। সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে রইল আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের প্রতি শুভকামনা।

সবাইকে আমন্ত্রণ ‘বাংলার মানচিত্র’ গানটি উপভোগ করার সাথে লিংকটি নীচে দেওয়া হলো।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles