asd
Sunday, November 24, 2024

করোনার উপসর্গ নিয়ে গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের পরিবার শঙ্কটাপন্ন!…

– রহমান ফাহমিদা, সহকারী সম্পাদক।

জনপ্রিয় কিংবদন্তি গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর যে কিনা বিপদে-আপদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন সব সময়, তাঁর গানের মাধ্যমে। আর আজ কিনা সে এবং তাঁর পরিবার অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছেন! মহামারী ভাইরাস কোভিড-১৯ এর কারণে।
এই জনপ্রিয় শিল্পী ফকির আলমগীরের ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব প্রতি নিয়ত তাঁর বাবার আপডেট জানিয়ে যাচ্ছেন। আজকে (২৩ জুলাই, ২০২১) বিকেল পাঁচটায় তিনি ম্যাসেজ করে জানিয়েছেন তাঁর বাবার সর্বশেষ অবস্থা এভাবে- বাবার ডি-ডাইমার কমেছে। রক্তে ও ফুসফুসে ইনফেকশন পাওয়া গিয়েছে। ব্লাড প্রেসার খুবই লো হয়ে গিয়েছে। রক্তে ইনফেকশন এর জন্য প্রায় প্রতিদিনই জ্বর আসছে। আজ থেকে নতুন এন্টি-বায়োটিক দেয়া শুরু হচ্ছে তবে এই এন্টি-বায়োটিক কাজ না করলে খুবই বিপদ হয়ে যাবে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, আমার নিজেরও করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে এবং আমার পাঁচ মাসের কন্যা সন্তান রয়েছে সেই সাথে। আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন সবাই।
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিউতে ছিলেন এরপর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে চিকিৎসকগণ তাঁক ১৮ জুলাই ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নিয়েছেন। জানা যায়, দুইতিন দিন জ্বর ও কাশি ছিল তারপর তিনি ১৪ জুলাই কোভিড-১৯ এর টেস্ট করালে, করোনা ভাইরাসের পজিটিভ ফল আসে। এরপর তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

সঙ্গীতজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং গণসংগীতের জনপ্রিয় কিংবদন্তি শিল্পী ফকির আলমগীর। ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে বাংলা গান করছেন। বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তাঁর গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মরহুম মৌঃহাচেন উদ্দিন ফকির, মা-বেগম হাবিবুন্নেসা। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ সনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এম.এ পাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণ শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ‘৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও ‘৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী গণ আন্দোলনে তিনি সামিল হয়েছিলেন তাঁর গান দিয়ে। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি প্রচলিত ও প্রথাসিদ্ধ গানের বন্ধ্যা ভূমিতে দেশজ ও পাশ্চাত্য সংগীতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা গানে নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। সংগীত ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য তাঁকে করে তোলে আরো প্রতিশ্রুতিশীল, গণমুখী ও জনপ্রিয়। ১৯৭৬ সনে গঠন করেন ‘ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী’। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে গণ সঙ্গীতকে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। অন্যদিকে একজন সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সফলতার সঙ্গে তুলে ধরেন।

সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর একজন সফল কলামিস্ট ও লেখক। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থঃ- চেনাচীন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান, গণ সঙ্গীতের অতীত ও বর্তমান, গণ সঙ্গীত ও মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুরা, ও আমার কথা-সুধীমহলে সমাদৃত হয়েছে। রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশনায় তিনি এখনও সক্রিয়। চির সবুজ এই কণ্ঠশিল্পী সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য- একুশে পদক, শেরে বাংলা পদক, ভাসানী পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অর্নার, তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক, জসীম উদ্দিন স্বর্ণপদক, গণনাট্য পুরস্কার, ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার, বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি পুরস্কার, ক্রান্তি পদক, বাংলা একাডেমির সম্মানজনক ফেলোসিফ, সম্প্রতি চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা এবং দেশের বাইরে অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সরকার তাঁকে সঙ্গীতে মহাসম্মানে ভূষিত করেছেন। ফকির আলমগীর ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযোগ সমিতির সদস্য, বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা, আধুনিক সদস্য, খিলগাঁও সামাজিক সংস্থার উপদেষ্টা, বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিষদের উপদেষ্টা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিষদের সদস্য এবং অফিসার্স ক্লাবের সদস্য।
সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে সঙ্গীত জগতের সকল মানুষ এবং এই জনপ্রিয় শিল্পীর ভক্ত শ্রোতাসহ দেশের প্রতিটি মানুষকে আহবান করা হচ্ছে তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য দোয়া করার জন্য এবং তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles