মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
আসামের বিখ্যাত গাযক জুবিন গার্গ। যাকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজপুত্র বলা হয়। ভারতের গায়ক গায়িকার মধ্যে সেরা তালিকায় ২১ নম্বরে আছেন জুবিন গার্গ। জুবিন গার্গকে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের রকস্টার হিসেবে মান্য করা হয়। কারন ভারতীয় আসামের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী তিনি।
ভূপেন হাজারিকার পর ভারতীয় ও আসাম উত্তর-পূর্বের গর্বিত জুবিনকে আসামের রাজ্যপাল তার নামের আগে ‘লুইতকণ্ঠ’ সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করেছে, এখন তার নামের আগে ‘লুইতকণ্ঠ’ জুবিন গার্গ বলা হয়। জুবিন গার্গ বহুবিধ প্রতিভার অধিকারী। একাধারে তিনি একজন কন্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার ও অভিনেতা। জুবিন আসামীয়া, বাংলা, হিন্দি, নেপালী, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালায়লম, মারাঠি, ওড়িয়া ও ইংরেজী ভাষায় গান গেয়েছেন। ১৯৯২ সনে জুবিনের প্রথম আসামীয়া এ্যালবাম ‘অনামিকা’ মুক্তি পেয়েছিল। জুবিন ঢোল, ড্রাম, দোতারা, মেন্ডোলিন ও ইলেকট্রনিক কি-বোর্ড বাজাতে পারেন। একথা সব সব জ্ঞ্যানে জ্ঞানী তিনি । তিনি ‘শুধু তুমি’ বাংলা চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতকারের পুরস্কার লাভ করেছিলেন। হিন্দি ‘ইয়া আলি’ গানের জন্য জুবিন গার্গ গ্লোবাল ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও স্টারডার্ড পুরস্কার লাভ করেছিলেন। জুবিন গার্গ ২০১৭তে ‘মিশ্বন চাইনা’ নামের একটি আসামীয়া চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়েছেন। এরপর ২০১৯ সালে জুবিন গর্গ এর পরিচালিত ও অভিনীত “কাঞ্চনজঙ্ঘা” নামের একটি আসামীয়া চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়েছেন এবং এই চলচ্চিত্র আসাম ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সাথেও বিদেশেও মুক্তি দিয়েছেন জুবিন।
১৯৭২ সনের ১৮ নভেম্বরে মেঘালয় রাজ্যের তুরা শহরে জুবিন গর্গের জন্ম হয়েছিল। তাহার পিতার নাম মোহিনী. এম.বরঠাকুর এবং মাতার নাম স্বর্গীয়া ইলি বরঠাকুর। প্রথম জীবনে জুবিনের নাম ছিল জুবিন বরঠাকুর। প্রসিদ্ধ গীতিকার জুবিন মেহেতার নামকরনে জুবিনের নাম রাখা হয়েছে ও গোত্রের নাম থেকে উপাধি নেওয়া হয়েছে। জুবিনের পরিবার শিবসাগরের জাঁজীর স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। উনার পিতা কর্মসূত্রে মেজিস্ট্রেট ছিলেন। পেশাগত কারনে জুবিনের পিতা বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন। তাই ছোটবেলা থেকেই জুবিন এসব স্থান সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। জুবিনের পিতা ‘কপিল ঠাকুর’ ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। জুবিনের মা ইলি বরঠাকুর একজন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী ও সুগায়িকা ছিলেন। তিনি নিজের প্রতিভাকে পেশাগতভাবে ব্যবহার করতেন না। তিনি বালক জুবিনের গৃহশিক্ষার ব্যাবস্থা করেছিলেন। জুবিন প্রথম গুরু হিসাবে নিজের মাকে স্মরণ করেন। জুবিনের বোনের নাম জংকি বরঠাকুর। জংকি বরঠাকুর একজন গায়িকা ও অভিনেত্রী ছিলেন। ২০০২ সনে তেজপুর টাউনে একটি শোকাবহ মোটর দুর্ঘটনায় জংকির মৃত্যু হয়। জংকি বরঠাকুরের স্মৃতির জন্য জুবিন গর্গ ‘শিশু’ নামক একটি গানের এ্যালবাম রচনা করেন। ২০০২ সালের ৪ ফেব্রয়ারী জুবিন গার্গ ফ্যাশন ডিজাইনার ‘গরিমা শইকীয়া’ র সাথে বিবাহপাশে আবদ্ধ হোন।
জুবিন প্রথম গুরু হিসাবে নিজের মাকে স্মরণ করেন। গুরু রবীন ব্যানার্জী থেকে জুবিন ছেলেবেলায় তবলা ও গানের শিক্ষা পেয়েছিলেন। অসমীয়া লোক সংস্কৃতির শিক্ষা রমনী রায় থেকে পেয়েছিলেন। জুবিনের পরিবার স্থায়ীভাবে গুয়াহাটি স্থানান্তর হওয়ার জন্য তিনি জগ্গনাথ বরুয়া কলেজ ছেড়ে গুয়াহাটির বি. বরুয়া কলেজে বিজ্ঞানে স্নাতক বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু সঙ্গীতের সঙ্গে সম্পূর্নভাবে জড়িত থাকার জন্য জুবিন শেষ পর্যন্ত কলেজ শিক্ষা সমাপ্ত করিতে পারেন নাই।
১৯৯২ সনে অনুষ্ঠিত যুব মহোৎসব পাশ্চাত্য একক পরিবেশনে স্বর্ণপদক লাভ করার পর জুবিনের জীবনের মোড় পাল্টে যায়। এইসময়ে প্রথমবার কণ্ঠশিল্পী রুপে জুবিন সফলতা অর্জন করেন। ১৯৯২ সনে আসামীয়া এ্যালবাম ‘অনামিকা’ মুক্তি হওয়ার পর জুবিন পেশাধারী সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। এই এ্যালবাম অল্পসময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। জুবিন নিজের নামে চল্লিশের অধিক এ্যালবাম ও অসংখ্য আসামীয়া চলচ্চিত্রে কন্ঠদান করেছেন। তাছাড়া অনেক বাংলা, হিন্দী, তামিল, তেলুগু, মারাঠী ও নেপালী সহ ৪০টি ভাষায় সর্বমোট ২০,০০০ থেকেও বেশি গান গেয়েছেন। ফিজা, কাটে, গ্যাংস্টার, প্যায়ার কে সাইড এফেক্ট ইত্যাদি হিন্দী চলচ্চিত্রের গানে জুবিনের সুকন্ঠের আভাস পাওয়া যায়। ২০০০ সনে জুবিন আসামীয়া চলচ্চিত্র ‘তুমি মোর, মাথো মোর’ কাহিনী লিখেছিলেন এবং স্বয়ং নিজে পরিচালনা ও অভিনয় করেছিলেন। তিনি ২০০৫ সনে রাষ্ট্রিয় পুরস্কার প্রাপ্ত আসামীয়া চলচ্চিত্র ‘দীনবন্ধুতে’ সহ-পরিচালনা, অভিনয় ও কন্ঠদান করেছিলেন। জুবিন সঞ্জয় ঝা এর দ্বারা পরিচালিত হিন্দী চলচ্চিত্র ‘স্ট্রিং’ এর পরিচালনা করেছিলেন। জুবিন কন্ঠদান করা নতুন ছবিগুলোর নাম হল : গ্যাংস্টার, কৃষ-থ্রি, গুড বয় ব্যাড বয়, পেয়ারকা সাইড এফেক্ট, জিমিকে লাভ স্টোরি, হাই আই সি ইউ ব্রাদার, ভিক্টোরিয়া ন 203, বোম্বাই টু ব্যাংকক ইত্যাদি। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে আজ তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই এবং বাকি দিনগুলোতে যতদিন বেঁচে থাকবেন তার কাছ থেকে এমন ভালো ভালো গান আশা করছি। সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন বাংলা গানের সাথে থাকুন সংগীতাঙ্গন এর সাথে থাকুন।