– মরিয়ম ইয়াসমিন মৌমিতা।
স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয় বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে। সকাল সাড়ে
১০টায় এই শিল্পীর মরদেহ আসার আগে থেকেই সেখানে এসে জড়ো হন ভক্ত আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শেষবারের মতো প্রিয় শিল্পী ও সহকর্মীকে দেখতে আসেন সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই। অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের আবেগ লুকাতে পারলেও আড়ালে গিয়ে ঠিকই চোখের পানি মুছেছেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আড়ালে নয়, আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ দেখে সবার সামনেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। কফিনের ভেতর থাকা নীরব, নিথর আইয়ুব বাচ্চুকে দেখে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতিমন্ত্রীর এভাবে কান্নায় আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহের পাশে থাকা পরিবারের সদস্য আর শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও ছুঁয়ে যায়।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে থাকা শিল্পীদের অনেকেই বলেছেন, আসাদুজ্জামান নূর ভাইকে অনেক বছর ধরেই চিনি। এ ধরনের আয়োজনে তাঁর সঙ্গে অনেকবার দেখা হয়েছে। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের মরদেহ দেখার পর নূর
ভাই যেভাবে কান্নাকাটি করলেন, এমন দৃশ্য কখনোই দেখিনি। নূর ভাই কিছুক্ষণ কফিন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হয়তো আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের অকালপ্রয়াণ আমাদের মতো তিনিও মেনে নিতে পারছেন না।
গত বৃহস্পতিবার সকালে আইয়ুব বাচ্চু মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মারা যান। জানা গেছে, সকালে শরীর খারাপ হলে আইয়ুব বাচ্চুর ব্যক্তিগত গাড়িচালক তাঁকে নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন। গাড়িতে তোলার সময়ই
তাঁর মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিল। সোয়া নয়টার দিকে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বাংলা ব্যান্ডসঙ্গীতের ইতিহাসের এই কিংবদন্তি শিল্পী ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর পর আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। তাঁর মেয়ে সাফরা অস্ট্রেলিয়া থেকে ও ছেলে তাজোয়ার কানাডা থেকে ফেরার পর বাবাকে নিয়ে চট্টগ্রাম গেলেন। এর আগে পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ গতকাল শুক্রবার সকালে নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারে মানুষেরা আগমন বাড়তে থাকে। ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যায় আইয়ুব বাচ্চুর কফিন। শহীদ মিনারে দুই ঘণ্টা সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে আইয়ুব বাচ্চুকে বহনকারী লাশবাহী গাড়ি ছুটে চলে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে যাওয়া হয় মগবাজার কাজী অফিসের গলির এবি কিচেন স্টুডিওতে। এই গলির স্টুডিওতে গান তৈরির কাজ যেমন করে গেছেন, পাশেই পরিবার নিয়ে বহু বছর থেকেছেনও। কিছুদিন হয় ধানমন্ডিতে পরিবার নিয়ে থাকছিলেন গিটার জাদুকর। তবে স্টুডিও এখনো সেই কাজী অফিসের গলিতেই। কাজ ও আবাসস্থল হওয়ার সুবাদে এই এলাকায় বহু প্রতিবেশী রয়েছে তাঁর। এবি কিচেনে আনার পর সবার অনুরোধে মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই কার্যালয়ে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে রেখে দেওয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে। রাত দুইটার মধ্যে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে দুই সন্তান ঢাকায় ফিরে আসেন। আজ শনিবার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে (ফ্লাইট নং-১০৩) মরদেহটি চট্টগ্রামে পৌঁছে।
বিমানবন্দর থেকে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নানার বাড়ি পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৩টায় নগরের দামপাড়া জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আছর মরদেহ দাফন করা হয় নগরের বাইশ মহল্লার চৈতন্যগলি কবরস্থানে মায়ের পাশে। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।