asd
Thursday, November 21, 2024

পল্লীসম্রাট শ্রদ্ধেয় আব্বাসউদ্দীনের শুভ জন্মদিন…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

সেই গান সেই নাম যেন যুগে যুগে আরো প্রিয় আরো প্রাণবন্ত। বাংলাদেশ সঙ্গীতের মানচিত্রে আব্বাসউদ্দীন আহমদ এক অবিস্মরণীয় নাম।
তিনি শুধুমাত্র একজন গায়ক নয় একজন সঙ্গীত যোদ্ধা। গানের জন্য, সুরের জন্য যুদ্ধ করেছেন। প্রতিষ্ঠা করে গেছেন আমাদের প্রাণের বাংলা সঙ্গীত। আজ উনার শুভ জন্মদিন। বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমদ ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আব্বাস উদ্দীন আহমদের পিতা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতের উকিল। বলরামপুর স্কুলে আব্বাসউদ্দীনের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯১৯ সালে তুফানগঞ্জ স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা এবং ১৯২১ সালে কুচবিহার কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এবং সেখান থেকে বিএ পরীক্ষায় অণুত্তীর্ণ হয়ে তিনি সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন।

একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আব্বাস উদ্দীনের পরিচিতি দেশজোড়া। আধুনিক গান, স্বদেশী গান, ইসলামি গান, পল্লীগীতি, উর্দুগান সবই তিনি গেয়েছেন। তবে পল্লীগীতিতে তার মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। গানের জগতে তার ছিল না কোনো ওস্তাদের তালিম। আপন প্রতিভাবলে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরেন। তিনি প্রথমে ছিলেন পল্লীগায়ের একজন গায়ক। যাত্রা থিয়েটার ও স্কুল-কলেজের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে তিনি গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য তিনি ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর নিকট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখেছিলেন। রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, ক্ষীরোল চটকা গেয়ে আব্বাসউদ্দীন প্রথমে সুনাম অর্জন করেন। তারপর জারি, সারি, ভাটিয়ালি , মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গান ইত্যাদি গান গেয়ে জনপ্রিয় হন। তিনি তার দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লী গানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা আজও অদ্বিতীয়। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্ দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামি ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। আব্বাস উদ্দিন ছিলেন প্রথম মুসলমান গায়ক যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচ এম ভি থেকে গানের রেকর্ড বের করতেন। রেকর্ডগুলো ছিল বাণিজ্যিকভাবে ভীষণ সফল। তাই অন্যান্য হিন্দু ধর্মের গায়করা মুসলমান ছদ্মনাম ধারণ করে গান করতে থাকে। আব্বাস উদ্দীন ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন। প্রথমে তিনি রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ডিপিআই অফিসে অস্থায়ী পদে এবং পরে কৃষি দপ্তরে স্থায়ী পদে কেরানির চাকরি করেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীত্বের সময় তিনি রেকর্ডিং এক্সপার্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। চল্লিশের দশকে আব্বাস উদ্দিনের গান পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে মুসলিম জনতার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশ বিভাগের পর (১৯৪৭ সালে) ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি করেন। পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ সালে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সঙ্গীত সম্মেলন, ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন।

আব্বাস উদ্দিন সম্পর্কে ফরহাদ মজহার বলেন আব্বাস উদ্দিন কেবল গায়ক ছিলেন না, এই প্রজন্মের গায়করা যদি ভাবেন আব্বাস উদ্দিন শুধু গান গেয়ে এদেশের মানুষের মন জয় করেছেন তাহলে তা মস্ত বড় ভুল হবে। আব্বাস তাঁর সময়কালের আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামকে ধারণ করেছিলেন, সঙ্গে ছিলেন কাজী নজরুল এবং আরো অনেকে। তাঁর সন্তান ফেরদৌসী রহমান এবং মুস্তাফা জামান আব্বাসীও গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন।
তিনি বাংলার সঙ্গীতের শিকড় কখনোই ওনার গানের কথা কেউ ভুলতে পারবে না।
আজ তাঁর জন্মদিনে সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles