“জীবনের কঠিন অসুখে একটি নিশ্বাস যে বিশ্বাসটি আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেইতো ভালোবাসা, শেষ বিকেলের কুয়াশায় অন্তবিহীন আশায় হাত দু’টি যে ভরসায় অন্য দু’টি হাত ধরতে চায় সেইতো ভালোবাসা, যে স্বজনের স্মরণে হৃদয় আত্মার মিলনে চোখের কোণে অশ্রুধারা বয়ে যায় সেইতো ভালোবাসা।
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সমাজ, সম্প্রদায়, ব্যক্তি, পরিবার, দেশ, জাতি এবং আপনজনের প্রতি ভালোবাসা অফুরন্ত। ভালোবাসা শব্দটি খুব সহজেই সকলের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে মিশে যায়। কেননা জন্মের পর থেকেই মানুষের বেড়ে উঠা এই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করেই। ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা। দিবসের ইতিহাস এবং ইতিবাচক-নেতিবাচক সমালোচনা অনেক। আর এই ভাল মন্দের মাঝেই সবাই নিজ স্বজনকে নিজের মতো করে ভালোবেসে যায়।
আমাদের দেশে ১৯৯৩ সালের দিকে ভালোবাসা দিবস পালনের আবির্ভাব ঘটে। বিশিষ্ট সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান এ বিষয়টি নিয়ে সবাইকে মানবতার প্রেরণায় উৎসাহিত করতে থাকেন। এ নিয়ে অনেক ধরনের মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সে থেকে এই আমাদের দেশে দিনটির শুরু।
বছর ঘুরে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের ভালোবাসায় রাঙিয়ে গেলেও, ভালোবাসা কিন্তু প্রতিদিনের। জীবনের গতি নির্ধারণ করে ভালোবাসা। মানুষ বেঁচে থাকে ভালোবাসায়। ‘ভালোবাসা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর কোমল দুরন্ত মানবিক অনুভূতি। ভালোবাসা নিয়ে ছড়িয়ে আছে কত কত পৌরাণিক উপাখ্যান। সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি সর্বত্রই পাওয়া যায় ভালোবাসার সন্ধান। আর তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি মানেই প্রজন্মের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন।
দুনিয়া জুড়ে দিনটিকে অত্যন্ত আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর যে কোন দিবস আবিষ্কৃত ইতিহাস আছে ঠিক তেমনি ভালোবাসা দিবসেরও উদযাপন শুরুর কিছু ঘটনা আছে যার মধ্যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর ইতিহাস সর্ব স্বীকৃত ।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালপি এবং মানবতা প্রেমী। মানবতা বিরোধী রোম সম্রাট এর বিরোধিতার কারণে সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং ২৬৯/২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। সেই থেকেই দিনটির শুরু।
১৪ই ফেব্রুয়ারি কোন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পালন করা হয় না কিংবা এই দিনে কেউ কোন দেবদেবীর পূজাও করেন না।
কিছু শ্রেণী ভিত্তিক মানুষ নেতিবাচক আলোচনায় দিনটিকে জাতি-ধর্ম, গোত্রে এবং সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে ফেলেছেন।
সাধারণ মানুষ এত দ্বিধার দোলায় দোলেন না, কে সেন্ট আর কে রোম সম্রাট তারা জানতে চায় না। সবাই দিনটিকে ভালোবেসে আপন স্বজনকে ভালোবেসে তারা ভাল থাকতে চায়।
সারা বছর যেখানে শত দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ এবং সহিংসতা আর অবরোধ এর শিকলে বন্ধী সবাই সেখানে যদি এই দিনে মানুষ মানুষকে নিজের আপনজনকে ভালোবাসতে পারে, ভালোবাসা পায় তাহলে মন্দ কি।
ভালোবাসার এই দিনে সবার প্রতি ভালোবাসা এবং শুভকামনা।
সবাই ভালো থাকুন।