– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।
পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যে তাঁর অমায়িক ব্যবহার ও কর্মের দ্বারা সবার প্রিয় হয়ে উঠেন। তেমনই একজন মানুষ ফুয়াদ নাসের বাবু। বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। যে কিনা একাধারে সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, কিবোর্ডিষ্ট এবং ব্যান্ড লিডার(ফিডব্যাক)। ফুয়াদ নাসের বাবু ৩১মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কম্পোজ করা প্রথম গান ‘আবার এসেছে সেই মুক্তির লগ্ন’ এই গানটি রচনা করেছিলেন আহমেদ বশির, এই গানটি ছিল একটি গনসংগীত। ‘উদাসী এই মনে’ তাঁর প্রথম রেকর্ড করা গান। ‘মেলায় যাইরে’ ছিল তাঁর অসাধারণ একটি কম্পোজ করা গান। এই গানের কথা লিখেছেন মাকসুদুল হক। এই গানটি ‘ফিডব্যাক’ এর জনপ্রিয় গানের মধ্যে একটি। দেশের অন্যতম সংগীত পরিচালক ও ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফুয়াদ নাসের বাবু ব্যান্ড পরিচালনার পাশাপাশি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে টানা পাঁচ দশক কাজ করে চলেছেন। তিনি ব্যান্ডের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন চিত্রের সংগীত, নাটকের আবহ সংগীত, অডিও ও চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন এবং বেইজ গিটারিস্ট হিসাবে তিনি গত চারদশক ধরে উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার সাথে পারফর্ম করছেন। ফোয়াদ নাসের বাবু ৩১মে জন্মগ্রহণ করেন। আজকে তাঁর জন্মদিন। তাই তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে জনপ্রিয় সুরকার শেখ সাদী খান, জনপ্রিয় গিটারিস্ট লাবু রহমান এবং ফুয়াদ নাসের বাবু’র কাছ থেকে ছোট্ট করে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল-
ভাইয়া, প্রথমেই সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আপনার জন্মদিন নিয়ে কি কোন চিন্তাভাবনা আছে যে, এই উপলক্ষে কিছু করবেন-
ফুয়াদ নাসের বাবু – না, জন্মদিন নিয়ে আমার কোন চিন্তাভাবনা নাই। ৩১মে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এটাই একটি বৈশিষ্ট। আমার কাছে ৩১মে যা, ১লা জুনও তাই। জন্মদিবস বলে আমি মনে করি কিছু না। শুধু আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এটাই।
ভাইয়া, আপনার আর সঙ্গীতাঙ্গন-এর জন্মদিবস একই দিনে। তাই আপনি কি সঙ্গীতাঙ্গন-কে নিয়ে কিছু বলতে চান ?
হ্যাঁ, আমার পক্ষ থেকে সঙ্গীতাঙ্গন-এর জন্য রইল শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ আরও সুন্দরভাবে আমাদের সঙ্গীতকে উপস্থাপনা করুক এটা আমার কাম্য থাকবে এবং নির্ভুল সংবাদ তুলে ধরুক সঙ্গীত সম্বন্ধে, অবশ্যই কোন রকম গসিপ ছাড়া। অনেক অনেক শুভকামনা রইল সঙ্গীতাঙ্গন-এর পরিবারের সকলের প্রতি এবং এগিয়ে যাক সঙ্গীতাঙ্গন।
ফুয়াদ নাসের বাবু ভাইয়ের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে জনপ্রিয় সুরকার শ্রদ্ধেয় শেখ সাদী খান বলেন – বাবু এমনেতেই খুব ভাল মানুষ এবং আমাদের মিউজিসিয়ানদের সাথে আছে। সে ‘ফিডব্যাক’ ব্যান্ডের সাথে আছে। যেহেতু সে অনেকদিন ধরে এই সংগীত জগতে আছে তাই সে অনেকের সাথেই কাজ করছে। আমাদের পরের জেনারেশনের মধ্যে যারা আছে বা যে কয়জন আছে, বাবু তার মধ্যে অত্যন্ত ভাল ছেলে। যদিও আমার সঙ্গে কাজ করে নি সে কখনও তবে আমাদেরকে প্রচন্ডভাবে মানে, আমাদেরকে সম্মান করে। যেহেতু সে আলাউদ্দিন আলীর সঙ্গে কাজ করেছে। ফিল্মেও সে বাজিয়েছে। সে ইন্ডিভিজুয়ালি সুরকার হিসেবে কাজ করছে। রেডিও টেলিভিশনে কাজ করছে। আমরা চাই যে আমাদের পরের জেনারেশন যারা আসছে তারা আমাদের সংগীতকে সমৃদ্ধ করবে। এই আশাটাই তাদের প্রতি রাখি আমরা। তবে এভাবে কেউ তেমন আসছে না। আমাদের আগে যারা সংগীত জগতে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা গান দিয়ে সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরাও আমাদের জেনারেশন সংগীতকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি এবং আমরা তা করেছিও। আমরা এবং আমাদের পরের যে জেনারেশন আসছে তার মধ্যে যে দুই চার জন আছে যেমন ফরিদ আহমেদ ছেলেটা ছিল। সে মূলধারার কাজ করত। আমি চাই বাবু’রাও আমাদের মূলধারার সংগীত নিয়ে কাজ করবে এবং আমাদের বাংলা গানকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যাতে করে বাংলা গান নষ্ট না হয় সেদিকে দৃষ্টিপাত করবে। এটাই আমি তাঁর জন্মদিনে দোয়া রাখি এবং শুভেচ্ছা জানাই।
জনপ্রিয় শেখ সাদী খান আজকে সঙ্গীতাঙ্গন-এর জন্মদিনেও শুভেচ্ছা জানান বাবু ভাইয়ের জন্মদিনের শুভেচ্ছার সাথে। তিনি বলেন, সঙ্গীতাঙ্গন-এর জন্য কি বলবো! আহসান কিভাবে যে চালিয়ে যাচ্ছে এই পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে, তা আমি বুঝতে পারছি না। কারণ আমার জানামতে সঙ্গীতাঙ্গন নিয়ে সে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু সঙ্গীতাঙ্গন সঙ্গীতকে এবং সঙ্গীত জগতের মানুষকে ভালোবাসে তাই আহসান তাঁর সঙ্গীতাঙ্গন পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমি খুবই মর্মাহত এই কারণে যে, আহসান এত কষ্ট করে পত্রিকাটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিন্ত পত্রিকাটি চালিয়ে নেয়ার জন্য তেমন কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না। এভাবে কতদিন একটি পত্রিকা টিকে থাকতে পারে, তা জানা নাই। তারপরেও আহসান পত্রিকাটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাই তাঁকে আমি অবশ্যই সংস্কৃত অঙ্গনের শিল্পীদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই এবং সঙ্গীতাঙ্গন-এর পরিবারের প্রতি আমার যে ভালোবাসা তা সবসময়ই অক্ষুন্ন থাকবে। শুভ জন্মদিন ও শুভকামনা রইল।
এরপর আমরা এবার জেনে নেই, ফুয়াদ নাসের বাবু ভাইয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ বন্ধু লাবু রহমান ভাই, বাবু ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কি বলেছেন – উনার কথা কি বলব! উনি খুব ভালো মানুষ। উনি কাজের প্রতি অত্যন্ত সিরিয়াস। ফিডব্যাকে-এর মোস্ট অফ দা গান কিন্ত উনারই কম্পোজ করা এবং উনিই ফিডব্যাকের কম্পোজার। আমরা একটা কম্পোজ করি সেটা ডিফারেন্ট তবে মেইন গানগুলো উনিই করে এবং মাকসুদ করেছে। হি ইজ এ ভেরি ট্যালেন্টেড মিউজিসিয়ান। সে আলাউদ্দিন আলীর সাথে এ্যাসিস্টেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন। সে গান সম্পর্কে আমাদের দেশীয় গান এবং ওয়েস্টার্ন গান সম্পর্কে অনেক জানে। আমার মনে হয় না বাংলাদেশের কোন মিউজিসিয়ান এতটা জানে। তাঁকে জিঙ্গেলের কিং বলা হত এবং তাঁকে এখনও তাইই বলা হয়। বাংলাদেশের নামকরা সব জিঙ্গেল তাঁর করা। হি ইজ এ ভেরি গুড ফ্রেন্ড। হি ইজ এ ওন্ডারফুল পারসন। উনার সম্পর্কে কোন কমপ্লেইন এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারবে না। উনি কবে রেগে গিয়েছিল এটা আমরা সবাই জানি! জীবনে সে একবার কি দুইবার রেগে গিয়েছিল এবং তা যথার্থ কারণেই রেগে গিয়েছিল। একজন মানুষ যদি জীবনে একবার দুইবার রাগ করে সেটা তখনই কাউন্ট হয় যখন সে একেবারেই রাগে না। উনি খুব অমায়িক লোক সাধারণত সে কারো ওপরই রাগে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা! ওনার শ্রদ্ধেয় জন যারা বা সিনিয়র যারা তাঁদেরকে
সে যথেষ্ট সম্মান দেয় এবং সালাম করে সম্মান দেখায়। এটা এখনকার জুনিয়ররা করে না। তাই তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে যে, সিনিয়রদের সম্মান দিলে নিজে ছোট হয় না। হি ইজ এ লেজেন্ড। তাই তাঁকে যথার্থই লেজেন্ড বলা হয়। তাঁর অবদান অনেক এই সংগীত জগতে। আই স্যালুট! বাবু ভাই। আমি তাঁর সাথে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কাজ করছি। আমি গর্বিত এজন্য যে, তাঁর মত ব্যক্তির সাথে আমি আছি। উনি যে আমাকে এতদিন ধরে সহ্য করে একসাথে আছেন, সেজন্য তাঁকে অনেক ধন্যবাদ।
তাঁর এই শুভ জন্মদিনে আমি বলতে চাই যে, সে যেন আরেকজন বাবু রেখে যেতে পারে। আরেকজন ফুয়াদ নাসের আমাদের দিয়ে যেতে পারে। যাতে নাকি পরবর্তী প্রজন্ম তার কাছ থেকে কিছু শিখতে পারে। সে এরকমই আরেকটি ফোয়াদ নাসের রেখে যাক অন্তত। আই উইশ হিম ফর দ্যাট। সে যেন অনেক বছর বাঁচে এবং সে নিজের কার্যের জন্য কিছু মানুষ রেখে যাক, যারা তাঁর কাজগুলো ব্যাবহার করে তাঁর কাজের মূল্যায়ন করবে এবং হাজার বছর ধরে তাঁর কাজগুলো মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে।