– প্রেমা রহমান।
মহামারীরূপে আবির্ভূত করোনার কারণে স্থবির পৃথিবী এবং স্থবির সঙ্গীত জগত। যার ফলে এক দেশের সাথে অন্য দেশের যাতায়াত বন্ধ। এর সাথে বন্ধ হয়ে গেছে সঙ্গীত বিষয়ক সকল কর্মকাণ্ড। শীতকালে শিল্পীদের ভেতরে উৎসবের আমেজ থাকে। সামনে শীতকাল। শীতকালে মানুষ নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকে। এসব আয়োজনের বড় একটা অংশজুড়ে থাকে গানের কনসার্ট কিন্তু গত দু’বছর ধরে করোনা ভাইরাসের কারণে শিল্পীরা প্রস্তুত থাকলেও বড় পরিসরে কনসার্ট আয়োজনের অনুমতি মেলেনি। শুধু বাংলাদেশেই নয়! সারা বিশ্বে একই অবস্থা। এই পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে কনসার্ট ইন্ডাস্ট্রিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভ্যারাইটি ম্যাগাজিন। প্রতিবেদনে জানানো হয়, বছরের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, ২০২০ সালে বক্স-অফিস রেকর্ড ১২.২ বিলিয়ন ডলার আয় করবে। সেই ধারণায় গুড়েবালি। করোনার প্রভাবে মার্চ মাসে ইন্ডাস্ট্রি
পুরোপুরি বন্ধ যাওয়ায় আয় তো দুরের কথা, ক্ষতির মুখে পড়েছে ৯.৭ বিলিয়ন ডলার। ভ্যারাইটি আরও জানায়, করোনার চলতি বছর গ্লোবাল লাইভ ইভেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি (প্রায় ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে বক্স-অফিসেই ক্ষতি ৯.৭ বিলিয়ন ডলার। লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি পাবলিকেশন ‘পোলস্টার’-এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ভ্যারাইটি। আর ২০২১ সালের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা যাচ্ছে, এর পরিমান হতে পারে দ্বিগুণ। বছরের অন্য সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছুটা অলস সময় কাটালেও শীত মৌসুমে মঞ্চ মাতানো শিল্পীরা থাকেন তুমুল ব্যস্ত। তবে গতদুবারের শীতকালটা কেমন যেন অচেনা ছিল সবার কাছে। কারণ এভাবে সবকিছু বদলে যাবে তা কারও ধারণা ছিল না। গত শীত মৌসুম শেষ হওয়ার পর থেকেই লকডাউন ছিল সারা দেশে। তখন কয়েক মাস সব ধরণের কনসার্ট বন্ধ থাকলেও এখন ইনডোরে কিছু জায়গায় কনসার্ট হওয়ার কথা শুনা যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর সংখ্যা হাতে গোনা। আউটডোরে অর্থাৎ উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্টের অনুমতি মেলেনি এখনো। তাই বার্ষিক আয়ের জন্য কনসার্টের ওপর নির্ভরশীল শিল্পীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরাও চিন্তিত। কবে নাগাদ শুরু হবে কনসার্ট -এমন প্রশ্ন তাদের নিত্য দিনের ভাবনা।
যে মৌসুমে তাদের গানে গানে মানুষকে মাতিয়ে রাখার কথা, ঠিক সেই মৌসুমটায় নাকি করোনা ভাইরাস এর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাবে। এমনিতেই কাজ নেই, সবাই কর্মহীন। এ প্রসঙ্গে মাইলসের অন্যতম সদস্য শাফিন আহমেদ বলেছেন, আমরা প্রাক্টিস শুরু করছি। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরাও ভাবছি, কীভাবে আবার কনসার্টে ফেরা যায়। তিনি মনে করেন, মার্কেট, অফিস, গার্মেন্টস সহ সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। ওপেন এয়ার কনসার্ট করার পরিবেশ না থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরোয়া কনসার্ট করা যেতে পারে। অন্যদিকে নগর বাউল ব্যান্ডের ম্যানেজার রুবাইয়াত ঠাকুর রবিন বলেন, আমরা এখনই শোতে ফেরার চিন্তা করছি না। করোনার শনাক্ত হার ৫-এর নিচে এলে আমরা শো করার পরিকল্পনা করব। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক শো এর অফার পাচ্ছি। তবে কবে নাগাদ নগর বাউল স্টেজে ফিরবে এখনই কিছু বলতে পারছি না। অন্যদিকে চিরকুট দলের অন্যতম সদস্য শারমীন সুলতানা সুমী বলেন, স্টেজ শো একজন শিল্পী বা ব্যান্ডের আসল জায়গা। শ্রোতার সঙ্গে যোগাযোগের এর চেয়ে সুন্দর মাধ্যম আর হতে পারে না। আমরা এরই মধ্যে কনসার্ট করার ডাক পাচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে স্টেজ শো শুরু করার ইচ্ছে আছে। এদিকে নতুন সংসার আর নতুন গান নিয়ে ভালো সময় পার করছেন কণ্ঠশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ। করোনার এই সময়েও নতুন নতুন গান উপহার দিয়ে আসছেন তার ভক্তদের। স্টেজে ফেরা প্রসঙ্গে হাবিব বলেন, দেশ বিদেশে সব ধরণের স্টেজ শো বন্ধ। একজন শিল্পীর জন্য স্টেজটা তার আসল জায়গা। করোনা পরিস্থিতি এখন আস্তে আস্তে ভালোর দিকে যাচ্ছে। আশা করছি,গানের মঞ্চগুলো আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
তরুণ শ্রোতাদের পছন্দের শিল্পী হৃদয় খানও প্রস্তুত হয়ে আছেন স্টেজে ফেরার জন্য। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক দিন অপেক্ষা করলাম এবার স্টেজে ফিরতে চাই। যদিও অডিও গান নিয়ে সারা বছরই ব্যস্ত থাকি আমি। তবে স্টেজে ফেরার জন্য মন আনচান করছে। আমার ভক্তরাও অপেক্ষায় আছে। সব মিলিয়ে আমি স্টেজে ব্যস্ত হতে চাই। বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতি হামিন আহমেদ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন আমরা কনসার্ট করছি না। অথচ অন্যসব ক্ষেত্র কিন্তু নিয়ম মেনেই চলছে। এই মৌসুমে ওপেন এয়ার কনসার্ট না করা গেলে নিয়ম মেনে ইনডোরে কনসার্টের আয়োজন করা উচিত।
এসব শিল্পী ছাড়া আরও অনেক শিল্পীই এখন কনসার্টে গান গাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কনসার্ট আয়োজিত হোক সব সঙ্গীতশিল্পীদের এটিই তাঁদের পরম চাওয়া। – সংগ্রহ